ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অপারেটরদের দ্বিমতের কারণে বিটিআরসি বার বার তারিখ পেছাচ্ছে

টুজি-থ্রিজির অব্যবহৃত ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলাম নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২০ মে ২০১৫

টুজি-থ্রিজির অব্যবহৃত ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলাম নিয়ে অনিশ্চয়তা

ফিরোজ মান্না ॥ টুজি (দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির) সেবা দেয়ার জন্য অব্যবহৃত ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ ও থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির) জন্য অব্যবহৃত ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলাম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অপারেটরা বর্তমান নিলাম নীতিমালায় নিলামে অংশ নেবে বলে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর আহ্বানে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেও বিষয়টির কোন সমাধান হয়নি। এ কারণে দুই দফা নিলামের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, টুজি ও থ্রিজি তরঙ্গের নিলাম সুবিধামতো সময়ে করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, তরঙ্গ নিলাম প্রক্রিয়া আরও কার্যকর ও দক্ষতার সঙ্গে করতে নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধিত নীতিমালার আওতায় পরবর্তী সময়ে নিলামের তারিখ জানানো হবে। তরঙ্গ নিলামের বিষয়ে অপারেটরদের আপত্তির কারণেই বিটিআরসিকে নিলাম পেছাতে হয়েছে। অপারেটরদের সঙ্গে বিটিআরসির নানা বিষয়ে দ্বিমতের কারণে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে নতুন করে বিনিয়োগে যেতে চাইছে না অপারেটররা। এমন ঘোষণার পরই বিটিআরসি নতুন করে নিলামের গাইডলাইন পরিবর্তন করছে। নতুন নীতিমালায় শীর্ষস্থানীয় টেলিফোন অপারেটর গ্রামীণফোনকে নিলামে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার কথা চিন্তা বিটিআরসি। অপারেটররা নিলামে না এলে নিলাম প্রক্রিয়া যাতে ঠিকমতো শেষ হতে পারে সে জন্য নতুন আরেকটি অপারেটরকে সুযোগ দেয়ার কথাও বিটিআরসি ভাবছে। বিটিআরসি তরঙ্গ নিলামের জন্য প্রথমে তারিখ ঠিক করেছিল গত ৩০ এপ্রিল। পরে ২০ মে নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২৭ মে নিলাম তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই তারিখও পরিবর্তন হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে সাড়া এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, সংশোধিত নীতিমালায় অপারেটররা সাড়া দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। ৩০ এপ্রিল নিলাম অনুষ্ঠানের জন্য নিলামের নীতিমালা চূড়ান্ত করে অনুমোদন দেয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী, ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজের জন্য নিলামের ক্ষেত্রে প্রতি মেগাহার্টজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় তিন কোটি মার্কিন ডলার বা ২৩২ কোটি টাকা। ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজের ক্ষেত্রে প্রতি মেগাহার্টজের মূল্য ২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। জিএসএম বা টুজির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অপারেটররা ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ ও থ্রিজি নেটওয়ার্কের জন্য ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করে। টুজির ১০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ও থ্রিজির জন্য ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ এ নিলামে বিক্রি হওয়ার কথা। নির্ধারিত মূল্যে যদি এ তরঙ্গ বিক্রি হয়, তাহলে সরকারের রাজস্ব আসবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু নীতিমালা তৈরির পর এক মার্চ দেশের শীর্ষ চারটি মোবাইল কোম্পানির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরকারকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধান না করা হলে ৩০ এপ্রিলের তরঙ্গ নিলামে অংশ নেবে না। জানা গেছে, ওই চিঠিতে সই করেন গ্রামীণফোনের পক্ষে টেলিনরের প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপপ্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জন ফ্রেডরিক বাকসাস, রবির পক্ষে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ সিইও দাতো শ্রি জামালউদ্দিন ইব্রাহিম, বাংলালিংকের পক্ষে ভিম্পেলকমের সিইও জো লানডার, এয়ারটেল বাংলাদেশের পক্ষে ভারতী এয়ারটেলের চেয়ারম্যান সুনীল মিত্তাল। চিঠিতে বলা হয়, ২০১৩ সালে থ্রিজি তরঙ্গ নিলামের সময় সরকারের পক্ষে বিটিআরসি কয়েকটি সমস্যা সমাধানে অপারেটরদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সমস্যাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিমকার্ড প্রতিস্থাপন করসংক্রান্ত মামলার সমাধান, নিলামে বিক্রি হওয়া তরঙ্গমূল্যের ওপর ধার্য করা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার, বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইন সংস্কার, তরঙ্গ ব্যবহারে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, কর কাঠামোর সংস্কার ইত্যাদি। উল্লিখিত সমস্যাগুলোর একটিও এখন পর্যন্ত সমাধান করা হয়নি। তাই তরঙ্গ নিলামে অংশ নিয়ে নতুন করে বিনিয়োগে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। অপারেটরদের কাছ থেকে এমন চিঠি পাওয়ার পর বিটিআরসি তরঙ্গ নিলাম নিয়ে নীতিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে নীতিমালা সংশোধনও করা হয়। এর পরও অপারেটররা নিলামে অংশ নেবে কিনা তা নিয়ে সংশয় কাটেনি। ফলে বিটিআরসি নিলামের তারিখ বার বার পরিবর্তন করে যাচ্ছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, অপারেটরদের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার পর অনিশ্চিত হয়ে যায় তরঙ্গ নিলাম। গত এপ্রিল মাসে এ সমস্যা সমাধানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু সে বৈঠকেও বিষয়টির কোন সমাধান হয়নি।
×