ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪ সেতু উদ্বোধন করবেন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ আগস্ট ২০১৫

প্রধানমন্ত্রী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪ সেতু উদ্বোধন করবেন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি সেতু উদ্বোধন করবেন। এগুলো হচ্ছে কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত বাটাখালী সেতু, সিলেটের গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সড়কের কুশিয়ারা নদীর উপর নির্মিত ‘চন্দরপুর সেতু’, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর উপর নির্মিত ‘সুরমা সেতু’ ও গাইবান্ধায় করতোয়া নদীর উপর নির্মিত ‘বড়দহ সেতু’। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর উপর নবনির্মিত বাটাখালী সেতু খুলে দেয়া হলে চকরিয়ার সঙ্গে মহেশখালীর সড়ক যোগাযোগও সহজ হবে। এতে দুই উপজেলার হাজার হাজার জনগণের যাতায়াতে দুর্ভোগ লাগব হবে। পাশাপাশি উৎপাদিত মৎস্য, লবণ, পানসহ নানা কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা সহজ হবে। সেতুটির কারণে এতদাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সূচনা হবে নতুন দিগন্তের। জানা গেছে, ১৯৮২ সালে নদীর ওপর নির্মিত বেইলি সেতু দিয়ে চিরিঙ্গা-বদরখালী-মহেশখালী সড়কের শত শত যানবাহন ও জনসাধারণ চলাচল করে আসছিল এতদিন। কিন্তু বিগত সময়ে সেতুটির পাটাতন খুলে গিয়ে বার বার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ছন্দপতন ঘটে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী। এ অবস্থার উত্তরণের লক্ষ্যে ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ প্রথমবার সেতুটি নির্মাণে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ শুরু করে। ঠিকাদার ও জামায়াত-বিএনপির কতিপয় নেতা সেতু নির্মাণের টাকা ভাগবাটোয়ারায় মেতে ওঠে। তিন বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বছরখানেক কাজ করে ফের লাপাত্তা। সূত্র জানায়, এরপর ২০০৯ সালে সড়ক বিভাগ দ্বিতীয়বার টেন্ডারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ইউছুপ কনস্ট্রাকশন নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানটিও ছয় মাস কাজ করে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে কাজ ফেলে চলে যায়। কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চকরিয়ায় এসে বাটাখালী সেতুর সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সড়ক বিভাগকে নির্দেশ দেন দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে। মন্ত্রীর নির্দেশে ওই বছরই সড়ক বিভাগ ফের তৃতীয় বারের মতো সেতুটি নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। সেতুটি নির্মাণের কাজ পায় চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের ম্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ পেয়ে ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে নির্মাণ কাজ শুরু করে চলতি মাসের প্রথম দিকে কাজ প্রায় সমাপ্ত করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে সেতুর উভয় পাশে এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া বলেন, ১৭০ দশমিক ৭২ মিটার লম্বা সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। তিনি বলেন, সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বাটাখালী সেতুর নির্মাণ কাজ হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধন করবেন। সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দুটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে দুই জেলার সংসদ সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া সেতুগুলোর উদ্বোধনী ভিডিও কনফারেন্সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মন্নান, জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গণভবনে উপস্থিত থাকবেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, সেতু উদ্বোধনের নির্দেশনাবলী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো হয়েছে। ২০০০ সালের ১৯ জুন তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ চন্দরপুর-সুনামপুর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৪ সালে তখনকার সংসদ সদস্য সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়া আবারও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেতুর কাজও শুরু হয়ে কিছুদিন চলার পর তা থেমে যায়। ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বরে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সেতুটির নির্মাণ কাজ ফের শুরু করেন। দু’বছরে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুর এলাকায় ‘সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি টাকা। পুনরায় ব্যয় বরাদ্দের কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকে। নতুনভাবে ৬৭ কোটি টাকায় উন্নীত হবার পর ৪০২ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। গাইবান্ধা ও গোবিন্দগঞ্জবাসীর স্বপ্নের ‘বড়দহ সেতু’ আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গাইবান্ধা-নাকাইহাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে করতোয়া নদীর উপর বড়দহ ঘাটে এ সেতুটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। ২৫৩ দশমিক ৫৬ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ১৯৯৭ সালে সেতুটির কাজ শুরু হয়ে ১৮ বছর পর এটির নির্মাণ কাজ শেষ হলো। সেতুটি নির্মাণের ফলে গাইবান্ধার সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে রাজধানীর দূরত্ব ১০ কিমি কমে যাবে।
×