ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৬ কোটি মানুষের চাষযোগ্য জমি ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর;###;নেই কৃষি জমি সুরক্ষা আইন

সঙ্কটে কৃষি জমি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

সঙ্কটে কৃষি জমি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ যেখানে বছরে দু’বার ফসল উৎপাদন হতো। বর্ষায় জমতো থৈ থৈ পানি। এলাকার সাধারণ মানুষ এই প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ সংগ্রহ করত, যা ছিল জীবিকার উৎসও। অথচ চোখের সামনে প্রায় ৫০ একর কৃষি জমির ধরন রাতারাতি বদলে যাচ্ছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে মহাসড়ক সংলগ্ন একটি হামিদ এগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান পুরো জমি কিনেছে। সেখানে ঝুলছে শত শত সাইনবোর্ড। জমিতে ইতোমধ্যে ভবন নির্মাণ শুরু করেছে। দেয়া হচ্ছে দেয়াল। অল্প দিনের মধ্যেই এক সময়ের কৃষি জমির কোন স্মৃতি চিহ্নই হয়ত এখানে আর থাকবে না! কৃষি জমি সুরক্ষা আইন না থাকায় এভাবেই বেহাত হচ্ছে ভূমি। সারাদেশের চিত্র ঠিক একই। ইচ্ছামতো জমির ব্যবহার বাড়ছে। চিহ্নিত করা যাচ্ছে না কৃষি ও শিল্পের জমি। রাতারাতি খাল, বিল, ডোবা নালা ভরাট হচ্ছে। অথচ ছয় বছর ঝুলে আছে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন। যদিও ভূমিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আইনটি দ্রুত পাশ হবে এমন আশার কথাই বলছেন। ২০১৭ সাল নাগাদ ভূমি জোনিংয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কৃষি জমি চিহ্নিত করার কথা বলেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমি রক্ষায় রাষ্ট্রের সমন্বিত কোন পরিকল্পনা না থাকায় অপরিকল্পিতভাবে চলছে জমির ব্যবহার। যেখানে সেখানে হচ্ছে বাড়ি। নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্প-প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার দোকানসহ বিভিন্ন রকমের স্থাপনা। হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। গ্রামের কৃষি জমি দ্রুত অকৃষি খাতে যাচ্ছে। সংরক্ষিত ভূমি বলতে কিছু নেই। তবে জলাধার, বন রক্ষায় আইন ও নীতিমালা থাকলে সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবে এর তোয়াক্কা করছেন না কেউ। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন জমি কমার মূল কারণ। দ্রুত ভূমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষের জন্য চাষযোগ্য জমি রয়েছে মাত্র ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এর এক-চতুর্থাংশই এখন হুমকির মুখে। তাছাড়া বাণিজ্যিক কারণে দেশে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ৯৬ বিঘা বা ৬৯২ একর কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। রূপান্তরিত জমির পুরোটাই অকৃষি খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। জলাশয় ভরাট করে প্রতিদিন মোট কৃষি জমি কমছে ৯৬ বিঘা। তামাক চাষের কারণে প্রতিদিন নয় হাজার একর কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এভাবে কৃষি জমি কমতে থাকলে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ বছরে মোট ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩১ একর কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। বাংলাদেশের মোট ভূমির পরিমাণ ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার একর। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, বছরে বাড়ছে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। বছরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এক হাজার হেক্টর জমি। ৮০ শতাংশ সরকারী খাস জমিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। নির্মাণ কাজের কারণে বছরে বিলীন হচ্ছে তিন হাজার হেক্টর জমি। গেল ৩৭ বছরে শুধু ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে! গেল পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ‘জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০’ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন-২০১০।’ অপেক্ষায় কৃষি জমি সুরক্ষা আইন ॥ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু বলেছেন, কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার আইন চূড়ান্ত হচ্ছে শীঘ্র। এর ফলে ভূমির যথেচ্ছা ব্যবহার রোধ হবে এবং কৃষক তাদের সোনালি ফসল ঘরে তুলে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ বিদেশে খাদ্য রফতানি করতে সক্ষম হবে। কৃষি জমি, জলাশয়ের ব্যবহার এবং সুরক্ষার গুরুত্ব দিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘অযৌক্তিকভাবে যাতে কৃষি জমির ব্যবহার না হয় সে জন্য এই আইন করা হচ্ছে। ২০১৭ সাল নাগাদ ভূমি জোনিং করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। এছাড়া প্রত্যেক নাগরিকের জন্য এবং জনস্বার্থে ভূমির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ভূমিমন্ত্রী বলেন, জনবহুল বাংলাদেশে ভূমি বাড়ছে না। তবে সমুদ্র ও নদী থেকে কিছু জমি বাড়ছে। এদেশে ভূমি সমস্যা অনেক দিনের। ঔপনিবেশিক সরকার আমলেও সমস্যা ছিল। এ কারণে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আইনে ল্যান্ড জোনিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যাতে কৃষি জমি, শিল্পে ব্যবহারের জমি সুরক্ষা করতে পারি। ল্যান্ড জোনিংয়ের ক্ষেত্রে একটি পাইলট প্রকল্প করার কথাও জানান মন্ত্রী। জমি নিয়ে গবেষণা ॥ এ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এক গবেষণায় বলেছে, বাংলাদেশে মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ১৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন হেক্টর। যার প্রায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশজুড়ে বনভূমি। ২০ দশমিক ১ শতাংশে স্থায়ী জলাধার, ঘরবাড়ি, শিল্প-কারখানা, রাস্তাঘাট ইত্যাদি, অবশিষ্ট ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ জমি কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। জমি কমায় আগামী ১০ বছরেই আমাদের ভাতে মরার আশঙ্কা হয়ে দেখা দিতে পারে। গবেষণায় বলা হয়, দেশে ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে মোট ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩১ একর বা ৮০ লাখ ৩৩ হাজার বিঘা কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। এই হিসেবে বছরে এ রূপান্তরের পরিমাণ ৭ লাখ ৩০ হাজার ৩২৬ বিঘা জমি। আর প্রতিদিন কমছে দুই হাজার বিঘা কৃষি জমি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল পরিমাণ এ কৃষি জমির ৮০ শতাংশই বাড়ি নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। দোকানপাট নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ আর অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে কারখানা স্থাপন, তামাক ও চিংড়ি চাষ, ইটভাঁটি নির্মাণ প্রভৃতি। সংস্থার পক্ষ থেকে দেশের ১১ জেলায় ৬৬ গ্রামের ৯৯০ পরিবারের ওপর এই গবেষণা জরিপ পরিচালিত হয়। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার, কুষ্টিয়া ও মানিকগঞ্জ জেলাতে কৃষি জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। রাজশাহী, নাটোর, রাঙ্গামাটি ও হবিগঞ্জ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষি জমি ব্যবহারে মধ্যম অবস্থানে রয়েছে। আর কৃষি জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার অপেক্ষাকৃত কম হয় সাতক্ষীরা, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ এবং নেত্রকোনায়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, জমি সুরক্ষার দিক থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে। কৃষি জমি বাণিজ্যিকীকরণে সরকার ওস্তাদ, যা পুরোপুরি ভুল সিদ্ধান্ত। কৃষি জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে নিজের প্রবন্ধে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কৃষি জমি ব্যবহারে রাষ্ট্রকেও তাদের বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ও চিন্তাশীল ব্যক্তিরা ভুল সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। তারা কৃষি জমি বাণিজ্যিকীকরণের বিষয়টিকে আশীর্বাদ হিসেবে সরকারকে দেখানোর চেষ্টা করছে, যা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। বারকাত বলেন, দেশের কৃষি জমি রক্ষা করতে হলে ও কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ ঠেকাতে সরকারের নীতি ঠিক হওয়া প্রয়োজন। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, কৃষি জমি অকৃষি হওয়া ও বাণিজ্যিকীকরণ রোধে তামাকের উৎপাদন কমাতে হবে। এজন্য সরকারের রাজস্ব নীতি শক্ত করতে হবে। আইন করে বহুজাতিক কোম্পানির তামাক উৎপাদনের বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। চিংড়িচাষ বিশেষভাবে বন্ধ, জমির মান বাড়ানো এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কথা বলেন তিনি। বছরে বাড়ছে ২৫ লাখ মানুষ ॥ গবেষণা বলছে, বছরে বাড়ছে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। জমি কমার অন্যতম অন্তরায় হিসেবে দেখা হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। প্রসঙ্গে জানাতে চাইলে, বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহত জনবসতির দেশ হিসেবে সবার আগে বাংলাদেশে ভূমি ব্যবহারের জন্য নীতিমালা থাকা উচিত ছিল। হল্যান্ড, তাইওয়ান, ইসরাইল- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভূমির ব্যবহার করা হচ্ছে। সেসব দেশে এক ইঞ্চি জমিও পরিকল্পনার বাইরে ব্যবহারের সুযোগ নেই। দেশে সাড়ে তিন কোটি একর জমির মধ্যে দুই কোটি একরের কিছু বেশি কৃষি জমি রয়েছে। এসব জমি দ্রুত বিভিন্ন খাতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথমত কৃষি জমি হ্রাস বন্ধ করতে হবে পাশাপাশি জমি ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ জরুরী। জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সবার আগে জাতীয় ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও নীতিমালা জরুরী এমন পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কৃষি জমি অকৃষি খাতে ব্যবহার করা যাবে না এমন আইন রয়েছে। কৃষি জমি অন্য খাতে ব্যবহার করতে হলে সরকারী অনুমোদনের বিষয় আছে। এ ছাড়া জলাধার সুরক্ষা আইন, বনভূমি ও পাহাড় রক্ষায়ও আইন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো কোন আইনেরই যথাযথ প্রয়োগ নেই। কমছে কৃষি জমি ॥ তিন-চতুর্থাংশ মানুষ সরাসরি কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। এ তিন-চতুর্থাংশ মানুষের জীবনজীবিকা চলে কৃষি উৎপাদন ও কৃষিবিপণন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে। বাংলাদেশে বর্তমানে অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প, শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে ক্রমশ কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। পরিসংখ্যান বলছে, মোট ৮ দশমিক ৫২ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমি আছে। এ জমিতেই দেশের কৃষকরা কৃষিপণ্য উৎপাদন করে থাকেন এবং দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয় এ জমিতে উৎপাদিত খাদ্যশস্য দ্বারা। জানা যায়, প্রতিবছর দেশের ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর চাষাবাদ যোগ্য জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৭৬২ মিলিয়ন হেক্টর। গত ৩৮ বছরের এ জমির পরিমাণ কমেছে ১ দশমিক ২৪২ মিলিয়ন হেক্টর। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য কৃষি জমি অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। এভাবে কৃষি জমি কমতে থাকলে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবনজীবিকা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ১৮৩টি। তাদের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। কৃষিজমি অকৃষিতে রূপান্তরিত হওয়ায় এ প্রান্তিক কৃষকরা সংসারের হিসাব মিলাতে পারছে না। এসআরডিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিভাগওয়ারি অকৃষি খাতে জমি চলে যাওয়ার প্রবণতা চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি। এ বিভাগে প্রতিবছর ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। রাজশাহী বিভাগে ১৫ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, ঢাকায় ১৫ হাজার ১৩১ হেক্টর, খুলনায় ১১ হাজার ৯৬ হেক্টর, রংপুরে ৮ হাজার ৭৮১ হেক্টর, বরিশালে ৬ হাজার ৬৬১ হেক্টর জমি প্রতিবছর অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশে আবাদযোগ্য জমি ৮৫ লাখ পাঁচ হাজার ২৭৮ দশমিক ১৪ হেক্টর। সেচকৃত জমি ৭১ লাখ ২৪ হাজার ৮৯৫ দশমিক ৪১ হেক্টর। এছাড়াও আবাদযোগ্য পতিত জমি রয়েছে, দুই লাখ ৪৩ হাজার ৬৬ দশমিক ২৪ হেক্টর। আইনে যা আছে ॥ প্রস্তাবিত কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে কৃষিজমিতে আবাসন, শিল্পকারখানা, ইটভাঁটি বা অন্য কোন রকম অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। জমি যে ধরনেরই হোক না কেন, তা কৃষি জমি হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। দেশের যে কোন স্থানের কৃষি জমি এ আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত হবে এবং কোনভাবেই তা ব্যবহারে পরিবর্তন আনা যাবে না। কোন অবস্থাতেই উর্বর জমিতে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেয়া যাবে না। যে কোন ধরনের জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। আইনে বিচার ও দ- হিসেবে বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘনকারী বা সহায়তাকারীর অনুর্ধ দুই বছর কারাদ- বা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- কিংবা উভয়দ-ে দ-িত হবে। এ আইনের অধীনে অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপোসযোগ্য হবে এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা কিংবা বন ও মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মামলা করতে পারবেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এএএম মাহাবুব-উন-নবী জনকণ্ঠ’কে বলেন, আমাদের দেশে ভূমি ব্যবহারের সমন্বিত পরিকল্পনা নেই। তাই রাষ্ট্র জমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছে না, বা ব্যর্থ হচ্ছে। এজন্য দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। একটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাহলো-দিন দিন জমির পরিমাণ কমছে। আমরা চরম সঙ্কটের দিকে এগিয়ে চলেছি। ভবিষ্যতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চ হবে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা। গ্রামে জমি রক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে বাড়ি নির্মাণ না করে গ্রামগুলোকে ছোট ছোট শহরে পরিণত করতে হবে। বহুতল ভবনে একাধিক পরিবারের আবাসন ব্যবস্থা করা জরুরী। তাহলে কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করেন এ নগর বিশেষজ্ঞ।
×