ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা ডায়নামাইটস ৬ উইকেটে পরাজিত

শেষ চারের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল সিলেট

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

শেষ চারের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল সিলেট

মিথুন আশরাফ ॥ হিসেব সহজ ছিল, সিলেট সুপার স্টারস একটি ম্যাচ হারলেই শেষ চারে খেলা নিশ্চিত করে নেবে ঢাকা ডায়নামাইটস। বিদায় নেবে সিলেট। বুধবারই তা হয়ে যেতে পারত। কিন্তু সিলেট জিতে টুর্নামেন্টের আমেজই বাড়িয়ে দিল। ঢাকাকে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৬ উইকেটে হারিয়ে শেষ চারে খেলার আশা জিইয়ে রাখল সিলেট। আজ ঢাকা ও সিলেট ভিন্ন ভিন্ন ম্যাচে খেলবে। ঢাকা জিতলেই শেষ চারে চলে যাবে। আর যদি সিলেট জিতে এবং ঢাকা হারে, তাহলে রানরেটে দুই দলের মধ্যে যে কোন একটি দল শেষ চারে খেলবে। ঢাকার শেষ চারে ওঠায় হুমকি হয়েই থাকল সিলেট। সিলেট টস জিতে ঢাকাকে আগে ব্যাট করতে পাঠায়। সুযোগটি ভালভাবেই কাজে লাগায় কুমার সাঙ্গাকারার দল ঢাকা। এ উইকেটে দলগুলো রান করতে পারছিল না। আগেরদিন রংপুর রান করে দেখায়। বুধবার ঢাকা দেখায় রান করা যায়। সাঙ্গাকারার ৪৮, নাসির হোসেনের ৩১, ফরহাদ রেজার ৩১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৭ রান করে ঢাকা। আব্দুর রাজ্জাক ২ উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ১ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬২ রান করে জিতে সিলেট। রবি বোপারা ৫৫ ও জুনায়েদ সিদ্দিকী ৫১ রান করেন। তবে শেষদিকে টানা দুই বলে যে দুই ছক্কা হাঁকান শহীদ আফ্রিদি, সেখানেই সিলেট জয় তুলে নেয়। দলের ৩৬ রানের সময় জসুয়া কব আউট হলেও জুনায়েদ সিদ্দিকী ও রবি বোপারা মিলেই যেন সিলেটকে জিতিয়ে দিচ্ছিলেন। তা হয়নি। দুইজন মিলে দলকে ১২২ রানে নিয়ে যান। ৮৬ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। এমন সময় গিয়ে ৫১ রান করা জুনায়েদকে আউট করে দেন ইয়াসির শাহ। তখন জিততে ২৭ বলে ৩৬ রানের দরকার থাকে। বোপারা ও সোহেল তানভির মিলে জয়ের দ্বারপ্রান্তে এগিয়েও যান। যেই ১৩৯ রান হয়, জিততে ১৪ বলে ১৯ রান লাগে বোপারাকে (৫৫) আউট করে দেন ফরহাদ। তখন ঢাকার কোচ মিকি আর্থারের মুখে সে কী হাসি! যেন ম্যাচই জিতে যাচ্ছেন। ১২ বলে জিততে সিলেটের ১৫ রান প্রয়োজন, এমন সময় ১৯তম ওভারটি করতে আসেন মুস্তাফিজ। দুর্দান্ত বল করেন। ওভারটিতে ৫ রান দেন। শেষমুহূর্তে এসে রুদ্ধশ্বাস একটি ম্যাচেরই দেখা মিলে। এক ওভারে জিততে তখন ১০ রান প্রয়োজন পড়ে সিলেটের। বল করতে আসেন ফরহাদ। ব্যাট হাতে থাকেন আফ্রিদি। প্রথম বলে ১ রান হয়। দ্বিতীয় বলে সোহেলকে (১৯) বোল্ড করে দেন ফরহাদ। ৪ বলে জিততে ৯ রানের প্রয়োজন পড়ে। অবশেষে ব্যাট হাতে নামেন মুশফিক। তৃতীয় বলে আরেকটি রান হয়। চতুর্থ বলে গিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন আফ্রিদি। জিততে তখন ২ বলে ২ রানের প্রয়োজন থাকে। পঞ্চম বলে গিয়ে আবারও ছক্কা হাঁকিয়ে জয় এনে দেন আফ্রিদি (১৫*)। শুরুতে ইয়াসির শাহ যে সোহেল তানভিরের বলে ও মোহাম্মদ শহীদের বলে ফরহাদ রেজা বাউন্ডারি হাঁকান, তা দেখেই মনে হয়; স্কোরবোর্ডে ভাল রানই জমা হবে। ১০ ওভারে ৫৫ রান হতেই যখন তিন উইকেটের পতন ঘটে যায়, তখন আবার ঢাকার বিপদের সম্ভাবনাও দেখা দেয়। সেখান থেকে সাঙ্গাকারা ও নাসির মিলেই আসলে দলের বিপদ কাটান। দুইজন মিলে চতুর্থ উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়েন। দল ১৮ ওভারের সময়ই ১২৪ রানে চলে যায়। তবুও বাকি থাকা দুই ওভারে ঢাকা ১৫০ রানের বেশি করে ফেলবে, তা কেউই ভাবেনি। ১২৪ রানে নাসির (৩১) আউটের পর ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে গিয়ে সাঙ্গাকারাও (৪৮) আউট হন। হাতে থাকে ৫ বল। তখন মনে হয় দেড় শ’ করা সম্ভব। কিন্তু মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ব্যাট হাতে নেমেই শহীদের টানা ৩ বলে তিন চার হাঁকান। মুহূর্তেই দল ১৫৬ রানে চলে যায়। চতুর্থ বলে ১ রান নেন সৈকত (১৩*)। শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকালে ১৬০ রানও হতে পারত। কিন্তু ম্যালকম ওয়েলার (১৩*) কোন রানই নিতে পারেননি। ১০ ওভারে ঢাকার স্কোরবোর্ডে ৫৫ রান জমা ছিল। বাকি ১০ ওভারে সাঙ্গাকারা, নাসির, ওয়েলার ও সৈকত মিলে দলের স্কোরবোর্ডে ১০২ রান জমা করেন। তাতেও কাজ হয়নি। শেষপর্যন্ত ঢাকা হারে। এই ম্যাচটির আগে তিন দলের শেষ চারে খেলা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, রংপুর রাইডার্স ও বরিশাল বুলস শেষ চারে খেলার টিকেট পায়। আরেকটি দল বাকি ছিল। সেই দলটি ঢাকা ডায়ানামাইটস না সিলেট সুপার স্টারস হবে, সেদিকেই সবার নজর ছিল। শেষপর্যন্ত বুধবারও এর নিষ্পত্তি হলো না। যদি বুধবার ঢাকা জিতত, তাহলে আজ টুর্নামেন্টের লীগ পর্বের শেষদিন পর্যন্ত শেষ চারের চতুর্থ দল পেতে অপেক্ষা করতে হতো না। এখন তা করতে হচ্ছে। ৯ ম্যাচে ঢাকার যেখানে ৮ পয়েন্ট, সমান ম্যাচে সিলেটের পয়েন্ট ৬। আজ যদি ঢাকা হারে, সিলেট জিতে; তাহলে দুই দলেরই ৮ পয়েন্ট করে হবে। তখন রানরেটেই শেষ চারের একটি দলকে খুঁজে নিতে হবে। সেই অপেক্ষাতেই এখন থাকতে হচ্ছে সবাইকে।
×