ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শেকৃবি সেজেছে অপূর্ব সাজে

পাখির কলতানে মুখর মায়াবী ক্যাম্পাস, সবুজের হাতছানি

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

পাখির কলতানে মুখর মায়াবী ক্যাম্পাস, সবুজের হাতছানি

বশিরুল ইসলাম রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর সেজেছে নতুন রূপে। ক্যাম্পাসজুড়ে যেন প্রকৃতির মিলনমেলা। শীতে প্রকৃতির বুকে রুক্ষতা-শুষ্কতাও এমন পরিবেশে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। নানা প্রজাতির দেশী-বিদেশী ফুলের মনোলোভা দৃশ্য মন কেড়ে নেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের। এই সব ফুলের নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে ক্যাম্পাসে। রাজধানীর কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আসে বই-পুস্তকে লেখা ফুলগুলো নিজ চোখে দেখে দেখে শিখতে। পাখ-পাখালির কলতানে মুখরিত মায়াবী এই ক্যাম্পাসকে কেউ বলে রাজধানীর বুকে আধুনিক গ্রাম। হরেক রকম গাছ-গাছালি তার সবুজ পত্র-পল্লব দিয়ে সারা বছর সাজিয়ে রাখে মায়াবী এই ক্যাম্পাসকে। একে শান্ত সুশীতল রাখতে যেন নিজ থেকেই দায়িত্ব পালন করে চলেছে চির সবুজের বৃক্ষগুলো। এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে শীতের রংবেরঙের বাহারি ফুলের সমাহার। ফুলগুলো ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণে। আর প্রথম গেটসংলগ্ন কৃত্রিম ঝর্ণাধারাও ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়ি চলছে। ক্যাম্পাসের ছোট ছোট পিচঢালা রাস্তায় দুই পাশে সারি সারি ফুলের গাছ দেখলে মনে হবে শিক্ষার্থীদের ফুলের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে পথ চেয়ে বসে আছে। গবেষণা মাঠগুলোতে রয়েছে মৌসুমী ফুলের সমারোহ। যেন ফুলে ফুলে শোভিত বিশাল ক্যাম্পাস। এই রূপ-রহস্যের কাছে ধরা দিতে প্রায়ই চলছে নাটক, সিনেমা ও মিউজিক ভিডিওর শূটিং। শিক্ষার্থীদের আড্ডাও জমে উঠছে ক্যাম্পাস চত্বরে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রকৃতিপ্রেমীরাও ভিড় জমাতে শুরু করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের খামার বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ল্যান্ডস্কেপিংয়ের অংশ হিসেবে পাঁচটি আবাসিক হল, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে রাস্তার দুই পাশে মূলত শোভা পাচ্ছে শীতকালীন ফুলের বাগান। এমনকি উপাচার্য বাসভবনও সেজেছে বাগানবিলাস, গোলাপ, ডালিয়া, কসমস, এস্টার, গাঁদা, নানা ফুলে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা উপভোগ করেন হৃদয়জুড়ানো নয়নাভিরাম এই দৃশ্য। দর্শনার্থীদের একজন মোসাঃ শাকিলা ইসলাম জানান, রাজধানীর বুকে এত সুন্দর পরিবেশ দেখতে প্রায়ই এই ক্যাম্পাসে পরিবার নিয়ে চলে আসি। তিনি বলেন, আমার কাছে এই ক্যাম্পাসটা যেন রাজধানীর বুকে একটা গ্রাম। এখানকার ফুলগুলো অন্য সব ফুল থেকে বড়। পরিবেশটাও খুবই চমৎকার। তিনি আরও বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও প্রতিদিনই এই ক্যাম্পাসে আসার চেষ্টা করি। বিভিন্ন ধরনের ফুলে আচ্ছাদিত থাকায় ক্যাম্পাসের ভেতর প্রবেশ করলেই বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে সজীবতা ফিরে পায় সবার মন। ক্যাম্পাসের প্রধান