ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী আরেফ হত্যাকারী তিনজনের ফাঁসি যশোর জেলে কার্যকর

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

কাজী আরেফ হত্যাকারী তিনজনের ফাঁসি যশোর জেলে কার্যকর

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও স্বাধীন বাংলার পতাকার রূপকার জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফসহ ৫ জাসদ নেতাকে নৃশংস হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত তিন আসামির ফাঁসি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলো কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রাজনগরের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাফায়েত হোসেন হাবিব (কয়েদি নং-৭১৩৩), একই উপজেলার কুর্শা গ্রামের ওমর ডাকাত ওরফে উম্মত ম-লের ছেলে আনোয়ার হোসেন (কয়েদি নং-৭৫৮৯) এবং একই গ্রামের সিরাজ ওরফে আব্দুল হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু ওরফে আকবর (কয়েদি নং-৭৫৯০)। একটি কারা সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত তিন আসামির জন্য বৃহস্পতিবার বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সবাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু আনোয়ার দুপুরে এবং রাতে তেমন খাবার খায়নি। বিকেল চারটার দিকে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত ঝন্টু ও আনোয়ারের পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে কারা অভ্যন্তরে দেখা করেন, ছিলেন ঝন্টুর ভাইপো সিদ্দিক, আনোয়ারের ভাই ইসলাম হোসেন, ইসলামের স্ত্রী কুলসুম বেগম। ঝন্টু পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তেমন কথাও বলেনি। সন্ধ্যার দিকে পরিবারের লোকজন কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে। রাত সাড়ে দশটার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার মসজিদের পেশ ইমাম রমজান আলী কারাগারে প্রবেশ করেন কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এর পরপরই প্রবেশ করেন যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, সিভিল সার্জন ডাঃ শাহাদৎ হোসেন। ইমাম রমজান আলী আলাদা আলাদাভাবে হাবিব, ঝন্টু এবং আনোয়ারকে তওবা করান। এর আগে তাদের অজু করতে বলেন। কারা অভ্যন্তরের টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে তাদের গোসল করানো হয়। কারাগারের একটি গাছের নিচে তৈরি মঞ্চে তোলা হয় আনোয়ার হোসেন ও রাশেদুল ইসলাম ঝন্টুকে রাত এগারোটা ১ মিনিটে। এ সময় তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় পাশাপাশি দুটি মঞ্চে। এরপর ওই দুজনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল টিম। এরপর রাত এগারোটা ৪৫ মিনিটে সাফায়েত হোসেন হাবিবের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তার লাশের ময়নাতদন্তও সম্পন্ন করা হয়। এর জন্য সময় লাগে ৩০ মিনিট। কারা সূত্র জানায়, এর আগে ফাঁসি দেয়ার জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দুজন জল্লাদ নিয়ে আসা হয়। দুদিন আগে তারা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। এরা হলো তানভির হাসান রাজু ও হযরত আলী। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এর আগে তারা কয়েকটি ফাঁসিতে জল্লাদ হিসেবে কাজ করে। ফাঁসির সময় উপস্থিত ছিলেন যশোরের ডিসি ড. হুমায়ুন কবীর, এমপি আনিছুর রহমান, সিভিল সার্জন ডাঃ শাহাদৎ হোসেন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার শাহাজান আহমেদ, জেলার হায়দার হোসেনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ফাঁসির পর পরিবারের লোকেরা লাশ গ্রহণ করে। রাতেই তারা লাশ নিয়ে রওনা দেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের উদ্দেশে। তারা সঙ্গে একটি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসেছিলেন। এই এ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে রাতেই রওনা দেন। এর আগে যশোর কারাগারের আশপাশে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ ও র‌্যাব। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কালিদাসপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি সভা চলার সময় ব্রাশ ফায়ারে জাতীয় সমাজতান্দ্রিক দল- জাসদের পাঁচজন নেতা নিহত হন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ ছাড়াও নিহত হন তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরায়েল হোসেন এবং শমসের ম-ল। ওই হত্যাকা-ের পাঁচ বছর পর, ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট ১০ জনের ফাঁসি এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেন কুষ্টিয়া জেলা জজ। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করা হলে, ২০০৮ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট ৯ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন একজনকে খালাস দেন ও ১২ জনের সাজা মওকুফ করেন। ফাঁসির দ-প্রাপ্ত দুইজন এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করলে, ২০১১ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেই আদেশ দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ১৯ নবেম্বর ফাঁসির দ-প্রাপ্তদের রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেয়া হয়। পরে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও তা নাকচ করে দেয়া হয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ৯ জনের মধ্যে ৫ জন পলাতক রয়েছে আর একজন কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন।
×