ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি ও সাড়াদান বিষয়ক মহড়ায় বক্তারা 

 বন্যা এখন আর শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিফলন 

সুদীপ্ত শামীম, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ২০:০৮, ২৯ জুন ২০২৫

 বন্যা এখন আর শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিফলন 

'বন্যা এখন আর কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব প্রতিফলন'- এমন মন্তব্য করেছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অনুষ্ঠিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যা সতর্কীকরণ বার্তা প্রচার, বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি ও সাড়াদান বিষয়ক মহড়ায় অংশ নেওয়া বক্তারা।

তাদের মতে, আগে থেকেই প্রস্তুতি না নিলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে। তাই স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে, প্রশিক্ষিত করতে হবে এবং দুর্যোগের আগেই প্রস্তুতির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ঝুঁকি কমাতে হলে সচেতনতাই হতে হবে প্রধান হাতিয়ার।

রোববার (২৯ জুন) বিকেলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা এমসি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বেলকা ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে মহড়ার আয়োজন করা হয়। এটি বাস্তবায়ন করে গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) জুরিখ ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের আওতায় এবং সহযোগিতায় ছিল কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড।

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে।

জুরিখ প্রজেক্টের প্রজেক্ট অফিসার মো. রবিউল হাসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বেলকা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবীব সরকার খোকন, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী খোকন রানা, জিইউকের সমন্বয়কারী অখিল চন্দ্র বর্মন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন এবং প্রজেক্ট ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম।

বক্তারা বলেন, এই ধরনের মহড়া কেবল একটি প্রদর্শনী নয়, এটি দুর্যোগ মোকাবেলায় জনসচেতনতা গড়ে তোলে এবং জনগণের প্রস্তুতি সক্ষমতা বাড়ায়। ইউনিয়ন পর্যায়ে এমন আয়োজন দুর্যোগকালীন সাড়া দেওয়ার বাস্তব অনুশীলন হিসেবে কাজ করে। এতে কমিউনিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব হয়।

তারা আরও বলেন, বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় শুধু প্রস্তুতি নয়, সচেতনতা তৈরি করাও জরুরি। দুর্যোগের সময় দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য কমিউনিটিকে সবসময় প্রস্তুত রাখা দরকার। প্রত্যেককে নিজ দায়িত্ব বুঝে কাজ করতে হবে এবং সকল স্তরের মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

তাদের মতে, শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় নেতৃত্বকে যুক্ত করলে দুর্যোগ মোকাবেলায় সামগ্রিক সক্ষমতা বহুগুণে বাড়ে। পাশাপাশি স্কুল পর্যায়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, স্থানীয় পুনর্বাসন পরিকল্পনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের ওপরও তারা গুরুত্বারোপ করেন।

‘বন্যা আসার আগে প্রস্তুত হই, ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে নিরাপদ থাকি’- এই স্লোগানে মুখর ছিল পুরো আয়োজন। মহড়ায় অংশ নেন ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক দল, কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স অ্যাকশন গ্রুপ (ক্রাগ) সদস্য এবং সাধারণ জনগণ। তারা বাস্তব পরিস্থিতির মতো করেই আশ্রয়কেন্দ্রে যাতায়াত, উদ্ধার কাজ, প্রাথমিক চিকিৎসা ও নিরাপত্তা অনুশীলনে অংশ নেন।

আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই মহড়ার মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝে দুর্যোগ বিষয়ে বাস্তবধর্মী ধারণা সৃষ্টি হয়েছে এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ মহড়াটিকে আরও বাস্তবভিত্তিক, জনগণকেন্দ্রিক ও কার্যকর করে তুলেছে। স্থানীয় পর্যায়ে এমন অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বড় ভূমিকা রাখবে বলেও তারা আশাবাদ প্রকাশ করেন।

Jahan

×