ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব সভাপতি পদ ছাড়লেন, বন্ধু হারাল ফুটবল

মনজুর কাদেরের পদত্যাগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

মনজুর কাদেরের পদত্যাগ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চমক সৃষ্টি আর যে কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভালবাসেন মনজুর কাদের। তার লক্ষ্য সর্বক্ষেত্রেই নাম্বার ওয়ান হওয়া। কিন্তু শঠতা, ধূর্ততা এবং ষড়যন্ত্রের নীলনকশার কাছে এবার হার মানতেই হলো এই দক্ষ ও সফল ফুটবল সংগঠককে! শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের। শনিবার তিনি এই পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছে দেন। পদত্যাগের কারণ স্বাস্থ্যগত, নাকি ভিন্ন কিছু- এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। জানা গেছে, পদত্যাগপত্রে পদত্যাগের কারণ তিনি স্বাস্থ্যগত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে আজ তার সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা রয়েছে। জনকণ্ঠকে তিনি জানান, ‘জীবন আগে, না খেলা আগে?’ একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা মনজুর কাদেরের পদত্যাগের খবরটি শুনে লন্ডন থেকে তাকে ফোন করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেছেন। বিগত কিছুদিন ধরে মনজুর কাদেরের সঙ্গে বাফুফের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এর আগে তিনি বাফুফের জেলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। কদিন পরেই এএফসি কাপের মূলপর্বে অংশ নেবে শেখ জামাল, যা বাংলাদেশী কোন ক্লাব এর আগে পারেনি। অথচ এই আসরে অংশ নিতে প্রয়োজনীয় খেলোয়াড়ই সংগ্রহ করতে পারেনি জামাল। ফলে ভাঙ্গা দল নিয়ে এমন মর্যাদাপূর্ণ আসরে খেলা সম্ভব নয়, এটা অনুমেয়ই ছিল। মনজুর কাদের। তার নামটিই যেন চমকময়। যেখানেই স্পর্শ করেন, সোনা ফলিয়ে ছাড়েন সেখানেই। একজন সফল, জনপ্রিয় ও দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিরাজ করছেন। দেশের ফুটবলে যিনি রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন, ১৯৯৩ সালে তখনকার সাদামাটা ফুটবল ক্লাব মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের দায়িত্ব নিয়ে সে ক্লাবটিকে মনজুর কাদের পরিণত করেছিলেন শীর্ষ ফুটবল ক্লাবে। এটা অনেকের কাছেই ছিল ঈর্ষণীয় ও অকল্পনীয়। ছিলেন ঢাকা আবাহনী লিমিটেডেরও ম্যানেজার। সে সময়কার ফুটবলের জোয়ারের তোড়ে একঝাঁক তারকা ফুটবলারকে নিয়ে গঠন করেছিলেন ‘ড্রিম টিম’ মুক্তিযোদ্ধা। এনে দিয়েছিলেন নজরকাড়া সাফল্য। কয়েক বছরের বিরতি দিয়ে কয়েক বছর আগে দায়িত্ব নেন আরেকটি ক্লাবের। আবারও নতুন দায়িত্ব, নতুন চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জে এবারও জয়ী হন কাদের। ধানম-ি ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে নিরন্তর সুকঠিন সাধনা করেন। ফলও পান হাতেনাতে। ‘শেখ জামাল’ নামটি যুক্ত হওয়ার আগে ধানম-ির এ ক্লাবটি আগে থেকেই ছিল একটি মাঝারি সারির ফুটবল দল। সেই মাঝারি সারির ক্লাবটি রাতারাতি বদলে গেল কাদেরের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায়। সঠিক, সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আসে সেই কাক্সিক্ষত সফলতা। ২০১০ মৌসুমে ঘরোয়া পেশাদার ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর ‘বাংলাদেশ লীগ’-এ প্রথমবার আতœপ্রকাশ করেই বাজিমাত করে শেখ জামাল ধানম-ি শিরোপা করায়ত্তের মাধ্যমে। আগের ‘মিডিওকার’ ধানম-ি ক্লাব রূপান্তরিত হয় দেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী ক্লাবে। এ সাফল্যের রূপকার বা নেপথ্য কারিগর ছিলেন মনজুর কাদের। শেখ জামালকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার মাধ্যমে দেশীয় ফুটবলের উত্তেজনায় কাদের যোগ করেন সম্পূর্ণ এক ভিন্ন মাত্রা। গত আট বছরে শেখ জামাল দেশী-বিদেশী মিলে মোট সাতটি ট্রফি জিতেছে, রানার্সআপ ট্রফি জিতেছে তিনটি। কোন সন্দেহ নেই, ঈর্ষণীয় সাফল্য। শুধু পুরুষ ফুটবলেই নয়। শেখ জামাল সাফল্য পেয়েছে মহিলা ফুটবল দিয়েও, সেটাও মনজুর কাদেরের হাত ধরে। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম পেশাদার মহিলা ফুটবল লীগেও চাম্পিয়ন হয়ে তাক লাগিয়ে দেয় ক্লাবটি; যা একটি মাইফলক, একটি ইতিহাস। আসন্ন মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হলে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিততো শেখ জামাল, সেটা যেন না পায় জামাল, সে জন্য তিনটি ক্লাবের গভীর ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে শেখ জামাল। আর এতে মদদ জোগায় বাফুফের কিছু সুযোগ সন্ধানী কর্মকর্তা।
×