‘রিভিউ আবেদন করা হবে কিনা মাওলানা সাহেব জানেন’

আরাফাত মুন্না ॥ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের নেতা বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের নায়ক জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অভিযোগ দাখিলের পর দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম পেরিয়ে বিচারিক আদালতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) মৃত্যুদ- হয়। সুপ্রীমকোর্টও এই কুখ্যাত মানবতা বিরোধীর মৃত্যুদ- ছাড়া অন্য সাজা দিতে পারেনি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও অপরাধী সংগঠন জামায়াত প্রধানের মৃত্যুদ- বহাল থাকায় তার ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে মাত্র তিন ধাপ বাকি। প্রথমত বুধবার ফাঁসি বহাল রেখে সুপ্রীমকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ। পরে ওই রায়ের রিভিউ আবেদন। রিভিউ আবেদন খারিজ হলেও বাকি থাকবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার বিষয়টি। ইতোমধ্যে সুপ্রীমকোর্টেই এই যুদ্ধাপরাধীর আইনজীবী তার প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন, তবে আদালত তা আমলে নেয়নি। রায়ের পর এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের সুযোগ পাবেন আসামি। রিভিউয়ের রায়ের ওপর ভিত্তি করে দ- কার্যকর হবে। রিভিউ খারিজ হয়ে যদি ফাঁসি বহাল থাকে তাহলে বাকি থাকবে শুধু প্রাণভিক্ষা। নিজামী রিভিউ আবেদন করবেন কি-না এ প্রশ্নের জবাবে তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আগেরগুলোতে (কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মুজাহিদ) রিভিউ করে ফল পাওয়া যায়নি। এখন এটাতে করা হবে কি-না সেটা মাওলানা সাহেব (নিজামী) জানে। রায় পর্যালোচনা করে তিনি যদি বলেন, তাহলে রিভিউ করা হবে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদ- দেন আপীল বিভাগ। এর প্রায় আড়াই মাস পর ওই বছরেরই ০৫ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপীল বিভাগ। ২০১৪ সালের ০৩ নবেম্বর জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দ- বহাল রাখেন আপীল বিভাগ। এর সাড়ে তিন মাস পর ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপীল বিভাগ। আর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির দ- গত বছরের ১৬ জুন বহাল রাখেন আপীল বিভাগ। এর প্রায় সাড়ে তিন মাস পর ৩০ সেপ্টেম্বর তার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর আপীল মামলার রায়ে মৃত্যুদ- বহাল থাকে একই বছরের ২৯ জুলাই। আর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায় দুই মাস পরে মুজাহিদের সঙ্গে ৩০ সেপ্টেম্বর। তারা সবাই চূড়ান্ত রায় রিভিউ আবেদন করেন এবং প্রত্যেকের রিভিউ খারিজ হয়েছে। তবে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ ছাড়া আর কেউ প্রাণভিক্ষা চায়নি। কাদের মোল্লা-কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজের পর এবং সাকা-মুজাহিদের প্রাণভিক্ষা নাকচের পর মৃত্যুদ- কার্যকর করে সরকার। ওই চারজনের পর এবার রিভিউ আবেদন করা এবং তা খারিজ সাপেক্ষে জামায়াতের আমির নিজামীর দ- কার্যকরের পালা। বুধবার সকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাত্তরে গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে আলবদর বাহিনীর সুপ্রীম কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নিখিল পাকিস্তানের সভাপতি হিসেবে পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর সুপ্রীম কমান্ডার ছিলেন নিজামী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ছাড়াও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি (উর্ধতন নেতৃত্বের দায়) হিসেবে আলবদর বাহিনী ও ছাত্রসংঘের অপরাধের দায়ও নিজামীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে রায়ে। দেশের এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত এ রায় দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকা- এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির প্রমাণিত ৮টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসি ও ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৩টিতে ফাঁসি ও ২টিতে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ বহাল রেখেছেন আপীল বিভাগ। অন্য তিনটিতে চূড়ান্ত রায়ে দ- থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী, যার মধ্যে একটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ ছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে।