ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি তেলের দাম শীঘ্রই কমছে না

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জ্বালানি তেলের দাম শীঘ্রই কমছে না

সংসদ রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বহুলাংশে হ্রাস পেলেও শীঘ্রই দেশে যে জ্বালানি তেলের দাম কমছে না জাতীয় সংসদে তেমনি ইঙ্গিত দিলেন বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। দেশের বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলেও সরকার কিন্তু লাভবান হচ্ছে না। প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার দেনা পরিশোধ করছে মাত্র। গত বছর জ্বালানি তেল বাবদ ১০ হাজার কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত পেয়েছি। সেখান থেকে সাত হাজার কোটি টাকা চারটি ব্যাংকের দেনাসহ ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়েছে। এরপরও এখন দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার দেনা রয়েছে। আর নতুন আবিষ্কৃত গ্যাস পাইপ লাইনে যদি না আনা যায়, তাহলে আমাদের এই মজুদকৃত গ্যাস আগামী ১২ বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ সংক্রান্ত বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়েই তিনি এসব কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যখন তেলের দাম অতিরিক্ত ছিল তখন কিন্তু সরকার একসময় ভর্তুকি দিয়েই সবাইকে তেল সাপ্লাই দিয়েছে। এখন যেহেতু তেলের দাম কমে গেছে, আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তবুও দেনা শোধ হচ্ছে না। আর অর্থ মন্ত্রণালয় কিন্তু জ্বালানি তেলের বিষয়টি ভর্তুকি হিসেবে ধরে না, আমাদের লোন দিয়ে তারা সুদসহ টাকা নিয়ে নিচ্ছে। এতে কিন্তু সরকার লাভবান হচ্ছে না, শুধু ভর্তুকি পরিশোধ করছে। দেশের তেল ও গ্যাসের সর্বশেষ অবস্থা জাতীয় সংসদে তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, জ্বালানি তেল আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করি। আর দেশে যে গ্যাস উৎপন্ন হয়, এই গ্যাস ফিল্ড থেকে কনডেনসার নামে একটি প্রোডাক্ট চলে আসে। সেটাকে আমরা রিফাইন করে পেট্রোল পাই। পাশাপাশি পেট্রোলের সঙ্গে কিছু কোরোসিন ও ডিজেল পাই। এই কনডেনসারকে যদি আমরা আরও কিছু রিফাইন করি তাহলে অকটেন পাই। অর্থাৎ কিছু অকটেন আমরা দেশে উৎপাদন করলেও বাকিটা আমদানি করি। আর পেট্রোল আমরা একদমই আমদানি করি না। তিনি বলেন, পেট্রোলের ব্যবহার বাংলাদেশে কমে গেছে। কারণ অধিকাংশ গাড়ি এখন সিএনজিতে চলে। পেট্রোল আর কেউ ব্যবহার করতে চায় না। দেশে আমরা ২ লাখ ৮০ হাজার টন পেট্রোল উৎপন্ন করতে পারি, কিন্তু সেখানে এখন এক লাখ ২০ হাজার টন উৎপন্ন করছি। তিনি বলেন, যদি আমরা সিএনজি গ্যাসটা শিল্পতে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে শিল্পতে আমাদের চাকরির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। বৈদেশিক টার্নও বাড়বে। তবে বেশকিছু দিন যাবত গ্যাসের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখন আপাতত সেই সমস্যা নেই। বাসা-বাড়িতে এখন গ্যাস নিয়মিত হয়ে গেছে। কিন্তু যেভাবে আমাদের গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে, এইভাবে গ্যাস ব্যবহার হলে তা মাত্র ১২ বছর চলবে। যদি নতুন আবিষ্কৃত গ্যাস পাইপ লাইনে না আসে তাহলে আমাদের এই মজুদকৃত গ্যাস উল্লেখিত বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, আমরা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি পাইপ লাইন যদি করতে পারি, তাহলে বছরে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমরা সাশ্রয়ী করতে পারব। হরতালে ট্রাক, যানবাহন ও নৌযান বন্ধ থাকে। কিন্তু পাইপ লাইন থাকলে তখনও কোন সমস্যা থাকবে না। আর তেলের যে ভেজাল করা হয় তখন আমরা তেলকে তা থেকে রক্ষা করতে পারব। তিনি জানান, গভীর সমুদ্র বন্দরে দুইটি পাইপ লাইন করার চুক্তি করেছি। সেগুলো একনেক সভায় পাস হয়ে গেছে। এতে আমাদের সরকার বছরে এক শ’ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারবে।
×