ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বড়দের তুলনায় এগিয়ে ছোটরাই!

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ জানুয়ারি ২০১৬

বড়দের তুলনায় এগিয়ে ছোটরাই!

রুমেল খান যশোর থেকে ॥ অভিজ্ঞতা ও ফলে পিছিয়ে, কিন্তু সার্বিক বিচারে এগিয়ে। কী, বিষয়টা মনে হয় একটু দুর্বোধ্য ঠেকছে, তাই নয় কি? আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এ অংশ নেয়া আট দলের দুটিই বাংলাদেশের। একটি বাংলাদেশ জাতীয় দল, অন্যটি বাংলাদেশ অলিম্পিক (যুব বা অনুর্ধ-২৩ দল) দল। দুটি দলই খেলে ফেলেছে তাদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচ। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশ জাতীয় দল ৪-২ গোলে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশ অলিম্পিক দল ১-১ গোলে ড্র করেছে বাহরাইন অলিম্পিক দলের সঙ্গে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে রেজাল্টের নিরিখে ভাল খেলেছে সিনিয়র বা অগ্রজ দলটাই। কিন্তু ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেই বলছেন ড্র করলেও অলিম্পিক দলের খেলাই বেশি নজর কেড়েছে। কেন? কিভাবে? জাতীয় দল তো নানা সমস্যায় জর্জরিত, এই দলে অন্তর্কোন্দল আছে, তিনটি গ্রুপ আছে, ইয়াসিনের সঙ্গে মাঠে জামাল ভূঁইয়ার মারামারিও হয়েছে... এসব কথা চাউর হয়েছে কয়েক দিন আগেই ভারতের কেরালায় অনুষ্ঠিত সাফ সুজুকি কাপে। সাফে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে দল। এর প্রেক্ষিতে সাফ সুজুকি কাপ চলাকালীনই ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন কোচ মারুফুল হক। অধিনায়ক মামুনুল ইসলামও অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন। দেশে ফিরলে বাফুফের অনুরোধে এ দুজনই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য তাদের দায়িত্ব আবারও চালিয়ে যেতে রাজি হন। মোটকথা, দলের আত্মবিশ্বাস এবং অবস্থা দুটোই ছিল নাজুক। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে জাতীয় দল তাদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারালেও এই ম্যাচে দেখা গেছে কিছু খ-চিত্র। ম্যাচ চলাকালীনই খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব, পরস্পর ধমকাধমকি ও ঝগড়া করার প্রবণতা... যদিও ম্যাচ শেষে কোচ মারুফুল হক দৃঢ়ভাবে সবকিছু অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি ১৬ ঘণ্টাই থাকি। আমার চোখে কখনই এ ধরনের কিছু ধরা পড়েনি। সেটা ভারতেও না, যশোরেও না। কাজেই এ অভিযোগ আমার কাছে ধোপে টিকবে না।’ শ্রীলঙ্কাকে হারানোর ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ডিফেন্স, মিডফিল্ড অনেক ভুল করেছে। তাদের খেলায় তেমন গতি বা উদ্যম ছিল না, যেটা ছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক দলের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে। বাহরাইনের সঙ্গে ম্যাচে তারা জিততে না পারলেও তাদের খেলার ধরন, আক্রমণাত্মক ভঙ্গি, গতি, ক্ষিপ্রতা, উদ্যম সবার নজর কেড়েছে এবং প্রশংসাও কুড়িয়েছে। বিশেষ করে যুব দলের একাধিক খেলোয়াড়কে দেখা গেছে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ড্রিবলিং করে খেলছেন চমৎকারভাবে। যেটা করে দেখাতে পারেননি মামুনুলরা। তারা খেলেছেন গৎবাঁধা এবং মুখস্ত কিছু পাস। স্প্যানিশ কোচ গঞ্জালো সানচেজ মরেনো। বাহরাইনের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়েই প্রথম পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন যুবদলের এই কোচ। সে পরীক্ষায় ফুল মার্কস না পেলেও মোটামুটি ভাল নম্বরই পান। বাংলাদেশ দলের যুবাদের খেলায় বেশ আনন্দই পেয়েছে দর্শকরা। পরিস্থিতি অনুযায়ী কখনও লম্বা পাসে, কখনও ছোট পাসে খেলেছে তারা। শারীরিক সক্ষমতায় বাহরাইনের ফুটবলারদের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও অনেকটা সময় তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই খেলার চেষ্টা করেছে। পক্ষান্তরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচে বাংলাদেশ আরও বেশি গোলের ব্যবধানেও জিততে পারত। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় এবং দুর্ভাগ্যের জন্য গোলসংখ্যা বাড়াতে পারেনি। জিতলেও বাংলাদেশের রক্ষণভাগের খেলা তেমন মন ভরাতে পারেনি। তাদের ব্যর্থতার কারণেই দুটি গোল ‘খামোখা’ উপহার হিসেবে পেয়ে যায় সফরকারী লঙ্কান দল! সে তুলনায় যুবদল মাত্র একটি ভুল করে এবং হজম করে একটি গোল। কাজেই সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায় সার্বিক বিবেচনায় সিনিয়র দলের চেয়ে অনেক জায়গায় এগিয়ে আছে জুনিয়ররাই। এখন দেখার বিষয়, আগামী ম্যাচগুলোতে এই দুই দল কেমন খেলা উপহার দেয় দেশের ফুটবলপ্রেমীদের।
×