ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শরত সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৭ আগস্ট ২০১৫

শরত সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাব্যবীজের স্ফূরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কবিতার চরণে চরণে স্মরণ করা হলো জাতির জনককে। কবিতার শব্দমালায় গুঞ্জরিত হলো স্বাধীনতার মহান স্থপতির কীর্তিগাথা। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর প্রতি প্রকাশিত হলো কৃতজ্ঞতা। রবিবার শরৎ সন্ধ্যায় এই কবিতা পাঠের আসরে অংশ নিলেন দেশের খ্যাতিমান কবিবৃন্দ। তাঁদের স্বকণ্ঠে উচ্চারিত হলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত নিজ নিজ কবিতার পঙ্্ক্তিমালা। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় কবিতাকেন্দ্রিক চমৎকার এ আয়োজনটি। আর কবিতাপাঠের সঙ্গে অনুষ্ঠানে বৈভব বাড়িয়ে দেয় সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালার অংশ ছিল এই কবিতাপাঠ এবং নৃত্য-গীতের পরিবেশনা। গানের সুরে সূচনা হয় অনুষ্ঠানের। জনককে নিবেদন করে অনুপমা মুক্তি পরিবেশন করেন দুটি গান। এগুলোর শিরোনাম ছিল ‘মুজিব তোমায় ভুলি নাই মোরা ভুলবো না কোনদিন’ ও ‘শোন একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি’। সুর থামতেই শুরু হয় কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠের আসর। প্রথমেই কবি আসাদ মান্নান শিল্পিত উচ্চারণে পাঠ করেন ‘পিতার জন্য’ কবিতাটি। দু’টি কবিতাপাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ। কবিতাগুলোর শিরোনাম ছিল ‘পিতা আজ আমাদের শাপমুক্তি’ ও ‘এই বাংলা মুজিবময়’। কবি কাজী রোজী পাঠ করেন ‘মুক্তির গ্রামোফোন যে কবি বাজান’ ও ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’ শিরোনামের দুটি কবিতা। কামাল চৌধুরী পড়ে শোনান ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ ও ‘১০ জানুয়ারি ১৯৭২’। এরপর ‘মুজিব মানে আর কিছু না, মুজিব মানে মুক্তি’ গানের সুরে সমবেত নৃত্য পরিবেশেন করেন স্পন্দনের শিল্পীরা। নূপুরের নিক্বণধ্বনি শেষে আবার উচ্চারিত হয় কবিতার দোলায়িত ছন্দ। তারিক সুজাতের কণ্ঠে উচ্চারিত কবিতা দুটির শিরোনাম ছিল ‘মাতৃভূমি কি যেন তোমার নাম ছিল?’ ও ‘প্রেসনোট থেকে বাদ পড়ে যাওয়া কিছু অংশ’। শামীম রেজা পাঠ করেন ‘১৫ আগস্ট ও বঙ্গবন্ধু’। টোকন ঠাকুরের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় মহাকাব্যের ট্র্যাজেডি শিরোনামের কবিতা। এছাড়াও কাব্যের আলোয় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণের এ আয়োজনে কবিতাপাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, রবিউল হুসাইন, মোহাম্মদ সাদিক, বদরুল হায়দার, প্রত্যয় জসীম ও চঞ্চল আশরাফ। অনুপমা মুক্তি ছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী হাসান মাহমুদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল। ‘যে জীবন ফড়িংয়ের’ হলুদ শরীরে এক জোড়া কালো ডানা মেলে বুড়ো আঙুলের উপর বসে আছে ফড়িং। পাশের ছবিতেই অদ্ভুত সুন্দর নীলাভ দেহের কালো পাখাযুক্ত ফড়িংটি যেন উড়ছে মনের আনন্দে। এমন বহু বর্ণিল ও রকমারি প্রজাতির ফড়িংয়ের একঝাঁক ছবি ঝুলছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চিত্রশালায়। আর ছবিগুলো দেখে যেন দর্শনার্থীর মনের অজান্তেই গুঞ্জরিত হয় রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার সেই চরণÑ যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের, মানুষের সঙ্গে দেখা নাকো হয় তার..। তবে রবিবার বিকেলে দর্শকের সঙ্গে ঠিকই দেখা হলো অনিন্দ্য সুন্দর পতঙ্গ ফড়িংয়ের। প্রদর্শনালয় জুড়ে ছবির ফ্রেমে ফ্রেমে উড়ে আর ঘুরে বেড়াচ্ছিল শোভাময় এই পতঙ্গটি। আর দেশের নানা প্রান্ত চষে বেড়িয়ে তাঁদের ক্যামেরাবন্দী করেছেন আলোকচিত্রী কবীর শাহরীয়ার। চার বছর ধরে নিবিড় মনোযোগে ফ্রেমবন্দী করেছেন ৫৬ প্রজাতির