ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যবিপ্রবিতে ‘উত্তরবঙ্গ সংগঠনে’ সংগঠিত শিবির

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

যবিপ্রবিতে ‘উত্তরবঙ্গ সংগঠনে’ সংগঠিত শিবির

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ রাজনীতি নিষিদ্ধ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ‘উত্তরবঙ্গ সংগঠন’ নামে সংগঠিত হচ্ছে ছাত্রশিবির। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা না হয়েও ‘শিবিরি আদর্শিক’ কারণে দেশের অন্যান্য এলাকার ছাত্ররাও এই সংগঠনের সদস্য। ‘উত্তরবঙ্গ সংগঠন’র নামে সংগঠিত হয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে ছাত্রী হোস্টেলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে শিবির ক্যাডাররা। এসব ক্যাডারকে লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত অনুসারী কয়েকজন শিক্ষক। একটি গোয়েন্দা সংস্থাও সংগঠনটির কার্যক্রমের ওপর তদন্ত করছে। জানা যায়, সংগঠনটি শুধু ছাত্রদের মধ্যে নয়, স্থানীয়দেরও সংগঠিত করতে তৎপর রয়েছে। এজন্য সংগঠনের ব্যানারে স্থানীয়দের মাঝে কম্বল ও শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। উত্তরবঙ্গ সংগঠনের সভাপতি বলছেন, নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করতে তারা নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করেন। দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীদের নিয়ে এই সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষক ও প্রায় সাড়ে চার শ’ ছাত্রছাত্রী এই সংগঠনের হয়ে কাজ করছেন। যবিপ্রবিতে পড়তে আসা উত্তরবঙ্গের কোন ছাত্র আর্থিক সমস্যায় পড়লে তার সমস্যা সমাধানে সংগঠনের তহবিল থেকে সাহায্য করা হয়। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মশিয়ার রহমান বলেন, উত্তরবঙ্গ সংগঠনের নামে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনার অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে। যদি সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্রমতে, উত্তরবঙ্গ সংগঠনটি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে জামায়াতে ইসলামের রাজনীতিকে সংগঠিত করছেÑ এমন অভিযোগ পেয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা বর্তমানে বিষয়টি তদন্ত করছে। সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যবিপ্রবির কর্তকর্তাদের কথাও হয়েছে। সংগঠনটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্তকারী সংস্থার কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উত্তরবঙ্গ ছাত্র সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন জিইবিটির এমএসের ছাত্র নাসির উদ্দিন বাদল। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন এমবিতে অধ্যয়নরত এসএম ফরহাদ। এছাড়া সহ-সভাপতি মাসুদ রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন জিহাদ, যুগ্ম-সম্পাদক ওয়াহিউজ্জামান আরিফ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব উল আলম শামীম, অর্থ সম্পাদক রাজু আহমেদ, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রাজু, প্রচার সম্পাদক গোলাম রব্বানী, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজানুর রহমান নয়ন, সহকারী অর্থ সম্পাদক আল সালেহ বিশ্বাস লিটন, দফতর সম্পাদক ছালেক খান, সহকারী প্রচার সম্পাদক মেজবাউল ইসলাম, সহকারী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফিরোজ আলম বাতু, ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক নুরুন নাহার নিতু ও সহকারী ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ফারজানা আক্তার ববি। সূত্রের দাবি, এদের মধ্যে নাসির উদ্দিন বাদল, তাওহীদ বিন সুলতান, শাকিল আহম্মেদ, তৈয়েবুর রহমান শৌখিন, সোহেল রানা, ওয়াসিম আলী, হাসিবুল হাসান, আব্দুল্লাহ আল মামুন দিপু, ফরহাদ হোসেন ও মনিরুজ্জামান ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য। আর ক্যাম্পাসে শিবিরের হুজুর নামে পরিচিত তৌহিদুল ইসলাম। তবে রাজনৈতিকভাবে প্রকাশ্যে সংগঠিত হতে না পেরে শিবিরের এসব সদস্য উত্তরবঙ্গ ছাত্র সংগঠনের নামে সংগঠিত হচ্ছেন। তবে অরাজনৈতিক সংগঠনের আড়ালে শিবিরকে সংগঠিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে সাংগঠনিক সভাপতি নাসির উদ্দিন বাদল দাবি করেছেন, ক্যাম্পাসে যেসব সংগঠন রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সংগঠন উত্তরবঙ্গ সংগঠন। তাই অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনতে পারেন। এছাড়া এ নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের বিষয়ে তিনি অবগত আছেন বলে জানান। জানা যায়, এসব ছাত্রকে সংগঠিত হতে বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৮ শিক্ষক সহযোগিতা করছেন। এদের মধ্যে সাত বিএনপিপন্থী শিক্ষক রয়েছেন। বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের বাইরে ক্যাম্পাসে শিবিরের রাজনীতি সংগঠিত করতে সহযোগিতা করছেন আরও কয়েকজন জামায়াতপন্থী শিক্ষক। এছাড়া ক্যাম্পাসে ‘উত্তরবঙ্গ সংগঠন’র কার্যক্রম পরিচালনায় অন্তত চারজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার পরোক্ষ সহযোগিতা পাচ্ছেন সংগঠটির নেতারা।
×