রাস্তা এবং গবেষণার মাঠের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঠোপথ থেকে প্রশাসনিক ভবন এবং আবাসিক ভবনগুলোর রাস্তার দু’ধারে লাগানো হয়েছে এসব মনোহর ফলের গাছ। মেঠোপথের দু’পাশ ঘিরে লাগানো হয়েছে ঘন সবুজ গাছ। সৌন্দর্যবর্ধক এসব গাছ খুব একটা বড় হয় না। এসব গাছের পাশেই বাগানজুড়ে রয়েছে হাইব্রিড এফ ইনকা, সিলভিয়া, ডালিয়া, কসমস, এস্টার, জিনিয়া, দোপাটি, কার্নেশান, গোলাপ, ডুয়ার্ফ রঙ্গন, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, পান্সি, ডায়্যান্তাস, গাজনিয়া বা চন্দ্রমল্লিকার প্রভৃতি জাতের ফুল গাছ। হাইব্রিড এফ ইনকা মূলত গাঁদা ফুলেরই একটি বিদেশী প্রজাতি। এ প্রজাতির একটি গাছে পুরো শীত মৌসুমে ২৫-৩০টি ফুল ধরে। হলুদ, সোনালি ও কমলা রঙের ফুল থাকে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে ফুল কমে যায়। হলুদ, সোনালি, কমলা, মেজেন্টা ও মিশ্র বর্ণের হাইব্রিড ডালিয়া, রক্ত লাল বর্ণের সিলভিয়া, হলুদ ও কমলা বর্ণের হাইব্রিড জিনিয়া ও দোপাটি ফুলের সমাহার বাগানগুলোতে সৃষ্টি করেছে অপরূপ দৃশ্য। এ ছাড়া একাডেমিক ভবন ঘিরেও রয়েছে অসংখ্য ফুলের সমারোহ। উদ্যানতত্ত্ব মাঠেও রয়েছে নানা মৌসুমী সবজিসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ। উদ্যানতত্ত্ব খামারে গড়ে উঠেছে জার্মপ্লাজম সেন্টার। জার্মপ্লাজম সেন্টারে রয়েছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের ফুল, ফল, অর্কিড ও মসলার চারা সংগ্রহের কার্যক্রম চলছে। ফুলের পরিচর্যা সম্পর্কে ড. এএম ফরেজ মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, গোলাপ ফুলের ক্ষেত্রে গাছের ডালপালা ছেঁটে দিয়ে টবে খৈল পচা ও হাড়ের গুঁড়া দিলে ফুলের সংখ্যা ও ফুল আকারে বড় হয়। তাছাড়া অন্যান্য ফুলের ক্ষেত্রে বাজারে প্রচলিত জৈব তরল সার ফলিয়ার ফিডিং করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্র্মকর্তা জান্নাত চৌধুরী বলেন, শুধু শীতকালে নয় পুরো ক্যাম্পাসে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সারাবছর ফুলগাছ লাগানো উচিত। গবেষণা মাঠে বাণিজ্যিকভাবে নানা ফুলের চাষ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তা হবে বাড়তি আয়ের উৎস। মাঠগুলো শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমে সারাবছরই সরব থাকে। তবে শীতের এই বাহারি ফুলগুলো যেন গবেষণা কার্যক্রমের পালে দিয়েছে নতুন হাওয়া। রাস্তার পাশে রয়েছে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের গম, সরিষা, ধান প্রভৃতির গবেষণা প্লট। পূর্বপাশে বিভিন্ন ডাল জাতীয় শস্য ভুট্টা, গোল আলু ও শিম গবেষণা প্লট। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর মোঃ শাদাত উল্লা বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। প্রকৃতিপ্রেমীদের ক্যাম্পাসে আগমন দেখে মন ভরে ওঠে। গবেষণার কাজ করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী মনের অজান্তেই প্রকৃতিকে জীবন্ত করে তোলে। আর প্রকৃতি মনোরম ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্ধারিত কার্যক্রম তো রয়েই গেছে। তাছাড়া ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভাস্কর্য নির্মাণ, স্থায়ী ল্যান্ডস্কেপিংসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন।
×