ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বলছে না চুলা, ঘুরছে না কারখানার চাকা

চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাসাবাড়িতে ঠিকমতো জ্বলছে না রান্নার চুলা। কারখানার চাকাও ঘুরছে না ঠিকমতো। সিএনজি পাম্পে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ন্যূনতম গ্যাস মিলছে না হাজার হাজার যানবাহনের। গ্যাস সরবরাহের অভাবে এমনই এক সঙ্কটময় পরিস্থিতি পার করছেন বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম নগরীর অর্ধকোটি মানুষ। গত এক সপ্তাহ ধরে এখানে গ্যাস সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরা। বিশেষ করে যারা গ্যাসের চুলার ওপর নির্ভরশীল, তারা পড়েছেন তীব্র সঙ্কটে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেক হওয়ায় শিল্প গ্রাহকদের গ্যাস রেশনিং করেও কুলিয়ে উঠতে পারছে না কেজিডিসিএল। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে পেট্রোবাংলার কাছে চিঠি দিয়েছে তারা। ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোন সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন লিকুইড ন্যাচেরাল গ্যাস (এলএনজি) না আসা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। ২০১৭ সালে এলএনজি আসার পরই এই সঙ্কট থেকে মুক্তি মিলবে নগরবাসীর। কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষও একই দাবি করেছেন। তারা বলছেন, চট্টগ্রামে শীতকালে গ্যাস সঙ্কট একটি নিয়মিত বিষয়। তিনটি কারণে এখানে প্রতিবছর শীতকালে গ্যাস সঙ্কট তৈরি হয়। প্রথমত, শীত মৌসুমে গ্যাসের চাপ কম থাকা। দ্বিতীয়ত, কেজিডিসিএল অধিভুক্ত এলাকাটি প্রান্তে অবস্থান করায় পেট্রোবাংলা থেকে সরবরাহকৃত গ্যাস চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাতে গ্যাসের চাপ কমে আসে। তৃতীয়ত, দীর্ঘদিন আগে স্থাপন করা পাইপলাইনে ময়লা জমে গ্যাস সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কিজিডিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আইয়ুব খান চৌধুরী বলেন, শীতকালে মাঝে মাঝে গ্যাস সঙ্কট দেখা দেয়। এ সময় সাধারণত গ্যাসের চাপ কম থাকে তাই এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম এলাকায় স্থাপন করা পাইপলাইনগুলো অনেক পুরনো, এ কারণে পাইপলাইনে গ্যাসে চাপ কম থাকে। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে খুব শীঘ্রই সঙ্কট কেটে যাবে। তবে এলএনজি না আসার আগে স্থায়ীভাবে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানান, বাসাবাড়ির বাইরেও চট্টগ্রামে গ্যাসের কয়েকটি বড় (বাল্ক) ক্রেতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে রাউজান তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাসের চাহিদা ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বাইরে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে গ্যাস সরবরাহ দিতে হয় ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোর চাহিদা ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত বহুজাতিক সার কারখানা কাফকোতে গ্যাসের ন্যূনতম চাহিদা ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানায় (সিইউএফএল) রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিদিন সরবরাহ করতে হয় ৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এছাড়া ৫ লাখের বেশি আবাসিক গ্রাহকের জন্য বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘটফুট। এর মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেলে সঙ্কট থাকে না। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ওই পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গত কয়েকদিন কোনভাবেই ২২০ থেকে ২৩০ ঘনফুটের বেশি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এতে রেশনিং করে শিল্প গ্রাহকদের চাহিদা মিটানো কিছুটা সম্ভব হলেও আবাসিকে কোনভাবে সরবরাহ স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। আবাসিকে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়ার চেষ্টা চলছে যা চাহিদার বিপরীতে খুবই অপ্রতুল। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) প্রকৌশলী শামসুর রহমান খান বলেন, আমাদের চাহিদা ৪০০ থেকে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে আড়াইশ ঘনফুটের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে গত কয়েকদিন চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আবাসিক গ্রাহকরা বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি আগামী দু’একদিনের মধ্যে গ্যাস সঙ্কটের সমাধান হবে।
×