ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নব্বই দিনে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম

অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত মন্ত্রণালয় গড়ার মহাপরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৯ আগস্ট ২০১৫

অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত মন্ত্রণালয় গড়ার মহাপরিকল্পনা

ফিরোজ মান্না ॥ অনিয়ম দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি দূর করতে এবার ৯০ দিনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা। পরিকল্পনায় রয়েছে হাওয়ায় উড়ে যাওয়া টাকা ধরে রাজকোষে জমা করার অঙ্গীকার। দীর্ঘদিনের অচলায়তন ভাঙ্গার স্বপ্ন। কোন দুর্নীতিবাজ অনিয়মকারী পার পাবে না। কঠোর ও কঠিন সিদ্ধান্তে অটল। কে আর তাকে রুখে। সরকারের একটি মন্ত্রণালয়কে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসাই টার্গেট। মন্ত্রণালয়ে ফুল ছাড়া আর কোন উপহার গ্রহণ করা হবে না। মন্ত্রণালয়কে ফুলের মতো পবিত্র করার এই ডাক দিয়েছেন এক মাস আগে দায়িত্ব পাওয়া প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ৭টি সংস্থার বিভিন্ন কাজের গতি বাড়াতে সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্দেশ দিয়েছেন। ৯০ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সব বিভাগই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করবে বলে তিনি মনে করছেন। বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে যদি কেউ সংশোধন না হন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মঙ্গলবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জনকণ্ঠকে বলেন, ডাক ও টেলিযোগোযোগ মন্ত্রণালয়কে একটি আদর্শ মন্ত্রণালয় হিসেবে গড়ে তোলা হবে। একটি ভাল নজির স্থাপন করতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি দফতরে ‘ভিজিট’ করে কাজের গতি ও দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। অবৈধ মোবাইল সিম জব্দ করার জন্য আমি নিজে মাঠে নেমেছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু অবৈধ সিম জব্দও করা হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, অবৈধ সিম বিক্রি বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ হচ্ছে জনসেবার প্রতিষ্ঠান। এখানে কোন প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। জনস্বার্থে যা যা করার তাই করা হবে। কারও প্রতি কোন স্বজনপ্রীতি থাকবে না। অবৈধ ভিওআইপি করে হাজার হাজার টাকা যারা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) করতে যেসব সিম বা রিম ব্যবহার করা হয় সেগুলো জব্দ করার বিটিআরসির যে কমিটি রয়েছে তার কার্যক্রম বাড়ানো হবে। শুধু তাই নয়, আইজিডাব্লিউ (ইন্টারনেট গেটওয়ে), আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও আইসিএক্সগুলোর (ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ) প্রতিও নজর রাখা হচ্ছে। পিএসটিএনগুলোর (পাবলিক সুইচ টেলিফোন নেটওয়ার্ক) ওপরও একইভাবে নজর রাখা হচ্ছে। মোট কথা অবৈধ ভিওআইপি করার যত মাধ্যম আছে সব মাধ্যমকেই কঠোরভাবে মনিটর করা হচ্ছে। দেশের টাকা দেশেই রাখা হবে। কোনভাবেই এই টাকা বিদেশে পাচার করতে দেয়া হবে না। এজন্যই ৯০ দিনের কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে র‌্যাবের সহযোগিতা নেয়া হবে। প্রয়োজনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে নজির হিসেবে দাঁড় করানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ পরামর্শক নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কাজ শেষ করা হবে। সাক্ষাতকারে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজই কেবল গতিশীল হবে না, ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতের যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বেশকিছু কার্যক্রম পর্যালোচনা ও বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই ৯০ দিনের কর্মসূচী বাস্তবায়ন হচ্ছে। সকাল ৯টার মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে উপস্থিত নিশ্চিত করতে কঠোর আদেশ জারি করেছেন তিনি। নিজেও সকাল ৯টার আগে তার দফতরে যান। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গত ১৬ জুলাই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ওইদিনই তিনি মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতি ও তদ্বিরমুক্ত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তদবিরবাজদের জন্য দরজা বন্ধ করে দেন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই তিনি এ ঘোষণা দেন। গত ৩ আগস্ট ৯০ দিনের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সাতটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ডাক অধিদফতর, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) টেলিফোন শিল্প সংস্থা ও বাংলাদেশ কেবল শিল্প লিমিটেড (টেসিস) ও বাংলাদেশ কেবল শিল্প লিমিটেড। প্রতিটি দফতরই অতীতে দুর্নীতি আর অনিয়মে নিমজ্জিত ছিল। এখন সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেনে তোলার জন্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কঠোর হাতে হাল ধরেছেন। এ হাল তিনি ছাড়বেন না যতক্ষণ পর্যন্ত দফতরগুলো দুর্নীতি মুক্ত না হয়। তারানা হালিম বলেন, টেলিকমিউনিকেশনন্স কোম্পানির কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। এখন এগুলো চালু করার অপেক্ষায় রয়েছে। ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২শ’ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩০টি স্থানে (উপজেলা ও জেলায়) ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি ও ১ হাজার ৫০ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি, সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইথড বহনের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ট্র্রান্সমিশন লিংকের ক্ষমতা ৪০ জিবিপিএস থেকে ২৪০ জিবিপিএস এ উন্নীতকরণ কাজ অচিরেই শুরু করা হবে। আগামী ৬ সেপ্টম্বর থেকে ১০ জিবিপিএস সাবমেরিন ব্যান্ডউইডথ ভারতে রফতানি করা হবে। এ জন্য কক্সবাজার থেকে আখাউড়া লিংক তৈরি করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পনায় ডাক অধিফতরকে আরও যুগোপযোগীকরণের কর্মসূচীও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পোস্ট-ই সেন্টারের সম্প্রসারণ, পোস্টাল ক্যাশকার্ড সার্ভিসের সম্প্রসারণ, ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের সুবিধা সম্পসারণ, উপজেলা শহর পর্যন্ত সকল স্ট্রিট লেটার বক্স রংকরণ ও পোস্টকোডসহ বিভিন্ন কাজ কর্মের উন্নয়ন করা হচ্ছে। এদিকে, কর্মপরিকল্পনায় রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের সেবার মান বৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টেলিটকের ৬ দশমিক ৮ লাখ নতুন বাড়ানোর টার্গেট নেয়া হয়েছে। টেলিটকের প্রচারণা ও ব্যান্ডিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডিলার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ও বিভিন্ন জেলা শহরে নতুন ১০টি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার চালু করা হবে। এর বাইরে প্রতিটি পোষ্ট অফিসের একটি করে কক্ষ টেলিটকের সার্ভিস সেন্টার হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। বিনিময়ে টেলিটক ওই পোস্টঅফিসের একটি ফ্লোরের যাবতীয় উন্নয়ন কাজ ও পোস্টঅফিসকে ডিজিটাল করে দেবে।
×