ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ আলীর ছেলে মাহমুদ আলীর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়

বগুড়ার নবাব প্যালেস অধিগ্রহণের দাবি উত্তরাধিকারীদের

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

বগুড়ার নবাব প্যালেস অধিগ্রহণের দাবি উত্তরাধিকারীদের

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার নওয়াব বাড়ির (তদানীন্তন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর বাড়ি) ওয়াক্ফ ও নন ওয়াক্ফ সম্পত্তি যখন বেচাকেনার পালা শুরু হয়েছে তখনই কানাডা প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর এক ছেলে সৈয়দ মাহমুদ আলী ও তার স্ত্রী জোডি ম্যাকডোনাল্ড বগুড়ায় এসে পৈত্রিক বাড়ি সরকারকে অধিগ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে বলেন, বগুড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক এই নওয়াব বাড়ির যে অংশটুকু এখন টিকে আছে তা তিনি ও তার বোন সরকারকে দিতে চান। সরকার যদি এখনই বগুড়ার ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক ইতিহাস রক্ষায় এই সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে তাহলে তার (সৈয়দ মাহমুদ আলী) ও তার বোন মাহমুদার কোন আপত্তি থাকবে না। বগুড়া শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা থেকে দেড় শ’ মিটার পূর্বে প্রায় দেড় শতকের ওপর অনেক ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই নওয়াব বাড়ি (নওয়াব প্যালেস)। সেখানে গড়ে উঠেছে মিউজিয়াম। তার পাশেই দিনে দিনে ওয়াক্ফ সম্পত্তির অনেকটাই বিক্রি হয়ে গজিয়ে উঠেছে বহুতল মার্কেট। আবার ওয়াক্ফ করা নেই এমন সম্পত্তি নানাভাবে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমানে যে বসতভিটাটুকু টিকে আছে তাও বিক্রির পাঁয়তারা চলছে। একাধিক সূত্র জানায়, মোহাম্মদ আলীর দুই স্ত্রীর তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে ইতোমধ্যে বেশকিছু সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। আরেক ছেলে সৈয়দ মাহমুদ আলী ও তার বোন মাহমুদা বেগম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বংশের ঐতিহ্যের যে ঠিকানা আবাসস্থল এখনও টিকে আছে তা যেন কোনভাবেই নষ্ট এবং বেহাত না হয়। বংশের শেষ চিহ্নটুকু তারা সরকারকে দিয়ে তারা অন্তত সান্ত¡না পেতে চান বাপ-দাদার ভিটে রক্ষা করতে পেরেছেন। বগুড়ার এই জমিদার পরিবার এতটাই বনেদি ছিল যে এলাকার লোকজন তাদের সম্মান ও শ্রদ্ধাই করতেন। তারা অত্যাচারী জমিদার ছিলেন না। মোহাম্মদ আলী পরিবারের অনেক কীর্তি আজও আছে। যেমন বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল। নারীকে প্রগতির পথে নিয়ে যেতে প্রতিষ্ঠা করেন তহুরুন্নেছা মহিলা ক্লাব। বগুড়ার বিভিন্ন গ্রামে অনেক সম্পত্তি দাতব্য চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য দান করে গেছেন। সত্তরের দশকের মধ্যভাগ থেকে এসব সম্পত্তি নানাভাবে বেচাকেনা শুরু হয়। তখনই একাধিক অসাধু চক্র নওয়াব পরিবারে ঢুকে পড়ে। একই সঙ্গে শুরু হয় সম্পত্তি বেহাত হওয়ার পালা। এই কাজে অন্যতম শরিক হন মোহাম্মদ আলীর সৎ ভাই (প্রয়াত) ওমর আলী চৌধুরী। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে মোহাম্মদ আলীর এক ছেলে হামদে আলী নবাব প্যালেসের কিছু অংশ বিক্রি করে দেন। এরপর পারিবারিক দ্বন্দ্বে বেচা কেনা বন্ধ থাকে। এরই মধ্যে গোপনে প্যালেসের সম্মুখ ভাগের কিছু অংশ (যা কারুপল্লীকে লিজ দেয়া ছিল) একটি বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। জনশ্রুতি আছে, এই বেচাকেনায় দলিলে আন্ডার ভ্যালু দেখিয়ে বহু অঙ্কের টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। ঘটনাটির আজও তদন্ত হয়নি। এরপরই শহরের একাধিক ধনাঢ্য ব্যক্তি মোহাম্মদ আলীর বসতভিটা কেনার দেনদরবার শুরু করেন। তারা মোহাম্মদ আলীর তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। বেচাকেনার পালা শুরু হওয়ার প্রাক্কালে প্রথমে দৈনিক জনকণ্ঠ ও পরে একাধিক পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশ হতে থাকলে নওয়াব বাড়ি রক্ষায় বগুড়ার কিছু সচেতন নাগরিক আন্দোলন শুরু করেন। বলা হয় এই নওয়াব বাড়ি শুধু ঐতিহ্যই নয়, বাড়ির ভেতরে বিরল যে জয়তুন ও কর্পূর বৃক্ষ রয়েছে। বেচাকেনা হলে ঐতিহ্য তো থাকবেই না বিরল প্রজাতির এই গাছ দু’টিও কুঠারের আঘাতে মারা যাবে। এই অবস্থায় বেচাকেনার পালা বন্ধ হয়। বর্তমানে মোহাম্মদ আলীর ছেলে সৈয়দ মাহমুদ আলী ও বোন মাহমুদা তাদের এই পৈত্রিক সম্পত্তি ও ঐতিহ্য রক্ষা কল্পে সরকারকে অধিগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের পরিষ্কার জানিয়েছেন, এখনই তা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গ্রহণ করা হলে তাদের কোন আপত্তি থাকবে না বরং তারা পৈত্রিকভিটা রক্ষা করতে পারার আনন্দটুকু নিয়ে যাবেন। সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, তাদের বাবা তো অনেক কিছু দান করে গেছেন। এখন বংশের সম্পত্তি বেচাকেনা শুরু হয়েছে। অনেক হয়েছে, আর নয়। শেষের বেলায় পরিবারের শেষ চিহ্নটুকু সরকার নিয়ে রক্ষা করলে পূর্বসূরিরা পরলোকেও শান্তি পাবেন।
×