ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘হকি মিশে গেছে আমার রক্তে’

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫

‘হকি মিশে গেছে  আমার রক্তে’

প্রশ্ন : নানা সঙ্কটে স্থরির হয়ে পড়েছিল হকি। সমস্যা সমাধানের পর সব আগের মতো শুরু করতে পেরে কেমন লাগছে? মিমো : দলবদল বা বিভিন্ন বিষয়ে যে জটিলতা ছিল সেটা এখন কাটিয়ে ওঠা গেছে। সবকিছুই একটা সমাধানের মধ্যদিয়ে এগোচ্ছে। ভাল লাগছে যে জাতীয় দলের সবাই আবার একসঙ্গে অনুশীলন করতে পারছি। ভাল লাগার অনুভূতি পুরোটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। প্রশ্ন : এই যে অন্ধকারে পড়ে গিয়েছিল হকি, বিশেষ করে খেলোয়াড়রা। এ সময় দিনগুলো কিভাবে কেটেছে? মিমো : বিগত দু’বছর কোন দলবদল হয়নি। জাতীয় দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া তাই আর কোন খেলা হয়নি। এই দিনগুলো আসলে কিভাবে কেটেছে তা বর্ণনা করা কঠিন। আমাদের সব সময়ের দাবি ছিল দলবদল। দলবদল না থাকায় দু’বছর লীগ হয়নি। এজন্য অনেক দুঃসময় পার করতে হয়েছে আমাদের। প্রশ্ন : কি করে পার করেছেন দিনগুলো? মিমো : বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ঘোরাঘুরির এই করেই কেটেছে আসলে। বিকেলে ফুটবল, ক্রিকেট খেলতাম। হকি ধরাটাই হয়নি। প্রশ্ন : অনেকে তো হকি ফেলে বিকল্প পথ খুঁজে নিতে চেয়েছেন... মিমো : হ্যাঁ, অনেকেই তেমনটা করেছেন। আমিও চেষ্টা করেছি। ব্যবসা করব কি না এমন ভাবনাও মাথায় এসেছে। তবে হকিকে তো আর ভুলে থাকতে পারি না। এটা যে রক্তের সঙ্গেই মিশে গেছে। প্রশ্ন : দলে আসার পর থেকেই দেখছেন হকি মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরের কারণেই বেশি আলোচনায় থাকে। এ নিয়ে নিশ্চই খারাপ লাগে? মিমো : কষ্ট লাগে খুব। হকি প্লেয়ার হয়ে হকি খেলতে না পারাটা সব চেয়ে বড় কষ্টের। পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তানের দিকে তাকালেই দেখি বছরে ওরা অনেকগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ও ঘরোয়া লিগ খেলে। ওরা সব সময় খেলার উপরই থাকে। ওদের দেখে মাঝে মাঝে খারাপ লাগে যে হকি প্লেয়ারই যখন হলাম তবে ওদের দেশে কেন জন্মালাম না। প্রশ্ন : যেহেতু সঙ্কট দূর হয়েছে তো সামনে কি লক্ষ্য ঠিক করেছেন? মিমো : যেহেতু সব সমাধান হয়েছে এবং এসএ গেমস ঘনিয়ে এসেছে। এসএ দিয়ে অচল অবস্থা পরবর্তী সময়ের শুরুটা ভাল করতে চাই। তাছাড়া বিজয় দিবস হকি শুরু হচ্ছে। এখানেও চাই ভাল কিছু করতে। প্রশ্ন : এসএ গেমসের সার্বিক প্রস্তুতি কেমন চলছে? মিমো : ভাল প্রস্তুতিই হচ্ছে। সামনে বিজয় দিবস হকি। এর কারণে ক্যাম্পে কয়েকদিন বিপতি পড়বে। তবে এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালমতোই এগোচ্ছে। প্রশ্ন : বিজয় দিবস হকি এসএ গেমসের জন্য কতটুকু উপকারী হবে? মিমো : এই টুর্নামেন্ট দিয়ে অনেক দিন পর মাঠে মানতে পারব। এসএ গেমসের আগে এ রকম আর কোন টুর্নামেন্ট নেই। আশা করি এই টুর্নামেন্ট থেকে নতুন অনেক কিছু শিখতে পারব এবং উন্নতি করতে পারব। প্রশ্ন : এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। হকি প্লেয়ার হিসেবে আপনার ওঠে আসার গল্পটা বলুন? মিমো : আসলে আমি নিজেও জানতাম না হকি খেলব একদিন। অন্য সবার মতো আমিও বেশিরভাগ সময়ই ফুটবল আর ক্রিকেট খেলতাম। একবার ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং টিম গিয়েছিল রাঙ্গামাটিতে। আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলাম এবং সেখানে গিয়ে দেখি কিসের যেন নাম লেখানো হচ্ছে। কৌতূহলের বসেই আমিও নাম লেখাই। