অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ২০২০ সালের মধ্যে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। এটি খুবই উচ্চাভিলাষী নয়, কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ ধরনের প্রবৃদ্ধি করতে হলে ক্ষমতা ও দায়িত্বশীলতার প্রয়োজন, সেই সঙ্গে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। অর্থাৎ সমস্ত উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। তবে উন্নয়নসহযোগীরা বলেছেন, এ ক্ষেত্রে রয়েছে তিনটি চ্যালেঞ্জ। উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে যথেষ্ট বিনিয়োগ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানো। বৈঠকে ব্যাপক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সরকারের সঙ্গে উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। সোমবার বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকের শেষ দিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষে স্থানীয় পরামর্শক গ্রুপের কো-চেয়ার ও ডিএফআইডির কান্ট্রি প্রধান ইয়ানিনা জেরুজালেস্কি, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আসিফ উজ জামান ও উপ-সচিব মেনোয়ার আহমেদ।
বিডিএফ বৈঠকের বিভিন্ন আলোচনায় কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, অবকাঠামো, সুশাসন, স্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং উন্নয়নের মূল ধারায় জেন্ডার সমতা আনয়ন ইত্যাদি খাতে সুনির্দিষ্ট মতামত ও যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে সপ্তদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ এবং টেকসই উন্নয়নে সরকার ও উন্নয়নসহযোগী সংস্থাসমূহের মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরির অঙ্গীকার করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দাতারা বৈঠকের কোন সেশনেই রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোন কথা বলেনি। এ বিষয়ে তারা মাথা গলায়নি এবং মাথা গলানোও ঠিক না। তারা বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু সরাসরি অর্থনৈতিক বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তিনি জানান, আগামী অর্থবছরের বাজেটে অবকাঠামো খাতে বাজেট বাড়বে না। তবে বাড়বে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) আওতায়। বেশ কিছু মেগা প্রকল্প রয়েছে। সেগুলো কিভাবে পিপিপির আওতায় আসবে সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংকের (এআইআইবি) পক্ষ থেকে অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রতিস্টার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে আলোচনায়। আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুত-জ্বালানি প্রযুক্তি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে। উন্নয়নসহযোগীরা বলেছেন, এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো দরকার। করের আওতা বাড়ানো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ক্যাপাসিটি বাড়ানোর জন্য উন্নয়নসহযোগীরা সহায়তা বাড়াবে। কৃষি ও জলবায়ু বিষয়ে দাতারা নজর দেয়ার কথা বলেছে। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সমুদ্রের উচ্চতা বেড়েছে। জলবায়ু উদ্বাস্তু তৈরি হচ্ছে এবং জীবন ও জীবিকার উপর এর প্রভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সামাজিক নিরাপত্তায় প্রতিবছর জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে ওয়ান ইউনিট অব ইকোনমি রয়েছে। এখন সেখান থেকে কেন্দ্রীয় কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। কেননা আমাদের জেলাগুলো পৃথিবীর অনেক দেশের এক একটি রাজ্যের সমান। বিডিএফ বৈঠকে দাতারা বলেছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হলেও এখনও বরাদ্দ অপ্রতুল। এ বিষয়ে আমি (অর্থমন্ত্রী) বলেছি, আগামী অর্থবছর থেকে বরাদ্দে পরিবর্তন আসবে। আলোচনা থেকে বেরিয়ে এসেছে, অবকাঠামো ঘাটতি শুধু বাংলাদেইে নয়, পুরো এশিয়াতেই অবকাঠামো সমস্যা রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন না হলে শিল্পায়ন হবে না। সেজন্য আগামী পাঁচ বছরে আমরা এ খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। তাছাড়া উন্নয়ন সহযোগীরা মানবসম্পদ উন্নয়নে নজর দেয়ার কথা বলেছে। আমি মনে করি সুযোগ সৃষ্টি হলে তারপরই গুণগত মানের বিষয়টি আসে। যেমন প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন মানের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।
মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সুশাসন বিষয়ে ইতোমধ্যেই সরকার যেসব কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে, সেগুলোতে উন্নয়ন সহযোগীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এর ফলে সুশাসন অনেকটাই নিশ্চিত হবে। তিনি জানান, বিডিএফ বৈঠকে নীতি-কৌশলের বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি দাতারা পিপিপির উপর জোর দিয়েছে। তারা বলেছে, অবকাঠামো খাতে বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে কিভাবে পিপিপিকে কাজে লাগানো যায় এবং বেসরকারী খাতকে যুক্ত করা যায় সেটি ভেবে দেখতে।
ইয়ানিয়া জেরুজালেস্কি বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এসডিজি, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রধানমন্ত্রীর ২০২১ সালের মধ্য আয়ের দেশে যাওয়ার লক্ষ্য পূরণে শিক্ষার মান বাড়িয়ে মানবসম্পদ দক্ষ করা দরকার। যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে খাদ্য অভ্যাসে বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ খারাপ অবস্থানে রয়েছে, সেক্ষেত্রে কৃষি ও অবকাঠামোকে টেকসই করতে আলোচনা হয়েছে।