ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিদের অগ্নিপরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৭ মার্চ ২০১৫

আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিদের অগ্নিপরীক্ষা

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে টানা হারের পরও অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক বলেছিলেন, শেষ আটে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে পাকিস্তানের। পুল ‘বি’ উন্মুক্ত। এরপর জিম্বাবুইয়ে ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে টানা দুই জয়ে ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। টিকিয়ে রাখে কোয়ার্টারের স্বপ্ন। পুল ‘বি’ উন্মুক্ত, তবে তিনটি করে জয় নিয়ে (ভারত-উইন্ডিজ ম্যাচের আগ পর্যন্ত) পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাস্তা প্রস্তুত। সুতরাং উন্মুক্ত দৌড়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ড (২টি করে জয়)। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজকের ম্যাচটি তাই পাকিস্তানের জন্য কঠিন পরীক্ষা। খেলা অকল্যান্ডে বলে আগ্রহটাও বেশি। বিশ্বকাপজুড়ে রান-বন্যা হলেও নিউজিল্যান্ডের এই ভেন্যু উপহার দেয় ভুতুড়ে লো-স্কোরিং ম্যাচ। এখানেই পুল ‘এ’-এর লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেড় শ’ রানের টার্গেট অতিক্রম করতে ৯ উইকেট হারাতে হয়েছিল কিউইদের, ব্রেন্ডন ম্যাককুলামরা জিতেছিল ১ উইকেটে! কন্ডিশনের বিচারে তাই লড়াইটা হবে পাকিস্তানের বোলিং বনাম দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটিংয়ের মধ্যে। দুটি জয়েই পাকিস্তানের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন দীর্ঘদেহী পেসার মোহাম্মদ ইরফান ও ওয়াহাব রিয়াজ, সোহেল খানও চমৎকার। বিপরীতে প্রোটিয়াদের ব্যাটিং কতটা ভয়ঙ্কর? এবি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলা, রাইলি রুশো, ডেভিড মিলার, জেপি ডুমিনি নামগুলোই তা বোঝানের জন্য যথেষ্ট! দক্ষিণ আফ্রিকা এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট দল। প্রোটিয়ারা প্রতিবারই ফেবারিট হিসেবে নামলেও বার বার নকআউটে অদ্ভুতুড়ে কারণে ছিটকে যায় তারা! যে কারণে বিশ্ব ক্রিকেটে দলটির নামই হয়ে গেছে ‘চোকার!’ বিশ্লেষকদের ধারণা ‘চোকার’ অপবাদ ঘুচিয়ে এবার দারুণ কিছু করে বসবে এবি ডি ভিলিয়ার্স বাহিনী। সেই সামর্থ্য তাদের রয়েছে। জিম্বাবুইয়েকে ৬২ রানে হারিয়ে মিশন শুরু করে তারা। তবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের কাছে ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে হেরে ভীষণভাবে সমালোচিত হয় ‘চোকার’রা! এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডকে তছনছ করে দিয়ে ফের সামর্থ্যরে স্বাক্ষর রাখে প্রোটিয়ারা। দুটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে নিয়ে তামাশা করে ডি ভিলিয়ার্স বাহিনী! ক্যারিবীয়দের রেকর্ড ২৫৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং তা-বে সিডনিতে সেদিন ৪০৮ রানের পাহাড়সম স্কোর গড়ে দলটি। এরপর উইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে দেয় ১৫১ রানে। মাত্র ৬৬ বলে ১৭ চার ও ৮ ছক্কায় অপরাজিত ১৬২ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস উপহার দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। আমলা (১৫৯)-ডুপ্লেসিস (১০৯) তা-বে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪১১ রানের পাহাড় গড়েন তাঁরা। এরপর আইরিশদের ২১০ রানে অলআউট করে তুলে নেন ২০১ রানের বড় জয়। নিজের শততম ম্যাচে ২ উইকেট শিকার করে সেদিন ফর্মে ফেরেন ডেল স্টেইন। আজকের ম্যাচ নিয়ে তারকা পেসার বলেন, “ভারতের কাছে হার এখন অতীত। শেষ দুটি ম্যাচে আমরা অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছি। দল হিসেবে এখন বেশ ভাল অবস্থায় রয়েছি, ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পাকিস্তানের বিপক্ষেও আমরা ‘অলআউট’ ক্রিকেট খেলব।” অন্যদিকে পাক অধিনায়ক মিসবাহ উল হক মরিয়া। তিনি বলে, ‘সতীর্থদের প্রত্যেকে জানেন এই ম্যাচে জয়ের গুরুত্ব কতটা। আগেই বলেছি, প্রথম দুটি ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর আমাদের জন্য প্রতিটি ম্যাচই এখন নক-আউট। জয় ভিন্ন গতি নেই। শেষ জিম্বাবুইয়ে ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা খুবই শক্তিশালী আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে।’ ভাল বলতে ব্যাটিংয়ে উন্নতির বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেন তিনি। ‘ব্যাটিংয়ে উন্নতির অনেক জায়গা রয়েছে। বিশেষ করে টপ-অর্ডারে একাধিক ব্যাটসম্যানকে দায়িত্ব নিয়ে বড় ইনিংস খেলতে হবে। আমিরাতের বিপক্ষে ৯৫ রান করে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছে ওপেনার আহমেদ শেহজাদ, এরপর হারিস সোহেলও ৭০ রান করেন। এটা ইতিবাচক। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ওয়ার্ল্ডক্লাস বোলিংয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি বা তার চেয়ে বড় ইনিংস খেলতে হবে। স্কোর বোর্ডে তিন শ’ বা তার বেশি রান জমা হলে বোলারদের জন্য কাজটা সহজ হবে। এমনিতে ইরফান, সোহেল ও রিয়াজকে নিয়ে আমাদের পেস আক্রমণ ভাল করছে। জয় ছাড়া আর কিছু ভাবছি না আমি।’ হারিস অবশ্য কিছুটা ইনজুরিতে আছেন, শেষ পর্যন্ত প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যান খেলতে না পারলে আরও একটি সুযোগ পেতে পারেন অভিজ্ঞ ইউনুস খান। ওপেনিংয়ে নাসির জামসেদের অবস্থা হতশ্রী! সুতরাং ব্যাটিং নিয়ে মিসবাহর কিছুটা দুশ্চিন্তা অনুমেয়। মাঠে অধিনায়কের চাওয়া বাস্তবায়ন হলে ভক্তরা খুশি হবেন, তবে ইতিহাস পাকিস্তানের বিপক্ষে। ১৯৯২, ১৯৯৬ ও ১৯৯৯Ñ বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত তিন বারের মোকাবেলায় তিনবারই প্রোটিয়াদের কাছে হারতে হয়েছিল পাকিদের। দলের বড় দুই নির্ভরযোগ্য পারফর্মার মিসবাহ ও শহীদ আফ্রিদি। আর ৭ রান করলেই ওয়ানডেতে ৫ হাজার রানের মাইলফলকে চড়বেন মিসবাহ।
×