ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থীরা

২০ দলের হরতালে পিছিয়ে গেল আজ সোমবারের এসএসসি ও সমমানের প্রথম দিনের পরীক্ষা। আজকের পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী শুক্রবার। ফলে ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবারের নির্ধারিত পরীক্ষাটিই প্রথম পরীক্ষা হিসেবে গুনতে হবে শিক্ষার্থীদের। গত কয়েকদিন যাবত সকল মহল থেকে আশা করা হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা করেননি। বরং তাঁদের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা যিনি এক সময় মন্ত্রী ছিলেন, শনিবার তিনি বলেছেন, কিসের পরীক্ষা, পরীক্ষা দিয়ে কি হবে? দায়িত্বশীলরা যখন এ ধরনের বক্তব্য দেন তখন বিস্মিত না হয়ে উপায় কি? শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘হরতাল-অবরোধের নামে যে অমানবিক কর্মকা- চলছে, তাতে এই হিংস্রতার মুখে আমরা শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দিতে পারি না। তাই হরতালের দিনের পরীক্ষা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেছেন। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেছেন, পরীক্ষার দিন হরতাল থাকলে ওই পরীক্ষার তারিখও পরিবর্তন করা হবে। যানবাহনে পেট্রোলবোমা, আগুন, রাস্তায় ককটেল হরতাল-অবরোধের এটি এখন নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র। এমনি এক পরিস্থিতে ১০টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে আজ থেকে সারাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এবারের এসএসসি পরীক্ষা। এটি এখনও গুরুত্বের বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা। এ ধরনের একটি পরীক্ষা নিরাপদ ও নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক সেটা সবার প্রত্যাশা। গত বছরও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বারবার পরীক্ষা পেছাতে হয়েছে। বন্ধের দিনেও পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটানো কোন দায়িত্বশীল দলের কাজ হতে পারে না। ২০ দলের হরতাল আহ্বান নির্দিষ্ট দিনের হলেও অবরোধ অনির্দিষ্টকালের। আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। এভাবে এসএসসি পরীক্ষা পিছাতে হলে এর প্রভাব পড়বে এইচএসসি পরীক্ষায়ও। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে গিয়ে পেছাতে হবে স্কুল-কলেজের সব ক্লাস পরীক্ষা। তার মানে শিক্ষাব্যবস্থায় এক ধরনের বিপর্যস্ততা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। শিক্ষা ক্ষেত্রের চলমান অগ্রগতি যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে হবে। এই জন্য দায়িত্বশীল হওয়া উচিত হরতাল-অবরোধ আহ্বানকারীদের। জাতীয় স্বার্থ এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে অন্তত পরীক্ষার দিনগুলোতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী না রাখা উচিত। কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষাকে বাঁচানো সবার দায়িত্ব। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বহু মতের রাজনৈতিক দল থাকবে, রাজনৈতিক দলাদলি থাকবে, বিরোধীপক্ষ কর্মসূচী নিয়ে রাস্তায় নামবে, এমনকি সংঘাতের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, পরীক্ষা পিছানোর মতো ঘটনা কোনভাবে কাম্য হতে পারে না। সমস্যাটা রাজনৈতিক, কিন্তু বিপর্যয়ে পড়েছে পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হলে শুধু পরীক্ষার্থী বা তার অভিভাবকই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, এতে ক্ষতি হবে শিক্ষাব্যবস্থার এবং সামগ্রিকভাবে দেশের। এমনিতেই সাম্প্রতিক সময়ের হরতাল-অবরোধে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ আর বাড়ানো দায়িত্বশীল কাজ নয়। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা কোন বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না।
×