ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরের দুর্গম চর

লেখাপড়ার সুযোগ কম, শিশুরা কাজ করে মাঠে-ঘাটে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১১ আগস্ট ২০১৫

লেখাপড়ার সুযোগ কম, শিশুরা কাজ  করে মাঠে-ঘাটে

আজিজুর রহমান ডল জন্ম দরিদ্র পরিবারে, পূর্বসূরিরা লেখাপড়া করেনি। ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাওয়ার সংস্কৃতি নেই। পরিবারের বড়দের সঙ্গে সকাল থেকেই শিশুরা মাঠে-ঘাটে কাজ করছে। সরকার সকল শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলেও যমুনার বুকে জেগে ওঠা জামালপুরের দুর্গম চরগুলোতে শিশুদের লেখাপড়ার তেমন সুযোগ নেই। তাই চরের শিশুরা মাঠে-ঘাটে কাজ করে। যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সবক’টি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে ইসলামপুরের বিশরশি, বেড়কুশা ও প্রজাপতিসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দুর্গম চরের অভাবী মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সারাবছর তাদের অভাব লেগেই থাকে। তাই চরের শিশুরা দল বেঁধে স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে মাঠে গরু-ছাগল চরায়, নদীতে মাছ ধরে কিংবা রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে ক্ষেত-খামারে কাজ করে। অনেকেই অভাবের তাড়নায় তাদের বাবা-মার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট, রেললাইনের ধারে খুপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। করছে ভিক্ষাসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম। জানা যায়, ইসলামপুরের চরাঞ্চলের শিশুদের একটি বিরাট অংশ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিশুশ্রমে নিয়োজিত রয়েছে। এই শিশুদের অধিকাংশই সংসারের অভাব পূরণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে কাজ করছে। স্বল্প টাকায় খাটানো যায় বলে একশ্রেণীর মালিক এসব কোমলমতি শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করে। একদিন কাজে না গেলে তাদের না খেয়ে থাকতে হয়। অনন্যোপায় হয়ে লেখাপড়া বাদ দিয়ে ঝুঁকে পড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে, কখনও ভিক্ষাবৃত্তিতে। আইন অনুযায়ী ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের দিয়ে কাজ করানো দ-নীয় অপরাধ। অথচ কেউ এ আইন মানছে না। ইসলামপুরের কিংজালা এলাকায় ইটভাঙার কাজ করা ইদ্রিস (১২) বলে, সকাল থেকে কাজ করে যা পাই, তা দিয়েই পেট চলে। কাজ না করলে খাব কি? ইসলামপুর রেলগেট এলাকায় চায়ের দোকানে কাজ করে শাহীন (১১) ও রিপন (১০)। রিপনের বাবা ঢাকায় রিক্সা চালায় এবং মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। আর শাহীন তার বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করে কোন রকমে সংসার চালায়। যমুনার দুর্গম চরশিশুয়া গ্রামের কৃষক সবজল জানান, তার নয় বছরের মেয়ে আফরোজাসহ আশপাশের সবকটি গ্রামের ৭ থেকে ১২ বছরের প্রায় সব কন্যাশিশুই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্গম চরাঞ্চলে গরু-ছাগল চরায় এবং ঘাস কাটে। তবে চরের পুরুষ শিশুরা বাবার সঙ্গে ক্ষেত নিড়ানো ও গরুর ঘাসকাটাসহ সারাদিন সংসারের নানা কাজে ব্যস্ত থাকে। বকশিগঞ্জের নীলাক্ষিয়া বাজারের হোটেল শ্রমিক শিশু রাজু (১১) জানায়, তার মা স্থানীয় বিএম কলেজে মাসিক তিন শ’ টাকা বেতনে ঝিয়ের কাজ করে। এতেই কোন রকমে মা-সন্তানের জীবন চলে। ইসলামপুর নিত্যবাজারের হোটেলে কর্মরত বেড়কুশার শিশু শ্রমিক সালাম (১১) জানায়, হোস্টেলে কাজ করি। ঠিকমত কাজ করতে না পারলে মালিকের গালমন্দ এবং মার খেতে হয়। দেওয়ানগঞ্জ থানা গেটের সামনে রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে কাজ করে দৈনিক ২০ টাকা বেতন পায় বেড়কুশার শিশু শ্রমিক সুদু মিয়া (১২)। খেটে খাওয়া ওইসব শিশুশ্রমিকরা নানা অজুহাতে নির্যাতিত হয়। বড়দের মতো ওরা প্রতিবাদ করতে পারে না।
×