ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতিতে নারী

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

অর্থনীতিতে নারী

দেশে নারীর মানবাধিকারের নিশ্চয়তা সামগ্রিকভাবে অর্জিত না হলেও তারা দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। দেশের অর্থনীতির তিনটি প্রধান খাত- গার্মেন্টস, কৃষি এবং বিদেশে শ্রমদান। এ তিন খাতেই সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন সাধারণ নারী। সহস্রাব্দের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ যে সকল সূচকে এগিয়ে বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে, সেখানে নারী শিক্ষার অগ্রগতি বিশেষভাবে সমাদৃত। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এক জরিপে অবশ্য অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারীর প্রতিদিন ১২.১টি কাজ জাতীয় অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না বলে উঠে এসেছিল। শত বছর আগে বেগম রোকেয়া নারীমুক্তি ও জাগরণের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন ‘সুলতানার স্বপ্ন’ উপন্যাসে। সুলতানার স্বপ্ন শুধু পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, বৈজ্ঞানিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, আধুনিক ও উন্নত সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবিও এতে আমরা দেখতে পাই। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের ফলে তাদের মনস্তত্ত্বে যে হীনম্মন্যতা বাসা বাঁধে, তার বিরুদ্ধে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে সুলতানার স্বপ্ন। রোকেয়ার সাহিত্য এবং নারী জাগরণের বিবিধ পদক্ষেপ আমাদের জন্য এখনও প্রাসঙ্গিক। এখন অফিস-আদালত ও শ্রমবাজারে নারীর উপস্থিতি বেড়েছে, তবে তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনও দ্বৈত শোষণ-শাসন ও যৌন নিপীড়নের শিকার। নারীর গৃহশ্রমের আর্থিক মূল্য নেই, এমনকি সামাজিক স্বীকৃতিও নেই। একই সঙ্গে পুরুষের তুলনায় কম মজুরিতে কারখানায় কাজ করতে হচ্ছে তাদের। রোকেয়া নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সেটি বিবেচনায় রেখে আমরা বলতে পারি- আজকের বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক অবদান অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভাল। এক দশকে নারীকর্মী ১২ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪০ লাখে। লিঙ্গবৈষম্য হ্রাসে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে। এ দুটি আশা জাগানিয়া তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। নারীর অবস্থা ও অবস্থানের উন্নতির লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। মাঝে মাঝে এমন সব নারী নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যেগুলোর প্রকৃতি ও অন্তর্নিহিত নির্মমতার পরিচয় পেয়ে আমাদের বিবেক যেন বিবশ হয়ে পড়ে। আমরা অনুধাবনে সক্ষম হই যে, সমাজ থেকে এখনও দূর হয়নি অন্ধকার। সরকার নারীদের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে শুরু থেকেই নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যেই ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় নারীবান্ধব কর্মসূচী বাস্তবায়িত হয়েছে। বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার জেন্ডার ভিশনে বলা হয়েছে, একটি স্বাধীন দেশ যেখানে নারী ও পুরুষের সমান সুযোগ ও অধিকার থাকবে এবং যেখানে নারীরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে সমান অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে, দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে ও সর্বোপরি দারিদ্র্য দূরীকরণে নারীর অবদান গুরুত্বপূর্ণ ও অসামান্য। নারী সাহসী হয়েছেন, কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলেছেন এবং নিজের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নিজেও সচেষ্ট হয়েছেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর ব্যাপক উপস্থিতি তাই প্রত্যাশিত।
×