ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোকসানা বেগম

সময় এখন সাব্বিরের

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

সময় এখন সাব্বিরের

ওয়ানডাউনে একজন ব্যাটসম্যানের অভাব সবসময় বোধ হয়েছে বাংলাদেশ দলের। টি২০তে সেই ব্যাটসম্যান মিলে গেছে যেন। তিনি সাব্বির রহমান রুম্মন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে পরপর দুই টি২০ ম্যাচেই যিনি ওয়ানডাউনে নেমে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। ব্যাটিংটার সঙ্গে বোলিং হলেতো কথাই নেই। টি২০তে আদর্শ ক্রিকেটারের ‘প্যাকেজ’ই অলরাউন্ডার হওয়া। সাব্বির সেখানেও সফল। দ্বিতীয় টি২০তে সবচেয়ে বেশি ৩ উইকেট নিয়ে নেন। এক অলরাউন্ডার সাব্বিরকেই তাই পেয়ে গেল বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টি২০তে যেমনটি নৈপুণ্য দেখিয়েছেন সাব্বির, দ্বিতীয় টি২০তে তারচেয়েও ভাল করেছেন। আবারও ব্যাট হাতে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। আর সেই নৈপুণ্যে দলও ১৬৭ রানের লড়াকু ইনিংসও গড়তে পেরেছে। এবার তো বল হাতেও ঝলক দেখিয়েছেন সাব্বির। ২.১ ওভার বল করে ১১ রান দিয়ে একাই ৩ উইকেট নিয়েছেন। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, রিচমন্ড মুটুমবামি ও গ্রায়েম ক্রেমারের উইকেট নেন সাব্বির। প্রথম টি২০তে ৪৬ রান করেছিলেন সাব্বির। এবার দ্বিতীয় টি২০তে অপরাজিত ৪৩ রান করেছেন। ৩০ বলে ১টি চার ও ৩টি ছক্কা মেরে এ রান করেছেন সাব্বির। ওয়ানডাউনে যে একজন যোগ্য ব্যাটসম্যানের অভাব ছিল, তা যেন দূর হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বোলার হিসেবেও নিজেকে উপস্থাপন করেন সাব্বির। টি২০ বিশ্বকাপের জন্য যত পরিকল্পনাই বাংলাদেশ দলের থাকুক, লক্ষ্য কিন্তু একটাই; জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জয় তুলে নেয়া। যতই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হোক, জয় না পেলে যে সব বৃথা হয়ে যাবে। তাইতো জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৪ উইকেটে জেতা প্রথম টি২০ ম্যাচের সবচেয়ে উজ্জ্বল নৈপুণ্য দেখানো সাব্বির রহমান রুম্মন বলেছেন, ‘সব ম্যাচ জিততে চাই। সব সময় পরিকল্পনা থাকে জয়ের জন্যে। বছরের শুরুর ম্যাচটি জিততে পেরে শুরুটা ভাল হয়েছে। এশিয়া কাপের আগে এ সিরিজটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই চারটি ম্যাচই জেতার জন্যে। সবগুলো ম্যাচই আমরা জিততে চাই।’ প্রথম টি২০তে ওপেনার তামিম ইকবাল ২৯ রান করার পর সাব্বির দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। ৩৬ বলে ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ৪৬ রান করেন। যা প্রথম টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। সাব্বিরের এমন ইনিংসে দল ১১৮ রানে পৌঁছে যায়। জিম্বাবুইয়ের করা ১৬৩ রান অতিক্রম করতে গিয়ে দারুণ ব্যাটিং করেন সাব্বির। এরপর মুশফিকুর রহীমের ২৬ ও শেষে সাকিব আল হাসানের ১৩ বলে করা অপরাজিত ২০ রানে ম্যাচই জিতে যায় বাংলাদেশ। তিন নম্বরে নেমে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন সাব্বির। ১১টি টি২০ ম্যাচ খেলেন সাব্বির। ২৩.