ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বহু গুণের আধার ঘৃতকুমারী

জাদুকরী ভেষজ উদ্ভিদ, ঔষধিগুণে ভরপুর অপার সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

জাদুকরী ভেষজ উদ্ভিদ, ঔষধিগুণে ভরপুর অপার সম্ভাবনা

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীতে রোগ-বালাই নিরাময়ে ও দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গাছ-গাছালির ব্যবহার সর্বজনবিদিত। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের যাঁতাকলে এবং কালের বিবর্তনে মানুষ এসব উপকারী ভেষজ উদ্ভিদের নাম ও ঔষধী গুণের কথা আজ ভুলে যাচ্ছে। এক সময় আমাদের দেশের বন-জঙ্গলে অযতœ অবহেলায় যে উদ্ভিদটি জন্মাতো আজ তা আধুনিক বিশ্বে শিল্প ও গবেষণায় স্থান পেয়েছে। ঘৃতকুমারী নামের এ জাদুকরী ভেষজ উদ্ভিদটি হচ্ছে আধুনিক সৌন্দর্য বিশারদদের আদরণীয় উপাদান এ্যালোভেরা। আমাদের দেশেও বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন ঘৃতকুমারীর চাহিদা রয়েছে। ভেষজ গবেষকদের মতে, পরিকল্পিত চাষের মাধ্যমে দেশের ঘৃতকুমারীর চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এ দেশের আবহাওয়ায় চাষোপযোগী ঘৃত কুমারীর শাস দিয়ে মুসাব্বার তৈরি করা হয়। যার চাহিদা রয়েছে উন্নত বিশ্বসহ সারাবিশ্বে। জাপান, থাইল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বহু দেশ এ উদ্ভিদকে পরিণত করেছে রফতানি পণ্যে। অথচ আমাদের দেশে এর অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের কোন উদ্যোগ নেই। পরিত্যক্ত জমিতে ঘৃতকুমারীর বাণিজ্যিক চাষ করে ছোট-ছোট শিল্প গড়ে তুলে এ শিল্পে দেশের বেকারদের কর্মসংস্থান করা সম্ভব বলেও গবেষকরা মনে করছেন। মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি ও রোগ নিরাময়ে ঘৃতকুমারীর পাতার রয়েছে এক আশ্চার্য গুণ। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ঘৃতকুমারী ব্যাপক হারে প্রসাধনী শিল্পে ব্যবহার করা হয়। উন্নত দেশগুলোতে ঘৃতকুমারীর আবাদ ও এর ব্যবহার দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। রফতানি পণ্যের তালিকায় ঘৃতকুমারীর রয়েছে উল্লেখযোগ্য স্থান। আমাদের দেশে অতিসহজেই এর আবাদ সম্ভব হলেও আজও এর কোন পরিকল্পিত আবাদ হচ্ছে না। আধুনিক ও পরিকল্পিতভাবে ঘৃতকুমারীর আবাদ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্পর্কে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রামভিত্তিক খামার তৈরি করা হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ঘৃতকুমারী বিদেশেও রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। ঘৃতকুমারীর চাষ হতে পারে লাভজনক কৃষিপণ্য ও শিল্প উপাদান। সাবান, লোশন, ক্রিম, শ্যাম্পু, হেয়ারডাইসহ অধিকাংশ প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির অন্যতম উপাদান ঘৃতকুমারী। এছাড়া আধুনিক চিকিৎসায় ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, লোকজ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঘৃতকুমারীর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। ঘৃতকুমারীর রাসায়নিক উপাদান হচ্ছে এনথ্রাকুইনোন, গাইকোসাইড, এ্যালোইন, এমোডিন, ক্রাইসোফ্যানিক এ্যাসিড, এলোইমোডিন, ইউরোনিক এ্যাসিড ও বিভিন্ন এ্যানজাইম। এছাড়াও ঘৃতকুমারীতে রয়েছে রেজিন, স্টেরলট্রাইটরপেনস, কুডমারিন্্স, স্যাপোনিন্্স, কার্বোহাইড্রেটডস, এমিনোএসিড ও ভিটামিন যা ওষুধ প্রস্তুতে মূল্যবান উপাদান। ঘৃতকুমারীর ইংরেজী নাম এ্যালোভেরা। ঘৃতকুমারী প্রসাধনী সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয় ত্বকের লাবণ্যতা রক্ষা করা ও চুলের পুষ্টি যোগান দেয়ার জন্য। এছাড়া গরমে প্রশান্তি দেয়া, যকৃত, কৃমি, বাত, ক্ষুধামন্দা, বদহজম এবং বাড়তি মেদ দূর করতে ঘৃতকুমারী এক জাদুকরী উদ্ভিদ। যে কারণে আন্তর্জাতিক ভেষজ বিশেষজ্ঞ ভারতের প্রখ্যাত ভেষজবিদ জি.এম চৌধুরী ঘৃতকুমারীর গুণাগুণ সম্পর্কে বলেছিলেন, একথায় বলা যায় সর্বরোগের মহৌষধ ঘৃতকুমারী। এটা শরীরের ভেতরে যেমন কাজ করে তেমনি শরীরের উপরে ও ত্বক লাবণ্যের রূপচর্চায়ও বিশেষভাবে উপকারী।
×