ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কলাবাগানে গ্যাস বিস্ফোরণে একই পরিবারের সাতজন দগ্ধ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩১ মে ২০১৫

কলাবাগানে গ্যাস বিস্ফোরণে একই পরিবারের সাতজন দগ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় রাজধানীর লেক সার্কাস কলাবাগানের একটি বাড়িতে রান্নার সময় জমে থাকা গ্যাসে আগুন লেগে বিস্ফোরণে একই পরিবারের সাতজন দগ্ধ হয়েছে। দগ্ধদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানা এলাকায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকা-ের ঘটনায় একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। ঢাকার কলাবাগান থানাধীন ২৯ নম্বর লেকসার্কাস কলাবাগানের একতলা টিনশেড বাড়িতে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। প্রতিদিনের মতো ভোরে উঠেন মমতাজ বেগম (৬৫)। তিনি যথারীতি রান্না করতে যান। ম্যাচ জ্বালানো মাত্র পুরো রান্নাঘর, বাথরুম, দুটি শোবার ঘরে আগুন ধরে যায়। বিকট শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বাড়ির সামনের দিকে থাকা অন্তত ৫০ ফুট পাঁচ ইঞ্চি দেয়ালের ২০ ফুট ধসে পড়ে যায়। মমতাজ বেগম ছাড়া সবাই ঘুমে ছিল। তাদের চিৎকারে আশপাশের মানুষ দ্রুত তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস আধঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। অন্য দগ্ধরা হচ্ছেÑ মমতাজ বেগমের ছেলে প্রাইভেটকার চালক সুমন (৩০), তার স্ত্রী রেশমা বেগম (২৫) ও তাদের ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রাব্বি (১০)। এরা দ্বিতীয় রুমে ছিল। আর রান্নাঘর লাগোয়া রুমে থাকা দগ্ধ অপর তিনজন হচ্ছেÑ মমতাজ বেগমের বড় মেয়ে রোজিনা বেগম ওরফে রোজি (৩৭) ও সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া রোজির মেয়ে ফাতেমা আক্তার বিথী (১২) এবং রোজির ছেলে অয়ন (১৬)। অয়ন ড্রাইভিং শিখছে। এরা রান্নাঘর লাগোয়া প্রথম রুমটিতে ছিল। মমতাজ বেগম এদের সঙ্গেই ছিলেন। মমতাজ বেগম ও তার মেয়ে রোজি বেগমকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধদের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট থানাধীন চরসুমন্ত গ্রামে। কক্ষ দুটিতে থাকা দুটি খাট, কাঠের আলমারি, টেলিভিশন, কাপড়চোপড় সব পুড়ে গেছে। কক্ষের পাঁচ ইঞ্চি দেয়াল ছাড়াও সম পরিমাণ চওড়া প্রাচীর দেয়ালও ধসে বাড়ির সামনের দিকে থাকা রাস্তার ওপর আছড়ে পড়েছে। বিস্ফোরণ ঘটা বাড়িটির ঠিক সামনের ২৯/২ নম্বর ছয়তলা বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী মোহাম্মদ ফয়জুল (৫০) জনকণ্ঠকে বলেন, ভোরে তিনি বাসার সামনেই ছিলেন। সাড়ে পাঁচটার দিকে আচমকা বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর চিৎকার কান্নাকাটির আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে। বাড়িটির দেয়াল সামনের রাস্তায় পড়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে। তিনি আরও জানান, শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে ওয়াসার বড় ড্রিল মেশিন বসিয়ে রাস্তার ভেতর দিয়ে ফুটো করে কাজ করা হচ্ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ চলে। রাত সাড়ে বারোটার দিকে গ্যাসের গন্ধ বেরুতে থাকে। সময় যত গড়ায় গ্যাসের গন্ধ তত বাড়তে থাকে। ড্রিল মেশিন দিয়ে ছিদ্র করার সময় গ্যাস লাইন ফুটো হয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সকালে বিস্ফোরণের পর ওয়াসার লোকজন মেশিনপত্র ফেলেই পালিয়ে যায়। প্রায় বিশ কাঠা জায়গার ওপর বাড়িটির অবস্থান। বাড়ির মালিক দুই ভাই অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বাবুল আহমেদ (৬০) ও তাঁর ছোট ভাই জামালপুরের সরিষাবাড়ি থানাধীন তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা ইউরিয়া সার কারখানার অবসরপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার আহমেদ (৫৫)। বাড়িটি দুইভাগে ভাগ করা। দুর্ঘটনা ঘটা কক্ষগুলো ইফতেখার আহমেদের। মূল বাড়ির পেছনেই একতলা টিনের ঘরটির অবস্থান। তাতে ৭ ফুট প্রস্থ আর ১০ ফুট দৈর্ঘ্যরে চারটি কক্ষ রয়েছে। রাস্তার দিকে থাকা দুটি থাকার কক্ষ, একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর ইফতেখার আহমেদের। এ দুটি থাকার কক্ষ, একটি বাথরুম ও রান্নাঘর ভেঙ্গে পড়েছে। ইফতেখার আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সবমিলিয়ে মাসিক সাড়ে আট হাজার টাকায় তারা প্রায় পাঁচ বছর ধরে ভাড়ায় থাকছিলেন। বছর খানেক আগে রোজির স্বামী মারা যান। রোজি গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। আর তার ভাই সুমন গাড়িচালক। দু’জনে মিলে সংসার চালায়। তিনি বলেন, ওয়াসার ড্রিল মেশিন দিয়ে রাস্তা ছিদ্র করে কাজ চলছিল। ছিদ্র করার সময় গ্যাস পাইপ লাইন ফেটে যায়। আর ফেটে যাওয়া পাইপ লাইন বেরুনো গ্যাস পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আর ছড়িয়ে পড়া গ্যাস রাস্তা সংলগ্ন বাসায় ঢুকে স্বাভাবিক নিয়মেই জমে থাকে। আর মমতাজ বেগম রান্নার জন্য চুলা জ্বালাতে ম্যাচ জ্বালানো মাত্রই পুরো বাসায় আগুন ধরে যায়। সিদ্ধিরগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ ॥ আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, শুক্রবার গভীর রাতে জেলার ফতুল্লার আহমেদ নামক এক ব্যক্তির বাসায় মাল্টিপ্লাগে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে বাড়িতে আগুন লেগে যায়। এতে মা সুফিয়া বেগম (৪০), তার বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম শুভ (১৮), ছোট ছেলে সুজন আহমেদ (১৫), মেয়ে সেজুঁতি আক্তার (১২) দগ্ধ হয়। দগ্ধরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে শফিকুল ইসলামের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
×