ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আশরাফ আজিজের কবিতায় রৌদ্রোজ্জ্বলতা

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

আশরাফ আজিজের কবিতায় রৌদ্রোজ্জ্বলতা

কবিতা তো জলপ্রপাতেরই এক অন্য নাম। শব্দের গুঞ্জরণে গুঞ্জরিত রৌদ্রোজ্জ্বল ভোরের ফুল্কায় ক্রিমসন কালারের দিগন্তে রাঙতাজ্বলা দিবসের স্তবকে জেগে থাকা একেকটি প্রহরের অন্তহীন এ্যাশ্ফল্টের সড়ক ধরে ছুটে চলা হু হু হাওয়ার মতোই কবিতার রেশমি স্কার্ফ ওড়ে নিপুণ ব্যঞ্জনায়। যায় দূরে বাঁক ঘুরে ঝাঁক ঝাঁক খঞ্জনা, টিয়া। আর পাখিদের রোঁয়ায় রোঁয়ায় পশমি গলাবন্ধের মতো যায় জড়িয়ে বিরচিত চন্দ্রাঙ্কিত কবিতার পঙ্ক্তিবীথি। কবিতাকে এভাবেই নির্মাণ করেন আশির দশকের কবি আশরাফ আজিজ। কবিতা রচনার পরই কবি আশরাফ আজিজ-তার কবিতার মর্মরিত মোরামজাগা পথের শেষে লাল টালিবাড়ির রেলিঙ থেকে দেন উড়িয়ে তারই কৈশোরডোবা কবিতার করুণ পালক। এমনই অজ¯্র ছবির এচিঙ তিনি এঁকেছেন তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘অবিরল চৈতন্য বৃষ্টি’র পরতে পরতে। এবার পাঠক ঘুরে আসতে পারেন কবি আশরাফ আজিজের সদ্য নির্মিত মার্বেল পাথরে গড়া ঝকঝকে কবিতার বাড়ির ভেতর মহল- ‘সেইসব ফেলে আসা তারাজ্বলা স্মৃতিময় এক চিলতে আকাশ যখন দু’চোখে স্বপ্নের আলো ফেলে, মনে হয় সংসার দাম্পত্য আর হলুদ কষ্টের/ছকে বাধা বৈচিত্র্যহীন জীবন ছেড়ে ছুড়ে ছুটে যাই কৈশোরের সেই নাবালক ইচ্ছের অতলে/যেখানে রঙিন একুরিয়ামের দ্যুতিময় পান্নার মতোন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছেলেবেলাকার অজ¯্র মার্বেল...’ (নষ্টালজিয়া) কবি আশরাফ আজিজের উদ্ধৃত কবিতায় কৈশোরের যে চিত্রটা ফুটে উঠেছে। এই ফুটে ওঠা ছরির গহনে রচিত ছেলেবেলাকার স্মৃতিবিজড়িত বাদলাঝরা মুহূর্ত গুলি বেদনার ভায়োলিনের মতো ব্যথিত সুর তুলে ছড়িয়ে পড়েছে ‘নষ্টালজিয়া’ কবিতার প্রতিটি শব্দে পঙ্ক্তিতে তার পর কবি হেঁটে হেঁটে চলে এসেছেন চিরায়ত সেই প্রেমতীর্থে : আর উচ্চারণ করেছেন নিবিষ্ট মনে। ‘চন্দ্রজ্বলা চোখ-মুখে তার স্বপ্নলাগা ঘোর/আধখানি তার সূর্যডোবা আধখানি তার ভোর/চিরলপাতা আঙ্গুলগুলো মেঘের নূপুর পায়/ রাংতামোাড় দেহখানা চাঁদের ওড়না গায়/... বুকের পর্দা সরিয়ে হায় হৃদয়ে দেয় উঁকি! (প্রেম) প্রেমের মৃদু ডোরবেল বাজিয়ে কবি আশরাফ আজিজ এবার ঝড় তুলেছেন বর্ষণমুখর দুপুরের মতো সেতারের গীতিময় তন্ত্রীতে- লিরিকেল ভঙ্গিতে তিনি কবিতাকে ক্রিষ্টালের ঝাড়ের আলোকপুঞ্জের মতো করেছেন উদ্ভাসিত। ‘হাওয়া বয়ে যায় হাওয়ার স্বভাবে জল গড়িয়ে যায় জলে/ মন ছুটে গেলে মনের গভীরে/ভালোবাসা কী তারে বলে?’ (গন্তব্য) কয়েক পঙ্ক্তির লিমেরিকে যে আবহমানতার সিম্ফনি কবি বাজিয়েছেন আকণ্ঠ আবেগে-তার আবেদনের ঝাপ্টা এসে লাগে যেনো দূর অরণ্যের সারি সারি বৃক্ষচূড়োয়। আর ওই গাছের চূড়োর সবুজ শিরস্ত্রাণে ওঠে ফুটে ধু ধু বিকেলের গভীর চিত্রবীথি। কবি আশরাফ আজিজের কবিতা কখনো কখনো একান্ত ব্যক্তিগত জার্নালের মতো দুলে উঠেছে। কখনও শিরিষের শাখার ড্রয়ারে জমা সুদূর অতীতের দুঃখাহত স্মৃতিকণার রেশ দিয়েছেন ছড়িয়ে। তার কবিতায় যেমন নাগরিক জীবনবোধের গল্পগাঁথা অঙ্কিত হয়েছে। তেমনি লোকজ বর্ণিলতাও জেগেছে অমোঘ আবেশে। ‘অবিরল চৈতন্য বৃষ্টি’ কাব্যগ্রন্থে কবি অত্যন্ত নিখুঁতভাবেই তার স্বকীয়তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টায় ছিলেন ব্যাপৃত। তার কবিতার স্কাল্পচার প্যাটার্ন, কন্সেপশন, পোয়েটিকসেন্স, স্ট্র্যাকচারকে কবি আশরাফ আজিজ-গ্রাফ্সিটে সাজিয়েছেন নিবিড় কাব্যিকতায়। বলাচলে আশরাফ আজিজের আলোচ্য কাব্যগ্রন্থের ৫৩-টি কবিতায়ই তিনি ফুটিয়েছেন ৫৩টি ভোরের সিল্কি গোলাপ। আর ওই গোলাপগুচ্ছের চিবুকে তিনি বৃষ্টির ফোঁটার মতো ঝরিয়ে দিয়েছেন বাদলা ঘন-অমিয় ছায়ার ছায়াচ্ছন্ন দিন! এ কাব্য গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ইস্টিশন প্রকাশন। চার ফর্মার জ্যাকেট কভারের এ গ্রন্থের নান্দনিক প্রচ্ছদ এঁকেছেন ফারহান শাহরিয়ার। প্রকাশকাল বইমেলা-২০১৫।
×