ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এসএ গেমস- লক্ষ্য এবার ফাইনাল

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এসএ গেমস- লক্ষ্য এবার ফাইনাল

রুমেল খান ॥ ‘নারী কি নদীর মতো/নারী কি পুতুল/নারী কি নীড়ের নাম/টবে ভুল ফুল/নারী কি বৃক্ষ কোন/না কোমল শিলা/নারী কি চৈত্রের চিতা/নিমীলিত নীলা?’ নারী এখন আর অবলা ও অবহেলিত নয়। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে ছিল সর্বক্ষেত্রেই। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তারা এখন এগিয়ে আসছে, করছে উন্নতি। শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সবকিছুতেই তাদের অবদান লক্ষ্যণীয়। এমনকি পিছিয়ে নেই খেলাধুলাতেও। ফুটবলের কথাই ধরা যাক। মেয়েরা এখন ফুটবল খেলে ভাল আয় করছে, করছে বিদেশ সফর। যেটা মাত্র কয়েক বছর আগেও কল্পনাই করা যেত না। সবচেয়ে বড় কথাÑ আগের চেয়ে তাদের খেলার মান এখন অনেক উন্নত। গত ২০১০ আসরে এসএ গেমসে মহিলা ফুটবলে তাম্রপদক পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার তাদের লক্ষ্য তারচেয়ে ভাল করা। এসএ গেমসে খেলতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ত্যাগ করার কথা জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের। এবারের এসএ গেমস উপলক্ষে গত ১১ নবেম্বর থেকে ক্যাম্প শুরু হয়েছিল। দলে ছোটখাটো ইনজুরি থাকলেও সেটা মারাত্মক কিছু নয়। জুনিয়র-সিনিয়র ফুটবলারদের মিশেলে গঠিত দলকে নিয়ে আশাবাদী দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। দলের নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড (একটি সূত্রে জানা গেছে তিনিই হতে যাচ্ছেন সম্ভাব্য অধিনায়ক) সাবিনা খাতুন জানান, ‘সিনিয়রও জুনিয়র ফুটবলারদের সমন্বয়ে টিমটা গড়া হয়েছে। মাঠে বড়দের সঙ্গে ছোটদের বোঝাপড়ার একটা বিষয় আছে। টিম কম্বিনেশনে প্রথমদিকে তাই কিছু ঘাটতি ছিল। তবে এখন আর সেই সমস্যা নেই।’ চূড়ান্ত দলে আছেন ১৮ ফুটবলার। আফগানিস্তান না থাকাতে টুর্নামেন্টের ফরমেটেও এসেছে পরিবর্তন। এবার খেলা হবে লীগ পদ্ধতিতে (মোট দল ৫টি)। সিঙ্গেল লীগ হওয়ার পর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল খেলবে ফাইনালে। ফলে সেমিফাইনাল বলে কিছু থাকছে না। বাংলাদেশকে খেলতে হবে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং নেপাল এই চার দলের সঙ্গে। ছোটন জানান, ‘এই চার দলের মধ্যে নেপালকেই আমর মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছি। ভারত অনেক শক্তিশালী।’ বাইরের কোন দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের। তবে নিজেদের দলটাকে দুই ভাগ করে অনুশীলন ম্যাচ খেলিয়েছেন ছোটন, ‘আমরা বাইরের দলের সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ খেলতে চেয়েছিলাম। খেলতে পারলে ভালই হতো। এ বিষয়ে বাফুফের সঙ্গে কথাও বলেছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত ওই রকম সুযোগ-সুবিধা না হওয়াতে বাইরের দলের সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ খেলা সম্ভব হয়নি।’ একই মন্তব্য সাবিনারও, ‘অনুশীলন ম্যাচ মানেই ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করার সুযোগ। আমরা যদি কঠিন কোন দলের সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ খেলতে পারতাম, তাহলে ভুল ত্রুটিগুলো শুধরে নিতে পারতাম।’ তবে অনুশীলন ম্যাচের নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন ছোটন। কেননা দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্যেই ছিলেন, ‘সাবিনা, মিরোনা এবং গোলরক্ষক সাবিনা অনেক ম্যাচ খেলেছে মালদ্বীপে গিয়ে। আমাদের এই দলে নয় ফুটবলার আছে অনুর্ধ ১৪ এবং ১৬ দলের। চার মাসের ব্যবধানে এই দুই দল দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছে। ফলে তারা তো খেলার মধ্যেই ছিল। তাই আমি মনে করি আগে যেটা হতো প্রতিপক্ষকে ভয় পাওয়া। এবার সেই জিনিসটা থাকবে না।’ বাংলাদেশের মতো ভারতের শিলংয়েও বেজায় ঠা-া। সেখানে ঠা-াটা আরও। আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু আগে ভাগে ভারত যেতে পারলে ভাল হতো বলে মনে করেন ছোটন। বাংলাদেশের প্রস্তুতিটাও সে রকমই ছিল। কিন্তু হঠাৎই সূচীতে পরিবর্তন এনেছে আয়োজক ভারত। পূর্বের সূচী অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল ৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সূচীতে পরিবর্তন হওয়াতে ৫ ফেব্রুয়ারিতেই প্রথম ম্যাচটা সাবিনাদের । ৪ তারিখ ঢাকা থেকে রওনা হয়ে পরের দিন সকালেই প্রথম ম্যাচটা খেলতে হবে ছোটনের শিষ্যদের। তাই আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সেই সুযোগটা পাচ্ছেন না তারা! প্রথম ম্যাচেই প্রতিপক্ষ নেপাল। তবে সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন দলের কোচ এবং সাবিনা। দল খেলার জন্য প্রস্তুত আছে বলেই জানিয়েছেন ছোটন। স্ট্রাইকার সাবিনা মালদ্বীপে দু’বার লীগ খেলেছেন। সঙ্গে ছিলেন গোলরক্ষক সাবিনা এবং মিরোনাও। তারাও রয়েছেন এসএ গেমসের দলে। লীগ খেলার অভিজ্ঞতাটা আসন্ন গেমসে কতটা কাজে লাগবে? সাবিনার উত্তর, ‘আমার চেষ্টা থাকবে নিজের সেরাটা দিয়ে একটা ভাল ফল নিয়ে আসা। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে যেভাবেই হোক নেপালকে হারানো। আমরা বলছি না চ্যাম্পিয়ন হব। তবে ফাইনাল খেলা আমাদের লক্ষ্য।’ গতবার এসএ গেমসে ছোটন ছিলেন দলের সহকারী কোচের দায়িত্বে। এবার চ্যালেঞ্জটা নিজের কাঁধে। সেটা ভালভাবেই উতরানোর লক্ষ্য ছোটনের, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গতবারের চেয়ে থেকে ভাল করা। গতবার আমরা ব্রোঞ্জ পেয়েছিলাম। আমরা এবার আরও ভাল করতে চাই।’ গুরু শিষ্যের এই চাওয়া কতটা পূরণ হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×