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি তখন। ওই ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্প থেকেই শুরু আমার। এরপর ইন্টার স্কুল খেলি। তারপর এক মাস ক্যাম্প করি কক্সবাজারে। রাঙ্গামাটিতে করি আরও একটা ক্যাম্প। এরপর ডেভেলপমেন্ট কাপ খেলি ঢাকায়। আমি যে দলে খেলি সেবার রানার্সআপ হয় সেই দল। কক্সবাজার থেকেই চান্স পাই বিকেএসপির ছয় মাসের ক্যাম্পে। সেই ছয় মাসের ক্যাম্পে থাকা অবস্থাতেই ১৪ দিনের ক্যাম্প হয় বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য। ওটা করে টিকে যাই এবং ভর্তি হয়ে যাই বিকেএসপিতে। এভাবেই আমার ওঠে আসা। প্রশ্ন : হকি নামেও যে একটা খেলা আছে এটা প্রথম জানলেন কিভাবে? মিমো : হকি খেলা আমি আগে কখনও দেখিনি। যেবার রেজিস্টারে নাম লেখাই সেবারই হকির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। প্রশ্ন : এরপর ভাল লাগাটা কিভাবে তৈরি হয়? মিমো : হকি ধরার পরই আসলে আলাদা একটা ভাললাগা তৈরি হয়েছিল। সেই ভাল লাগার কারণেই হকির সঙ্গে লেগেছিলাম। বিভিন্ন ধাপ পারি দিয়ে ঢাকায় আসি। জীবনে প্রথম ঢাকায় আসাটা আমার হকি দিয়েই। ২০০৪ সালে ইন্টার স্কুল হকি খেলতে প্রথম ঢাকায় আসি আমি। প্রশ্ন : বাংলাদেশের হকিতে একটা সময় জোয়ার ছিল। যা আপনি সেভাবে দেখেছেন বলে মনে হয় না। তারপরও হকিতে এলেন যে... মিমো : আসলে বেশিরভাগ সময় আমি খেলতাম ক্রিকেট, ফুটবল। আমার পরিবারের অনেকেই ছিল খেলোয়াড়। মামা পরিতোষ দেওয়ান বড় ফুটবল কোচ। মহিতোষ দেওয়ান নামে ছিলেন একজন যিনি মোহামেডানের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। মোটামুটি ক্রীড়া পরিবার ছিল আমাদের। এ কারণে খেলার প্রতি আলাদা একটা টান ছিল। তাই হকিতে আসাটা সহজ হয়েছে। প্রশ্ন : হকি খেলতে গিয়ে কখনও বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে? মিমো : আমি যখন বিকেএসপিতে যাই ছয় মাসের ক্যাম্পে তখন বিকেএসপির কোচ ছিলেন পরিতোষ স্যার। যিনি আমার মামা। মামা তখন আব্বা-আম্মাকে সব সময়ই বলতেন বিকেএসপি ভাল একটা জায়গা। যে কারণে বাবা-মা কখনও বাধা দেননি। প্রশ্ন : হকি নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন? মিমো : এখন যে অবস্থানে আছি সেখান থেকে আরও উন্নতি করতে চাই এবং বাংলাদেশের হয়ে অনেক বড় কিছু করতে চাই। এক কথায় বাংলাদেশের হয়ে ভাল করতে চাই সব সময়। তাছাড়া বাংলাদেশে হকি সম্ভাবনাময় একটা খেলা। ফেড়ারেশন এবং সরকার যদি ভাল মতো পরিচালনা করে এবং দেখাশোনা করে আমাদের, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ খেলবে এমন স্বপ্ন দেখি আমি। প্রশ্ন : আপনি নিজে খেলতে চান বিশ্বকাপে? মিমো : অবশ্যই নিজে খেলতে চাই। জানি না ততদিনে আমার বয়স থাকবে কিনা। তবে স্বপ্ন দেখি বিশ্বকাপে খেলার। প্রশ্ন : সামনে এসএ গেমস। কি আশা করছেন এখানে? মিমো : সর্বশেষ আসরে আমরা ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। এবার টার্গেট থাকবে ফাইনালে ওঠার। ফাইনালে ওঠলে তো পদক যে কোন একটা থাকবেই। আমরা চাইব আগেরবারের চেয়ে নিজেদের উন্নতির প্রমাণ রাখাতে।
×