ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে রোগিণীর রহস্যময় অন্তর্ধান

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে রোগিণীর রহস্যময় অন্তর্ধান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাসপাতাল, থানা ও কারাগার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা বলে স্বীকৃত দুনিয়াব্যাপী। এমন বদ্ধমূল ধারণা ছিল পঞ্চগড়ের মানিকেরও। কিন্তু তার ধারণা পাল্টে যায়, যখন দেখলেন রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থাকা তার স্ত্রী গায়েব হয়ে যায়। মানিক তার স্ত্রীর সন্ধানে গত দুই দিন ধরেই অস্থির। বলেছেন, একমাত্র বৌ আমার। তাও গেল হারিয়ে; তাও আবার হাসপাতাল থেকেই। বিলকিসের রহস্যময় অন্তর্ধানের ঘটনায় হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন ওঠেছে। এ ঘটনায় চলছে তোলপাড়। হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ আবু আজমের দৃষ্টিতে এ ঘটনাকে খুবই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, এমন অনেক রোগীই নিজের ইচ্ছেতেই কাউকে না জানিয়ে চলে যান। পরে দেখা যায় তারা নিজঘরেই ফিরে গেছে। এটি শনিবারের ঘটনা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে এসে তিনি গায়েব হয়ে যান। এ ঘটনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও স্বীকার করতে চাইছে না। তবে হাসপাতালে এ নিয়ে তদন্ত চলার কথা স্বীকার করেছেন একাধিক কর্তাব্যক্তি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পঁয়ত্রিশোর্ধ বিলকিস আক্তার হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে এখানে ভর্তি হন শনিবার। তিনি হাসপাতালের প্রাইমারি ট্রিটমেন্ট ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে সেবক ছিলেন স্বামী মানিকই। মানিক জানান, হার্টের সমস্যা নিয়ে শনিবার সকাল ৮টায় স্ত্রী বিলকিস আক্তারকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন। তিনি হাসপাতালের প্রাইমারি ট্রিটমেন্ট ইউনিটে ভর্তি ছিলেন। শনিবার সকালে মানিক খাবার আনতে বাইরে যান। ফেরেন পৌনে ৯টায়। তখন দেখেন স্ত্রীর বেড ফাঁকা। নেই আশপাশেও। ভাবলেন, হয়ত টয়লেটে। নিজেই ছোটেন সেখানে। ডাকাডাকি করতে থাকেন। কিন্তু কোন সাড়া মেলেনি। আবার আসেন বেডে। দেখেন তখনও ফাঁকা। গেল কোথায়? খুঁজতেই থাকেন। যাকেই পান জিজ্ঞাসা করেন। কোথায় গেল আমার বৌটা। কেউ কি দেখেছেন? কারও কাছ থেকে কোন সংবাদই পাননি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, ঘণ্টাখানেক তালাশের পরও না পেয়ে শীতের সকালেই ঘামতে থাকেন মানিক। অস্থির হয়ে ওঠেন। ব্যাকুলচিত্তে ছোটেন এদিক থেকে সেদিক। শেষে ছুটে যান জরুরী বিভাগের কাউন্টারে। কর্তব্যরতদের কাছে জানতে চান। তারাও অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ ঘটনা অদ্ভুত মনে হয় মানিকের কাছে। নিজের কাছেই প্রশ্ন রাখেন তাহলে কি কেউ তাকে ফুসলিয়ে অন্যত্র নিয়ে গেল। বেলা তখন দুটো গড়িয়ে। মানিক ছুটে যান হাসপাতালের সর্বোচ্চ প্রশাসক পরিচালকের রুমের সামনে। সেখানকার একজন কর্মকর্র্তার কানে দেয়া হয় এ ঘটনা। তখন মানিককে জানানো হয়, যারা ওই সময় (আগের শিফটে) দায়িত্বে ছিলেন, তারা বেলা ২টার দিকে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। তারা আগামীকাল হাসপাতালে এলে বলতে পারবেন, তার স্ত্রী কোথায় গেছেন। অনন্যোপায় হয়ে আবার হন্যে হয়ে ছুটে আসেন ওই ওয়ার্ডে, যেখান থেকে স্ত্রী গায়েব হয়েছেন। কিন্তু এবার তাকে বাধা দেয়া হয়। তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তার সঙ্গে অশোভন ও অনাকাক্সিক্ষত আচরণ করা হয়। তখন মানিক তাদের হুমকি দেন থানায় গিয়ে জিডি করবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবু আজম কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, মানিকের স্ত্রী ভর্তি ছিল হাসপাতালে। তাকে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। হঠাৎ খবর আসতে থাকে বিলকিসকে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন আমাকে বলা হলো, এরকম অনেক সময় অনেক রোগী না বলেই চলে যায়। হয়ত বিলকিসও চলে গেছেন। এটা থানায় জানিয়ে দেয়া হবে। ডাঃ আবু আজম প্রশ্ন রাখেন, হাসপাতাল থেকে বিলকিস কোথায় গেছে এটার জন্য আবার মানিক আপনাদের কাছে গেল? এদিকে বিলকিস অন্তর্ধানে অন্যান্য অভিভাবকরাও হাসপাতালের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক দুর্বলতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হৃদরোগ হাসপাতালে প্রতিদিন শত শত রোগী আসেন। তাদের ভর্তি করানোর সময় এক শ্রেণীর দালাল সেখানে ভিড় জমায়। তাদের আশপাশের ক্লিনিক ও মিরপুরের হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করা হয়। মানিকের অজান্তে কোন চক্র বিলকিসের পরিবারের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় এমন কিছু করেছে কিনাÑ সেটাও তদন্তের দাবি রাখে। বিলকিসের কপালে কী ঘটেছেÑ এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুই জানাতে পারেনি। হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী জনকণ্ঠকে জানান, এখান থেকে দিনদুপুরে বিলকিসের মতো একজন গৃহবধূকে কেউ ফুসলিয়েও নিতে পারা অসম্ভব, তেমনি তাকে অপহরণ করাও অকল্পনীয়। হতে পারে তিনি স্বেচ্ছায় নিজ দায়িত্বে চলে গেছেন, নয়ত অন্যত্র কোথাও আরও ভাল চিকিৎসা নেয়ার জন্য স্বামীর অজান্তেই চলে গেছেন।
×