ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাবণ্য মাস্টার মশাইয়ের ‘জয়দুর্গা’

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৮ নভেম্বর ২০১৫

লাবণ্য মাস্টার  মশাইয়ের  ‘জয়দুর্গা’

এক সময় টোল, মক্তব আর সাধারণ পাঠশালাই ছিল শিক্ষা বিস্তারের প্রধান কেন্দ্র। নিজ নিজ এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে শিক্ষানুরাগীরা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতেন। তেমনি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাকেন্দ্র ছিল নেত্রকোনার ‘জয়দুর্গা পাঠশালা’। স্থানীয়রা এটিকে চিনতেন ‘লাবণ্য মাস্টারের পাঠশালা’ নামে। জেলা শহরের সাতপাই এলাকায় মগড়া নদীর পাড়ে শিক্ষানুরাগী লাবণ্য মোহন সরকার ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পাঠশালা। দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে লাবণ্য মোহন সরকার তার নিজ বাসায় এ পাঠশালা গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে এটি মাইনর স্কুলে রূপান্তরিত হয়। তখনকার দিনে শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল কম। এ জন্য লাবণ্য মাস্টার আশপাশের দু’-তিন কিলোমিটার এলাকা ঘুরে অভিভাবকদের শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের ছেলে-মেয়েদের পাঠশালায় ভর্তি করতেন। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পরের বছরেই এ পাঠশালার শিক্ষার্থী পতিত পাবণ দে প্রথম বিভাগে প্রাথমিক বৃত্তি পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর থেকে প্রায় প্রতিবছরই দু’-একজন করে শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ শ্রেণীর পরীক্ষায় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ফুলে হুসেন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘মাস্টার মশাই ছিলেন আদর্শ শিক্ষক। তিনি একদিকে যেমন কড়া, তেমনি ছিলেন স্নেহ-মায়া-মমতায় ভরা মানুষ। আমাদের সন্তানের মতো আদর করতেন। নীতি, আদর্শ ও নিয়ম-শৃঙ্খলার চর্চা করাতেন। একদিন কেউ পড়তে না এলে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতেন। বৃত্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ক্লাস নিতেন। নেত্রকোনার শিক্ষা বিস্তারে জয়দুর্গা পাঠশালার অবদান অনস্বীকার্য’। বলা বাহুল্য, এ পাঠশালার শিক্ষকদের জন্য সরকারী বেতন-ভাতা ছিল না। শিক্ষার্থীদের মাইনে দিয়েই চলত তাদের। লাবণ্য মাস্টার ছাড়াও তাঁর দুই ছেলে তপন সরকার, রতন সরকারসহ আরও অনেকে শিক্ষকতা করেছেন এই পাঠশালায়। লাবণ্য মোহন সরকারের ছেলে দোলন সরকার জানান, জীবদ্দশায় পাঠশালাটিকে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চেয়েছিলেন বাবা। এ জন্য ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ‘জয়দুর্গা পৌর বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে সরকারী রেজিস্ট্রেশন নেয়া হয়েছিল। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে লাবণ্য মোহন সরকারের মৃত্যুর পর পার্শ্ববর্তী বাড়িতে কিছুদিন এর কার্যক্রম চলে। পরবর্তীতে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের দিকে পাঠশালাটি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও জয়দুর্গা পাঠশালাটি আজ আর নেই, কিন্তু স্থানীয় ইতিহাসে এটির সুনাম আজও জ্বলজ্বল করছে। তেমনি লাবণ্য মাস্টার মশাইও বেঁচে আছেন তার অগণিত শিক্ষার্থীর স্মৃতির মণিকোঠায়। Ñসঞ্জয় সরকার নেত্রকোনা থেকে
×