ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর সব এক্সচেঞ্জ আধুনিকায়নের কাজ শেষ পর্যায়ে;###;পরে জেলা ও থানা শহরের পুরনো এক্সচেঞ্জ প্রতিস্থাপন করা হবে

অপটিক্যাল ফাইবার কেবলে যুক্ত হচ্ছে সব টেলিফোন এক্সচেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

অপটিক্যাল ফাইবার কেবলে যুক্ত হচ্ছে সব টেলিফোন এক্সচেঞ্জ

ফিরোজ মান্না ॥ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা আরও আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করার জন্য সরকার প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পে চীন সরকারের কাছ থেকে এক হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা এবং সরকারী তহবিল থেকে ৪০৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ইতোমধ্যে এনজিএনভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্পটি একনেক চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। চীন সরকার অর্থ ঋণের অর্ধেক ছাড় করেছে বলে জানানো হয়েছে। ঢাকার টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলোর আধুনিকায়ন করার কাজও চলছে। সূত্র জানিয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় বিটিসিএলের (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড) দেশব্যাপী বিদ্যমান সব এক্সচেঞ্জের পুরনো ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি ও কপার বেইজড টেলিফোন নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করে আধুনিক ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি এবং ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসা হবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (বিটিসিএল) ও চীন সরকারের নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান মেসার্স চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের (সিএমইসি) মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে। বিটিসিএল রাজধানীর সব পুরনো টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও যন্ত্রপাতি অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কে যুক্ত করবে। একই সঙ্গে ৭১ হাজার নতুন সংযোগ স্থাপন করবে বিটিসিএল। এই প্রকল্পের কাজ কয়েকটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে রাজধানীর পুরনো টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলো আধুনিকায়ন করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এক্সচেঞ্জে ফাইবার অপটিক কেবলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। বাকি এক্সচেঞ্জগুলো অল্পদিনের মধ্যে আধুনিকায়ন করা হবে বলে বিটিসিএল জানিয়েছে। ঢাকার কাজ শেষ হওয়ার পর জেলা ও থানা শহরগুলোর সব পুরনো টেলিফোন এক্সচেঞ্জ প্রতিস্থাপন করা হবে। এই এক্সচেঞ্জগুলো প্রতিস্থাপিত হওয়ার পর ৫০ হাজার নতুন টেলিফোন সংযোগ দেয়ার সুবিধা তৈরি হবে। এদিকে, জাইকার অর্থ সহযোগিতায় টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটি এ বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ৫শ’ কোটি টাকার নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ঝুলে আছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে এখন প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে না দাতা সংস্থা জাইকা। জাইকা বিটিসিএলকে কয়েক দফা চিঠি দিয়ে ক্ষোভের কথাও জানিয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ৫০ হাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সুবিধা সাড়ে তিনগুণ বেড়ে এক লাখ ৮০ হাজারে উন্নীত হবে। টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক গেটওয়েরও (আইজিডব্লিউ) কল আদান প্রদানে সুবিধা বাড়বে। বিদেশী কলের ইনকামিং ও আউটগোয়িং ক্যাপাসিটিও অনেক বেশি হবে। অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের উন্নতি ঘটবে। টেলিফোন, ইন্টারনেট, টেলিভিশন, অডিও, ভিডিও এবং ডাটা ট্রান্সফার সব একটি কেবলের মাধ্যমে চলবে। টেলিফোন মনিটরিং সিস্টেমও অনেক উন্নত হতো। ভিওআইপি কল প্রায় বন্ধই হয়ে যেত। অদৃশ্য কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে বিটিসিএল। বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য নামমাত্র সুদে জাইকা এই প্রকপ্পে ৫শ’ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রকল্পটি অগ্রগতি জানতে চেয়ে বিটিসিএলকে চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির জবাব বিটিসিএল এখন পর্যন্ত দেয়নি বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে বিটিসিএলের ৯ লাখ ৩০ হাজার ল্যান্ডফোন গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহক আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের বাইরে রয়ে গেছে। এ জন্য চীনের অর্থায়নে নেয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ৭ লাখ গ্রাহককে ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ করা হবে বলে বিটিসিএল জানিয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের গৃহীত রূপকল্প ২০২১ সালের মধ্যে পরিপূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে ‘ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন পলিসি’ (আইসিটি) ২০০৯ বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে দেশের গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা, জাতীয় পর্যায়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করে সব সরকারী প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্তকরণ ও ইন্টারনেট (আইপিপি) টেলিফোন এবং ভিডিও কনফারেন্সিং চালুর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা। এর লক্ষ্য সরকারের এই মহাকর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু অবকাঠামো তৈরি না হলে গ্রাম পর্যায়ে এসব সুযোগ-সুবিধা পৌঁছবে না। ফলে শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য থেকেই যাবে। সরকার দেশের সব মানুষের কাছে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর এ কাজটি ২০২১ সালের আগেই করা হবে।
×