৩৭ গড়ে ১৮৭ রান করেন। এরমধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টি২০ ম্যাচটিসহ মোট চারবার ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামেন। ২৯.০০ গড়ে ৮৭ রান করেন। তাতেই বোঝা যায় এ পজিশনে সাব্বির অভ্যস্ত ব্যাটসম্যানই। নিজেই বললেন, ‘আমি এর আগেও টি২০তে তিনে ব্যাটিং করে সফলতা পেয়েছি। আমি চেষ্টা করছি তিনে ব্যাটিং করার জন্যে পেস বোলিং ফেস করার জন্যে। মিডলে স্পিন বল খেললে তখন ফ্রি থাকব। এরকম প্ল্যান আমার তিনে খেলার।’ আর ৪টি রান করতে পারলেই অর্ধশতক পেতেন সাব্বির। কিন্তু হল না। এ নিয়ে আক্ষেপ নেই সাব্বিরের। তার লক্ষ্যই যে যেভাবেই হোক দল জিতুক, ‘এরকম কোন আক্ষেপ আমার নেই। হাফ সেঞ্চুরি কিংবা সেঞ্চুরি করব। সব সময়ই চাই টিম জিতুক। যেন আমি দলের জন্যে ভাল একটা কন্ট্রিবিউশন করতে পারি সেটাই লক্ষ্য আমার।’ সাব্বির আগে নামতে চান। কারণ পেস বলটা খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। জানালেন, ‘টি২০তে সব বলই ভাল খেলতে হবে। সব বল ভাল খেলতে না পারলে দুর্বল জায়গাগুলোতে বল করলে তখন সমস্যায় পড়বো। চেষ্টা করবো সব বল খেলতে। তবে পেস বল খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য পেয়ে থাকি। তিনে কিংবা পাঁচে যেখানেই হোক না আমি সেখানেই ব্যাটিং করতে পারব। এটা টিমের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। এ জন্য আমি সব সময় খেলার জন্যে ফিট ও তৈরি।’ টি২০তে শুরুটা ভাল করতে না পারলে শেষে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তা ভালই জানা সাব্বিরের। তাই শুরুর দায়িত্বও যেন নিতে চান, ‘টি২০তে সব বিষয় হচ্ছে শুরুটা ভাল হোক। আমি যদি শুরুটা ভাল করতে পারি তাহলে ফিনিশটা ভাল করতে পারব। প্রথম ছয় বল কি চাই সেটা নির্ভর করে ম্যাচের ওপরে। চার কিংবা ছয় কিংবা এক চাইলে এক। সব ব্যাটসম্যানই চায় শুরুটা যেন ভাল হয়। তাহলে পরের দিকে মেকআপ করতে পারে। শেষদিকে যেন ১৫-২০ বল ভাল করে ডিফেন্ড করতে পারি।’ সঙ্গে যোগ করেন ‘প্রথমে যারা ব্যাটিং করি তারা বল টু বল খেলি। প্রথম ছয় ওভার যেন ব্যবহার করতে পারি সেটাই কাজ আমাদের।’ ওয়ানডে খেলা হল ২৩টি। টি২০ও খেলা হয়ে গেল ১১টি। সাব্বিরের শুধু বাকি রইল টেস্ট খেলা। সেটাও খেলতে চান সাব্বির, ‘একটা খেলোয়াড়কে সব জায়গায় খেলতে হবে। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি২০ হোক না কেন। ওয়ানডে ও টি২০ খেলছি। আশা করছি টেস্ট দলেও ঢুকবো। বাংলাদেশের হয়ে তিনটি ফরমেটেই খেলতে চাই। তেমন কোন চাপ আসলে নেই। ইচ্ছে আছে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলার জন্যে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে যেভাবে খেলছি সেভাবে খেলার জন্যে চেষ্টা করবো।’ প্রথম টি২০তে নৈপুণ্য দেখানোর পর সেই ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলেছিলেন সাব্বির। তা বজায় রেখেছেনও। ‘সব সময়ই চাই টিম জিতুক। যেন আমি দলের জন্য ভাল একটা কন্ট্রিবিউশন করতে পারি সেটাই লক্ষ্য আমার।’ সাব্বির তার বলা এ কথার প্রমাণ দিয়েছেন। আজ তৃতীয় টি২০তে নামার পালা। সেই ম্যাচেও লক্ষ্য একই, নৈপুণ্য দেখানো ও জয় তুলে নেয়া।
×