ফড়িং। এগুলোর মধ্যে আবার সন্ধান পেয়েছেন ৬টি নতুন প্রজাতির। আর সেই সব ছবি নিয়ে শুরু হলো আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘যে জীবন ফড়িংয়ের’। শরতের বিকেলে যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. শফিক হায়দার চৌধুরী। উদ্বোধনী বক্তব্যে আনিসুল হক ফড়িং রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, চাষাবাদসহ নানা কারণে অনেক সময় আমরা বেপরোয়াভাবে কীটনাশক ব্যবহার করি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফড়িংয়ের মতো বিভিন্ন প্রজাতির পতঙ্গ। এ বিষয়ে এখনই সচেতনতা গড়ে না তুললে এক সময় বিলুপ্তির মুখে পড়বে এমন পতঙ্গগুলো। আর ফড়িং ভাল থাকা মানে আমাদের প্রকৃতি ভাল থাকা। প্রকৃতি ভাল থাকলে আমরাও ভাল থাকব। সেই বিবেচনায় আলোকচিত্রী কবীর শাহরীয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ কাজ করেছেন। ড. শফিক হায়দার চৌধুরী বলেন, ফড়িং নিয়ে আমি অনেকদিন ধরে গবেষণা করছি। কবীর শাহরীয়ারের ছবিগুলোর এমন ছয়টি প্রজাতি খুঁজে পেয়েছি যেগুলোর বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশে আগে কোথাও লিপিবদ্ধ ছিল না। এটি দেশের জীববৈচিত্র্যের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। অনুভূতি প্রকাশ করে আলোকচিত্রী কবীর শাহরীয়ার বলেন, কোন পরিকল্পনা করে ফড়িংয়ের ছবি তোলা শুরু করিনি। তুলতে তুলতে একসময় দেখলাম অনেকগুলো ফড়িংকে ক্যামেরাবন্দী করেছি। তারপর থেকেই ফড়িংয়ের পেছনে পেছনে ছুটেছি। এর মধ্যে আবার ফ্রেমবন্দী করেছি ৬টি নতুন প্রজাতি। আমি চাই সবাই ফড়িংয়ের ব্যাপারে আরও আগ্রহী হবেন এবং এদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে ভাববেন। আমাদের চারপাশে উড়ে বেড়াক ফড়িংয়ের দলÑএটাই আমার চাওয়া। বান্দরবানের রেমাক্রি, থানচি, তিনডুসহ বিভিন্ন স্থান, শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জসহ দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে ফড়িংয়ের ছবি ফ্রেমবন্দী করেছেন শাহরীয়ার। দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে আজ সোমবার। বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাউল শিল্পীদের ৭ দফা বাউল তরী নামের সংগঠনের মাধ্যমে ৭ দফা দাবি জানালেন বাউল শিল্পীরা। রবিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় বাউল শিল্পীরা শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবিগুলো জানান। সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মফিজুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুর রহমান সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলীসহ বাউল শিল্পীরা। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ প্রতিটি গ্রামে গিয়ে শিল্পীদের নামের তালিকা তৈরি করা এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বেতন ভাতার দায়িত্ব নেয়া, বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় সঙ্গীতের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাউল পল্লী নির্মাণ করা, লালন শাহ, হাছন রাজা, দূরবীন শাহ, আরকুম, শিতালং শাহ, বিজয় সরকারের মতো বিখ্যাত বাউলশিল্পীদের স্বাধীনতা ও একুশে পদকে ভূূূষিত করা এবং বাউল শিল্পীদের মাজার সংরক্ষণ ও নিকটবর্তী স্থানে অডিটোরিয়াম নির্মাণ, সকল শিল্পীদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী সরকারীভাবে পালন করা হোক, অসহায় ও দুস্থ শিল্পীদের ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাউলদের আলাদা আইডি কার্ড প্রদান, বাউল গানের আসরে সরকারীভাবে নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি যেসব বাউলদের ভিটা-বাড়ি বেদখল হয়েছে সেগুলো জরুরীভাবে উদ্ধার এবং যেসব জেলায় সংস্কৃতিচর্চায় বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে সেসব জেলায় সংস্কৃতি মনোভাবাপন্ন জেলা প্রশাসক নিয়োগ।
×