ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের হঁশিয়ারি

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করলে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করলে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে কেউ কোন ধরনের বিতর্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা করলে তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে মর্মে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত জোটের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দলটি বলেছে, স্বাধীনতা-মুুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে জাতির মধ্য কোন বিভক্তির সৃষ্টি করা কিংবা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার কোন অশুভ চক্রান্ত সুফল বয়ে আনবে না। এই ধরনের অপচেষ্টা বন্ধ না করলে ভবিষ্যতে দেশবিরোধী এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপকর্মের জন্য তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। শনিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপির রাজনীতি বলতে কিছু নেই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে তারা অন্যায় ও ব্যাপক দুর্নীতি করে জনগণ কর্তৃক ধিকৃত হয়েছে। ক্ষমতার বাইরে থাকাকালেও তাদের সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকা- এবং ভুল সিদ্ধান্তে জনগণ বিরক্ত। রাজনীতি ও জনগণ থেকে তারা এখন বহুদূরে ছিটকে পড়েছে, দেউলিয়া হয়ে গেছে। এই দেউলিয়াত্ব কাটিয়ে ওঠার জন্য দেশের ভেতরে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার গভীর ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত। হানিফ বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের গণহত্যার বিষয়টি আড়াল করতেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধ এবং শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। পরবর্তীতে তাঁর দলের নেতারা একই সুরে কথা বলা শুরু করেছেন, তখন জনগণ বুঝতে পারল এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও সার্বভৌমত্বকে নিয়ে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। তবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মতো মীমাংসিত বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে জাতির মধ্যে বিভক্তি এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার কোন অশুভ চক্রান্ত কারোর জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। এ ধরনের অপচেষ্টা বন্ধ করার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। নইলে দেশবাসী কখনো এটাকে বরদাশত করবে না। মূর্খ, অর্বাচীন, রাজাকার এবং তাদের সন্তানেরা ছাড়া কেউ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য সাধারণ মানুষ ক্ষেপে গিয়ে খালেদার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতেই পারেন। কিন্তু এ মামলাকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা বলেছেন, জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করতে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে। খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ হয়রানির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বিশ্বাস করে, দেশের সব নাগরিকের জন্য আইন সমান। আইনের উর্ধে কেউ নয়। আইন অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটাই স্বাভাবিক। আর যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, স্বাধীনতাকে আঘাত করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে চায়; তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে এটা কোনভাবেই হয়রানি বলা যাবে না। আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশে বসবাস করতে হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে মেনে চলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করার কোন সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের সফলতা ও উন্নয়ন কর্মকা-ে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখবে। আর এ আশঙ্কায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের মধ্যে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এ ধরনের কাজ একমাত্র পাকিস্তানের দোসর এবং তাদের বংশধররাই করতে পারে। তিনি বলেন, উনি (খালেদা) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন না, স্বাধীনতাকে ধারণ করেন না। তখনও উনি পাকিস্তানী ছিলেন, এখন ২০১৬ সালেও, খালেদা জিয়া পাকিস্তানী। এ কারণে পাকিস্তানের ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করার কাজে উনি লিপ্ত। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার বিশ্বাস ঘাতক। খালেদা জিয়া এখন সাধারণ মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্র এবং সন্ত্রাস ও দুর্নীতির রানী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। খালেদা জিয়ার রাজনীতির ক্যারিয়ার ধ্বংস করার আর কিছু আছে বলে আমরা মনে করি না। তিনি বলেন, তারেক রহমান দুর্নীতির কারণে ১১/১-এর পর রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের রাজনৈতিক ইমেজ বলে কিছু আছে দেশবাসী মনে করে না। তাদের ইমেজ ধ্বংস করার মতো কিছু আছে বলে আমরা মনে করি না। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ক্যাপ্টেন (অব) এ বি তাজুল ইসলাম এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন, এ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×