ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু ॥ জুমায় মুসল্লির ঢল

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫

বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু ॥ জুমায় মুসল্লির ঢল

ফিরোজ মান্না, মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে ॥ টঙ্গীর তুরাগ তীরে চারদিন বিরতি দিয়ে শুক্রবার শুরু হয়েছে পবিত্র হজের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত তবলীগ জামাতের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। পথে পথে নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে মুসল্লিরা টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা স্থলে আসছেন। তবে বিএনপি জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালে ভাংচুর বা অগ্নিসংযোগের আশঙ্কায় অসংখ্য মুসল্লি এজতেমায় আসেননি বলে বেশ কয়েক মুসল্লি জানিয়েছেন। দ্বিতীয় পর্বের এজতেমায় আগত কয়েক মুসল্লি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জমায়েত টঙ্গীর এ বিশ্ব এজতেমাকে সামনে রেখে বিএনপি জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা দেন। বিশ্ব এজতেমার মুরুব্বিগণ এজতেমা উপলক্ষে এ কর্মসূচী প্রত্যাহারের জন্য তাকে বার বার অনুরোধ করলেও বেগম খালেদা জিয়া সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে মুরুব্বিদের ফিরিয়ে দিয়ে অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত রাখেন। এ যেন ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ঘোষণা। ইসলাম ধর্ম প্রচারে বাধা দেয়ার জন্য যেভাবে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স)-এর চলাচলের পথে কাঁটা দেয়া হয়েছিল, সেরকমই অবরোধ আর হরতাল দিয়ে এবং গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিএনপি জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা এজতেমাকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একগুঁয়েমি কর্মসূচীর কারণে এবারের প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বের এজতেমায়ও মুসল্লিদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক অনেক কম। আর যেসব ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টঙ্গীর এজতেমাস্থলে এসেছেন, যানবাহনের অভাবে তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ইতোমধ্যে অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণ ও মুসুল্লিদের আগমনে টঙ্গীর এজতেমাস্থল এবং আশপাশের এলাকা এখন মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠলেও মাঠের একটি বিশাল অংশ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ছিল ফাঁকা। শিল্প নগরী টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা জামাতভুক্ত হয়ে এখনও এজতেমাস্থলের দিকে ছুটে আসছেন। বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বে পুরো ময়দানকে ৩৯টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এতে দেশের ৩৪টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। এদিকে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো বিশ্ব এজতেমা ময়দান। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যাতে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমাস্থলে স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপদে পৌঁছতে পারেন সেজন্যও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাজীপুরে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার বাদ ফজর তবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ভারতের মাওলানা ইসমাইল হোসেন গোদরা’র আ’মবয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব এজতেমার ২য় পর্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। মূলমঞ্চ থেকে উর্দু ভাষায় দেয়া তার এই বয়ান। একই সঙ্গে বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নেন। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষকসহ এজতেমায় আসা আরও ৩ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে আজ (শনিবার) অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে এবারের প্রথম পর্বে আগত অপর ১১ মুসল্লি মারা যান। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব এজতেমা। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত তবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিরা পর্যায়ক্রমে আখলাক, ঈমান ও আমলের উপর বয়ান পেশ করবেন। বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত ॥ বিশ্ব এজতেমার শুরুর দিন জুমা বার হওয়ায় এজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহত্তম জুমার জামাত। দুপুর একটা ৪১ মিনিটে ওই নামাজ শুরু হয়। ওই জামাতে ইমামতি করেন (কাকরাইল মসজিদের ইমাম) হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের। এজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি এজতেমাস্থলে হাজির হন। ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে এজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২টার দিকে এজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সবস্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন। এবারের এজতেমার প্রথম পর্বের তুলনায় ২য় পর্বের জুমায় বেশিসংখ্যক মুসল্লি শরিক হয়েছেন। ময়দান ছাড়িয়ে রাস্তায় জুমার নামাজ আদায় ॥ জুমার নামাজ আদায় করতে রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ছুটে আসেন। এজতেমার মাঠ উপচিয়ে জামাত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পাশ ঘেঁষে এজতেমা মাঠের উত্তর দিকের রাস্তায়ও জামাত দাঁড়ায়। মূল প্যান্ডেলে জায়গা না পেয়ে অগণিত মুসল্লিকে রাস্তায় কিংবা মহাসড়ক ও খোলা জায়গার উপর খবরের কাগজ, জায়নামাজ, পলিথিন ও হোগলা বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। বেলা ১টা ৪১ মিনিটে অনুষ্ঠিত বৃহত্তম এ জুমার নামাজের ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের। এবার বিশ্ব এজতেমার মূল মঞ্চের বাইরে তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে বিশেষভাবে স্থাপিত মঞ্চ থেকে জুমার নামাজের ইমামতি করা হয়। বাদ ফজর হতে মাগরিব পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ ঈমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত সম্পর্কে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সারগর্ভ বয়ান করেন। দ্বিতীয় দফার প্রথম দিনে যারা বয়ান করেন ॥ দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ইসমাইল হোসেন গোদরা বয়ান করেন। তার বয়ান বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা নুরুর রহমান। বাদ জুমা থেকে এজতেমার অন্য মুরুব্বিগণ পর্যায়ক্রমে বয়ান করেন। বিভিন্ন ভাষায় বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ ॥ বিশ্ব এজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তবলীগ মারকাজের ১৫-২০ জন শূরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসী ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বি মূল বয়ান তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান। মুসল্লির মৃত্যু ॥ বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৩ জন মুসল্লি মারা গেছেন। বিশ্ব এজতেমার মাসলেহাল (লাশের) জামাতের জিম্মাদার আদম আলী জানান, শুক্রবার ভোররাত ৩টার দিকে পটুয়াখালী জেলার মুসল্লি বিল্লাল হোসেন (৩৫) টয়লেটে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় টঙ্গী হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অপর দু’মুসল্লি মারা গেছেন। বিশ্ব এজতেমার কর্মসূচী ॥ বিশ্ব এজতেমার কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরান, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানো, নতুন জামাত তৈরি, যৌতুকবিহীন বিয়ে। আখেরি মোনাজাত রবিবার সকালে ॥ বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। এজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি মোঃ গিয়াসউদ্দিন জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাধারণত প্রতি বছর বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে যোহর নামাজের আগে এই আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু মুসল্লিদের ভোগান্তি কমাতে পরামর্শ করে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে মোনাজাত শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানান। নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে ডিআইজি ॥ ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান শুক্রবার দুপুরে এজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন।
×