ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাসি আনন্দে বন্ধুতার বিশেষ দিবস

আয় আর একটিবার আয় রে সখা প্রাণের মাঝে আয়...

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ আগস্ট ২০১৫

আয় আর একটিবার আয় রে সখা প্রাণের মাঝে আয়...

মোরসালিন মিজান আজ যার সঙ্গে প্রথম কথা হলো। কাল সে বন্ধু। পরস্পরের প্রয়োজনটা জানা থাকলে এমন বন্ধুতা মুহূর্তেই হয়ে যায় বৈকি! তবে প্রকৃত যে বন্ধুতা, কস্টলি হয় খুব। সহজে মেলে না। আর যখন মেলে তা টিকে থাকে। বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে বন্ধুতা এগিয়ে যায়। একজীবনে স্বর্গীয় এ সম্পর্ক খুব করে প্রত্যাশা করে মানুষ। সে প্রত্যাশার কথা, পাওয়ার সুখ ও না পাওয়ার হাহাকার সবই বিশেষভাবে সামনে এসেছিল রবিবার। এদিন বিভিন্ন মহলে বন্ধুতা ছিল মূল আলোচনা। কারণ আর কিছু নয়, বিশ্ব বন্ধু দিবস। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদ্যাপিত হয়েছে। আবেগ আর উত্তেজনায় ভরপুর ছিল দিনটি। প্রতিবছর আগস্ট মাসের প্রথম রবিবারটি বন্ধু দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়। ১৯৩৫ সালে মার্কিন কংগ্রেস দিবসটিকে জাতীয় বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর থেকে সেটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারাবিশ্বে। এখন বাংলাদেশেও দিবসটি খুব জনপ্রিয়। দু’ একদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রস্তুতি। তারপর উদ্যাপন। না, দৃশ্যমান আনুষ্ঠানিকতা তেমন ছিল না। তবে বন্ধু শব্দটা, সম্পর্কটা ঘুরে ফিরে এসেছে। ভাবিয়েছে। একত্রিত হয়েছেন অনেকে। আড্ডা হৈ হুল্লোড় লেগেই ছিল। বাকিদের কত শত স্মৃতি! ঘাটাঘাটি করে কখনও সুখ, কখনও বেদনায় ডুবেছেন। কে আসলে বন্ধু? বন্ধুতা কাকে বলে? এ আলোচনায় রবীন্দ্রনাথের ভাবনাটি অসাধারণ। সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে কবিগুরু লিখেছেনÑ ‘বন্ধুত্বের আটপৌরে কাপড়ের দুই-এক জায়গায় ছেঁড়া থাকিলেও চলে, ঈষৎ ময়লা হইলেও হানি নাই, হাঁটুর নীচে না পৌঁছিলেও পরিতে বারণ নাই। গায়ে দিয়া আরাম পাইলেই হইল। ভালবাসার সঙ্গে বন্ধুতার তুলনামূলক আলোচনা করে তিনি লিখেছেনÑ ‘অনেকে বলিয়া থাকেন বন্ধুত্ব ক্রমশ পরিবর্তিত হইয়া ভালোবাসায় উপনীত হইতে পারে, কিন্তু ভালোবাসা নামিয়া অবশেষে বন্ধুত্বে আসিয়া ঠেকিতে পারে না। একবার যাহাকে ভালোবাসিয়াছি, হয় তাহাকে ভালোবাসিব নয় ভালোবাসিব না; কিন্তু একবার যাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব হইয়াছে, ক্রমে তাহার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হইতে আটক নাই। অর্থাৎ বন্ধুত্বের উঠিবার নামিবার স্থান আছে। কারণ, সে সমস্ত স্থান আটক করিয়া থাকে না। কিন্তু ভালোবাসার উন্নতি অবনতির স্থান নাই।’ বন্ধুতার আরও অনেক ভাল খুঁজে নেয়া যাবে। দেখানো যাবে। সেদিকে না গিয়েও বলা যায়, বন্ধু পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর অন্যতম। যিনি পেয়েছেন, তিনি তা বোঝেন। যিনি পাননি তিনি বোঝেন আরও বেশি! ফলে উভয় অংশকেই আন্দোলিত করেছে আবেগে ভাসিয়েছে বন্ধু দিবস। এদিন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দৃশ্যটা বেশ চোখে পড়েছে। পুরনো আড্ডাগুলোয় নতুন কী যেন ছিল। টিএসসির কথাই ধরা যাক, অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি তরুণ-তরুণী এখানে সমবেত হয়েছিলেন। তুমুল হাসি হৈ হুল্লোড় হয়েছে। বন্ধুদের আড্ডার এক কোনে বসে নীলা নামের এক তরুণী বললেন, আমরা আসলে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গেছি। এখন সাবেক। সুযোগ পেলেই মিলিত হই। এবার মিলিত হলাম একেবারে বন্ধু দিবসে। বন্ধুদের জন্য বিশেষ একটি দিবস। কতটা দরকার? জানতে চাইলে তার জবাবÑ বন্ধুত্ব প্রতিদিনের। বিশেষ দিবসে সম্পর্কটা নতুন মাত্রা পায়। আলাদা করে ফিল করি। এই ফিল করাটার দরকার আছে বলে মনে করেন তিনি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমবেত হয়েছিল অপেক্ষাকৃত ছোটদের একটি দল। পাশের কোন কলেজ থেকে দল বেঁধে এসেছিল। ইউনিফর্ম গায়ে। নাইম নামের একজন আগে মুখ খুললো। বললো, বন্ধু দিবস তো। তাই কলেজ শেষে সবাই বেড়াতে বের হয়েছি। সবাই কী সবার বন্ধু এখানে? এমন প্রশ্নে কিছুটা থামতে হলো তাকে। একটু সময় নিয়ে বললো, সবাই আসলে কলেজ ফ্রেন্ড। আর বন্ধু? জানতে চাইলে তার বুদ্ধিদীপ্ত জবাবÑ আজকের আড্ডাটা অনেক বড়। একটু পর তা ভেঙে যাবে। এরপর হবে ছোট আড্ডা। সে আড্ডায় যারা থাকে তারাই বন্ধু! এ বন্ধুত্ব বাইরে যতটা, তারও বেশি ভেতরে ভেতরে। উদ্যাপনটাও আলাদাভাবে হয়েছে বলে জানায় সে। বন্ধু দিবসে ফেসবুক, ট্যুইটারের আলোচনাটাও কম জরুরী নয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে, বলা চলে, সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়েছে দিবসটি। টাইমলাইনে ঘুরে ফিরেই এসেছে বন্ধুতার সাতকাহন। বন্ধুদের সঙ্গে নতুন পুরনো ছবি পোস্ট করা হয়েছে। শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। কেউ বন্ধু দিবসে একত্রিত হওয়ার আনন্দের কথা জানিয়েছেন। কেউ একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ফরিদ আহমেদ নামের একজন কবিগুরু থেকে নিয়ে লিখেছেনÑ আয় আর-একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।/ মোরা সুখের দুখের কথা বক, প্রাণ জুড়াবে তায়...। যে কোন অবস্থায় বন্ধুর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও এসেছে। নিউইয়র্ক প্রবাসী গোধূলী খান তার ফেসবুক স্ট্যটাসে লিখেছেনÑ ‘ছিলাম আছি থাকব, যতদিন বাঁচব। কাছে বা দূরে, ফোনে বা সামনে কিম্বা মনে মনে, ছিলাম আছি থাকব। বিপদে বা অবিপদে, হাসি বা কান্নায়, ছিলাম আছি থাকব। ভালবাসা বা হিংসায়, সুখ-অসুখে, ছিলাম আছি থাকব। চেনা বা অচেনায়, মনে রাখা বা ভুলে যাওয়ায়, ছিলাম আছি থাকব। অবস্থা যদি হয় ঘরে নাই চাল বা ফাইভ স্টারে দুইবেলা বাটার চিকেন আর মাখনী ডাল, ছিলাম আছি থাকব। বন্ধু ছিলাম আছি থাকব, যতদিন বাঁচবো।’ কেউ আবার বুকের পুরনো বেদনা খুঁড়ে জাগিয়েছেন। শারমীন নামের একজন জনপ্রিয় গান থেকে ধার করে নিয়ে ফেসবুক স্ট্যটাসে লিখেছেনÑ ‘বন্ধু আমার বুকের মাঝে বিসর্জনের ব্যথ্যা...।’ এভাবে নানা অনুভব অনুভূতি থেকে, ভাবনা থেকে বন্ধুতার সম্পর্কটিকে সামনে আনা হয়েছে। স্মরণ করা হয়েছে। সব দেখে মনে হয়েছে, বন্ধুর জন্য একটি বিশেষ দিন থাকতে পারে। থাকাই উচিত।
×