ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কার্যাদেশ পেলে এক বছরেই ৫২ কিমিতে এই রেলপথ নির্মাণ সম্ভব বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি

নিজস্ব অর্থায়নেই পাতাল রেল রুট স্থাপন করতে চায় কনটেক

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৫

নিজস্ব অর্থায়নেই পাতাল রেল রুট স্থাপন করতে চায় কনটেক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর যানজট নিরসনে পাতাল রেল নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ চেয়েছে কনটেক লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এক বছরের মধ্যে ৫২ কিলোমিটারের বেশি পাতাল রেল নির্মাণ সম্ভব হবে। নিজস্ব অর্থায়ন ও বিদেশী সংস্থার চেয়ে অর্ধেক খরচে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করবে কনটেক। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদ রেজা। রাজধানীর যানজট নিরসনে চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনকে পাতাল রেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর পরই আবারও পাতাল রেল নির্মাণের বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর সুরক্ষায় পাতাল রেলের বিকল্প নেই। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, ২০০২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বেসরকারী উদ্যোগে ঢাকায় পাতাল রেল স্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। এ সময় এগারোটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কনটেক লিমিটেড সর্বনিম্ন দরদাতা বিবেচিত হয়। ওই সময় পাতাল রেল স্থাপনের জন্য ছয় রুটে ৫২ কিলোমিটারে এই রেল রুট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ ভাগ লোক এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সহজেই যাতায়াত করতে পারত বলে ধারণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০০৯ সাল পর্যন্ত তাদের কাজ শুরুর বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়। সর্বশেষ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যানজট নিরসনের জন্য যত বিকল্প ছিল এগুলোর মধ্যে পাতাল রেল স্থাপনের প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। ২০০৮ সালের সাত জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বিনিয়োগ বোর্ড। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ রেলওয়েকে কনটেক লিমিটেডকে এ কাজের ‘এলওআই’ প্রদানের নির্দেশ দিলেও এক্ষেত্রে একটি গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তখন নতুন যোগাযোগ উপদেষ্টা সময় তৎকালীন বিএনপিপন্থী যোগাযোগ সচিব মাহবুবুর রহমান ‘এলওআই’ না দিয়ে কনটেক লিমিটেডকে অযোগ্য বলে চিঠি দেয়ার নির্দেশ দিলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেই আদেশ পালন করে। যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনী একটি চিঠি। যারা দেশকে দাতাগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর রাখতে চায় এবং দাতাগোষ্ঠীর নিয়ম কানুনের অজুহাতে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় তাদের স্বার্থেই এটি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এমআরটি-৬ এর সঙ্গে তুলনামূলক দর বিবেচনায় নিয়ে কনটেক লিমিটেডকে এমআরটি-১ এর কাজটি দিতে সুপারিশ করা হয়। যোগাযোগমন্ত্রী ও সচিব পরিবর্তন হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটি এখন বাক্সবন্দি। মাসুদ রেজার দাবি, কাজ পেলে তাদের সরকারী অর্থায়নের কোন প্রয়োজন হবে। নিজস্ব অর্থায়নে পুরো কাজ করবেন তিনি। এক্ষেত্রে শেয়ার বাজার থেকে কোম্পানির শেয়ার বিক্রি থেকে ৪০ ভাগ ও জাপানের এক্সিম ব্যাংক থেকে ৬০ ভাগ টাকা ঋণ নেবেন। তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যে ৫২ কিলোমিটারের বেশি মেট্রো রেল তিনি নির্মাণ করতে পারবেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের পাতাল রেল নির্মাণের ‘এলওয়াই’ পুনরায় চালুর দাবি জানান। বর্তমানে জাইকার যে এমআরটি-৪ ও এমআরটি-১ নামকরণ করা হয়েছে সেটি পাতাল রেলের নেটওয়ার্কিং অংশবিশেষ বলে দাবি করেন মাসুদ রেজা। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় উদ্যোক্তারাই যেন এ প্রকল্পের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পায়। তিনি জানান, যে কোন মেগাসিটিতে আন্ডারগ্রাউন্ড, সারফেস (১০০ ফুট নিচে) ও এলিভেটেড (রাস্তার উপরে) এই তিনটি জায়গাই ব্যবহার হয়ে থাকে। মেগাসিটিতে রাস্তা থাকতে হবে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। অথচ ঢাকায় রয়েছে মাত্র ৭ থেকে ৮ ভাগ। মাসুদ রেজা বলেন, যদি রাস্তার উপরে মেট্রোরেল করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে সম্প্রসারণে অসুবিধা হবে। তবে একতলা নিচ দিয়ে পাতাল রেল করা হলে তা ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী সম্প্রসারণ করা যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরে প্রাইভেট গাড়ির মাধ্যমে ঘণ্টায় ৫শ’ যাত্রী যাতায়াত করেন। আর গণপরিবহনে ৫ হাজার যাত্রী। তবে পাতাল রেলের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। এ প্রকৌশলী বলেন, যদি উদ্যোক্তারাই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান তাহলে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ন্যায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কনটেক লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হুজাইফা ও নির্বাহী প্রকল্প অফিসার সৈয়দা দিলরুবা আফরোজ। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ রেজা বলেন, একটি শহরে ১০ লাখের বেশি মানুষ হলেই বিকল্প যোগাযোগ হিসেবে এমআরটি স্থাপনের বিকল্প নেই। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় এখন প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। দুই লাখ গাড়ি চলার উপযোগী শহরে চলছে প্রায় ১০ লাখ। বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোতে প্রায় ৭০ ভাগ যানবাহন ও মানুষ মাটির নিচে স্থাপিত যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় যানজট নিরসন করতে হলে ১২ লেনের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) স্থাপন করতে হবে। কিন্তু রাস্তা না থাকায় বিকল্প হিসেবে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) প্রকল্প নেয়া এখন সময়ের দাবি। রাজধানীর মাটি পাতাল রেলের জন্য উপযোগী এমন দাবি করে তিনি বলেন, কলকাতায় পাতাল রেল নির্মাণের সময় ইউটিলিটি সার্ভিসের কোন সমস্যা হয়নি। আমাদের এখানেও হবার কথা হয়। তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করলেই সকল ইউটিলিটি সার্ভিস নির্দিষ্ট স্থানে রাখা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, জাইকার পক্ষ থেকে রাজধানীতে প্রায় ৬২ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণের সুপারিশ করা হচ্ছে। তাদের গবেষণা চূড়ান্ত হলে সেই আলোকে আমাদের পরিকল্পনা ও বাজেট নির্ধারণ হবে। ভবিষ্যতে রাজধানীতে ১০০ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণের প্রয়োজন হবে বলেও মত দেন তিনি। কাওরান বাজার আন্ডারপাসের গভীরতার সমান করেই রাজধানীতে পাতাল রেল করা সম্ভব এমন দাবি করে তিনি বলেন, তিন পদ্ধতিতে পাতাল রেল নির্মাণ করা যায়। আমাদের মাটির জন্য যেটি সবচেয়ে উপযোগী তাই করা হবে। তাছাড়া পাতাল রেল নির্মাণে জাইকার পক্ষ থেকে প্রতি কিলোমিটারের জন্য এক হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আমরা প্রতি কিলোমিটার অর্ধেকেরও কম টাকায় নির্মাণ করতে পারব। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। সেখানে ডিআরএমসি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার শ্রীধরণ দিল্লীতে মেট্রো রেলের কাজ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ১০টির বেশি জায়গায় মেট্রো রেলের কাজ করছেন।
×