
নরসিংদীতে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। গত শনিবার রাতে নরসিংদী শহরের দত্তপাড়া পুরাতন লঞ্চঘাট এলাকায় স্বামী শংকর চন্দ্র দাসের বাড়িতে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। প্রায় ৭ বছর পূর্বে হিন্দু ধর্মীয় মতে শহরের ঘোড়াদিয়া-সংগীতা এলাকার জন্টু চন্দ্র দাসের মেয়ে স্মৃতি রাণী দাস (৪৫)-এর সাথে বিবাহ হয় শহরের দত্তপাড়া এলাকার যোগেশ চন্দ্র দাসের ছেলে শংকর চন্দ্র দাসের।
বিবাহের সময় যৌতুক হিসেবে শংকরকে নগদ সাড়ে তিন লক্ষ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রদান করে কনে পক্ষ। এরপরও শংকর প্রায়ই তার স্ত্রীকে বাপের বাড়ি থেকে আরও টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্মৃতির পরিবার প্রায় সময়ই তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আসছিল। এতেও তার মন ওঠতো না। এক পর্যায়ে তাকে আরও দুই লক্ষ টাকা বাপের বাড়ি থেকে এনে দেওয়ার জন্য তার উপর চাপ প্রয়োগ করে। এতে স্ত্রী স্মৃতি রাণী দাস তার বাপের বাড়ি থেকে আর কোনো টাকা এনে দিতে পারবেন না বলে জানালে তার উপর স্বামী শংকর চন্দ্র দাস অমানবিক নির্যাতন চালায়।
স্বামীর এ নির্যাতনের কথা স্মৃতি রাণী তার মাকে মোবাইল ফোনে জানালে তিনি তার মেয়ের জামাই শংকরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে বার বার ফোন দিলেও শংকর চন্দ্র দাস ফোন রিসিভ করেননি। শনিবার রাতে শংকর তার স্ত্রীকে ব্যাপক মারধর করলে এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় বাড়ির লোকজন স্মৃতি রাণীকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর শংকর রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ফোন দিয়ে তার শাশুড়িকে জানান, "আপনার মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে।"
এ খবর পেয়ে স্মৃতি রাণী দাসের পরিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তাদের মেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় স্বামী শংকর চন্দ্র দাস হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে স্মৃতি রানীর পক্ষের লোকেরা আটক করে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ তাকে রাতেই থানায় নিয়ে যায়।
গতকাল রবিবার নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর স্মৃতি রাণী দাসের মরদেহ তার আত্মীয়-স্বজনের নিকট প্রদান করা হয়েছে।এ ব্যাপারে নরসিংদী মডেল থানার এসআই রোমান সাদেকিন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী শংকর চন্দ্র দাসকে আটক করা হয়েছে। থানায় মামলা দায়ের করার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আফরোজা