ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সড়ক, নৌ ও বিমান পথে বিড়ম্বনা ॥ যাত্রীদের দুর্ভোগ

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, কুয়াশার দাপটে সূর্যের দেখা মেলেনি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, কুয়াশার দাপটে সূর্যের দেখা মেলেনি

নিখিল মানখিন ॥ সারাদেশেই চলছে কুয়াশার দাপট। গত কয়েকদিন ধরে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে ঘন কুয়াশা। সূর্যের আলোর দেখা নেই। চরম দুর্ভোগে পড়েছে দেশবাসী। ব্যাহত হচ্ছে জল, স্থল ও আকাশপথে যান চলাচল। বৃহস্পতিবার ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় শতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চ এবং সড়কপথে কয়েকশ’ যানবাহন আটকা পড়ে। এতে হাজার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়ে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী ৯টি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি। ঢাকায় অবতরণ করতে না পেরে দুটি বিমান চট্টগ্রামে জরুরী অবতরণ করতে বাধ্য হয়। আর ঢাকামুখী আরও তিনটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সময়সূচীতেও পরিবর্তন আনতে হয়েছে। কুয়াশার পাশাপাশি বৃহস্পতিবারও সারাদেশে অনুভূত হয় তীব্র শীত। শীত ও শীতজনিত কারণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কুয়াশার দাপটে সারাদেশে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেশ কমে এসেছে। দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। সড়কে গাড়ি চলাচলও হচ্ছে বিঘিœত। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। ঘন কুয়াশায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ধরে বন্ধ থাকে মাওয়া-কাওড়াকান্দিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ফেরি চলাচল। ঘাটগুলোর দুই পাশে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন, সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশার কারণে কয়েক গজ সামনে কী আছে তাও স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি। কর্মমুখী মানুষকে পোহাতে হচ্ছে বাড়তি ভোগান্তি। তবে কাজের সন্ধানে একটু দেরিতে হলেও বের হয়েছেন দিনমজুররা। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে কেনাবেচাও শুরু হয় বেশ খানিকটা দেরি করেই। কাঁচাবাজারগুলোতে সাধারণত সকাল ৭টার মধ্যেই যেখানে দোকানপাট খোলা হয়ে যায়, সেখানে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় কাঁচাবাজারগুলোতে অনেক দোকানই ছিল বন্ধ। কুয়াশা বেশি থাকায় চাদর, মাফলার, টুপিসহ শীতের পোশাকে ঢেকে বেরুতে দেখা গেছে সব শ্রেণীর মানুষকে। টানা এক সপ্তাহ ধরেই চলছে ঘন কুয়াশাজনিত কারণে সিডিউল বিপর্যয়। বৃহস্পতিবারও বেশ কয়েকটি ফ্লাইট সময়মতো ওঠানামা করতে পারেনি। সব ফ্লাইটের সিডিউল গড়পড়তায় তিন ঘণ্টা পেছানোর পরও পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ৯টি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে অবতরণ করতে পারেনি। স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, ঘন কুয়াশার কারণে বৃহস্পতিবার ফ্লাইটের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ঢাকায় অবতরণ করতে না পেরে দুটি বিমান চট্টগ্রামে জরুরী অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছে। আর ঢাকামুখী আরও তিনটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, ঘন কুয়াশা থাকায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান অবতরণে সমস্যা হচ্ছে বিধায় বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে দুটি বিমান চট্টগ্রামে অবতরণ করে। নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর থেকে জানান, চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ও সড়ক পথে ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে প্রায় শতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চ ও সড়ক পথে যাতায়াতকারী যানবাহন আটকা পড়েছে। এতে হাজার হাজার যাত্রী সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে। গত কয়েকদিন ঘন কুয়াশা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুধু যানবাহনই নয়, সকাল বেলা শ্রমজীবী মানুষগুলোও কাজে নামতে পারছে না। স্টাফ রিপোর্টার ঈশ্বরদী থেকে জানান, শৈত্যপ্রবাহ ও হাড় কাঁপানো শীতে বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সকাল থেকে ঈশ্বরদী, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, আটঘরিয়া, লালপুর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রামসহ নিকটস্থ জেলাগুলোর কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সকাল থেকেই শহর ও গ্রাম অঞ্চলের হাটবাজার ও রাস্তাঘাটে লোক চলাচল কম ছিল। নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, গত চার দিন থেকেই গাইবান্ধা জেলার সর্বত্রই তীব্র শীত অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার কনকনে ঠা-া বাতাস ও ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কৃষকরা প্রবল ঠা-ায় মাঠে নামতে পারছে না। দিনভর সূর্যের আলো দেখা যায়নি। অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা বিরাজ করছে। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে প্রকৃতি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট থেকে জানান, জয়পুরহাটের জনজীবন জবুথবু হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দিনভর রোদের মুখ দেখা যায়নি। শীতে জয়পুরহাটের তাপমাত্রা সাড়ে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। লক্ষাধিক দিনমজুর শীতের কারণে কাজে যেতে পারছে না। রোদ না থাকায় ধানের চাতালগুলো বন্ধ হয়ে আছে। গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে শীতের কারণে ক্রেতারা বের হতে না পারায় বেচা বিক্রি কম হচ্ছে। স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, উত্তরের ভারত সীমান্ত জেলা নীলফামারী ও পঞ্চগড়ের খুব কাছে দার্জিলিং এ তুষারপাতসহ বরফ পড়ায় উত্তরী হিমবায়ু এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার এ অঞ্চলের তুষারপাতের মতো দিনভর ঝরেছে কুয়াশা। অন্ধকার নেমে আসে চারদিক। সূর্যের মুখ দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশার কারণে বুধবার রাতে ঢাকা থেকে উত্তরের জেলাগুলোতে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাসগুলো বৃহস্পতিবার দুপুরে এসে পৌঁচ্ছে। বৃহস্পতিবার রংপুর দিনাজপুরের আট জেলার কোটি মানুষ শীতের দাপটে থরথর করে কেঁপেছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের জনজীবন। বৃহস্পতিবার সারাদিন এখানে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। এতে বেড়েছে শীত ও শীতজনিত রোগ। গত ৪৮ ঘণ্টায় ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৫ শতাধিক ঠা-াজনিত শিশু রোগী। রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার নার্সদের। নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ থেকে জানান, গত দু’দিন ধরে নওগাঁ অঞ্চলে তীব্র শীত পড়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে বৃষ্টির মতো শিশিরপাত ঘটেছে। নওগাঁ অঞ্চলে সূর্যের দেখা মেলেনি। কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল এখানকার আকাশ। তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় প্রচ- শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের তীব্রতায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে প্রাণীকুলও। খেটে খাওয়া মানুষদের দুর্ভোগের সীমা নেই। নিজস্ব সংবাদদাতা, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা থেকে জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদায় ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত দু’দিন ধরে তীব্র শীত অব্যাহত রয়েছে। সন্ধ্যা নামতেই ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি। ঘন কুয়াশার সাদা চাদরে ঢাকা পড়ছে পুরো এলাকা।
×