
সদর উপজেলার চিতলিয়া টু আংগারিয়া খালের পলি অপসারণ করায় খালে পানি প্রবাহ সচল হয়েছে। ফলে ইরি-বোরো ধান চাষাবাদসহ মৌসুমী ফসল চাষাবাদে সফলতা পাচ্ছে কৃষকরা।
কৃষি নির্ভর জেলা শরীয়তপুর। জেলার ৬টি উপজেলার অধিকাংশ আবাদী জমি কৃষকদের চাষাবাদের জন্য জোয়ার ভাটার পানির উপর নির্ভরশীল। কিন্ত জেলার অধিকাংশ খাল দখল ও পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় খালে পানি প্রবাহ বন্ধ ছিল। ফলে ব্যহত হচ্ছিল চাষাবাদ। বিশেষ করে জেলার প্রধান কৃষি ফসল ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষকরা তাদের জমিতে পানি সেচ দিতে হিমশিম খেতো। পানি সেচের অভাবে ফসলী জমি থাকতো পতিত অবস্থায়।
এছাড়া পুনঃখননের অভাবে খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে খালের দু’পাশের শত শত একর ফসলী জমি অনাবাদী থেকে যেত। আর বর্ষা মৌসুমে গ্রামের কাচা রাস্তাগুলো ডুবে থাকত পানিতে। কিন্তু বর্তমান সরকার খাল পুনঃখননের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় এর বিশাল সফলতা এসেছে শরীয়তপুরে।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলা এলজিইডি’র উদ্যোগে জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ২০টি কিলোমিটার খাল পুনঃখনন ও পলি অপসারণ করেছে। ফলে শত শত হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়া খালগুলো পুনঃখনন করায় এর সুফল পাচ্ছে কৃষকরা। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা অনাবাদী জমিতে ধানসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসল চাষাবাদ করতে পাড়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
জেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এলজিইডির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের আওতায় শরীয়তপুর জেলার ১১ টি খালের ২০ কি.মি. পলি অপসারণের ফলে প্রায় ১ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমি, প্রাক বর্ষা ও বর্ষা মৌসুমে আগাম বন্যা ও বর্ষা পরবর্তী বন্যার হাত থেকে বিভন্ন ফসল রক্ষা পাবে। শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের জন্য কৃষকরা পর্যাপ্ত পানি পাবে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পরিমাণ কমবে।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুনঃখননকৃত খালগুলোর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার চিতলিয়া খাল, মোল্লা বাড়ি খাল, রহমান চৌকিদার বাড়ি খাল, দামড়া খাল, নড়িয়ার জপশা খাল ও গোসাইরহাটের কুচাইপট্টি খাল ইত্যাদি। এসব খালের পলি অপসারণের ফলে বোরো ধানের পুনরায় চাষাবাদ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। রবি ফসলের ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হবে, বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষ, এক ফসলীয় জমিকে বহু ফসলীয় জমিতে রুপান্তরিত করা সম্ভব হচ্ছে। ফসলের নিবিরতা বৃদ্ধি, পতিত জমির পরিমাণ কমছে, কৃষকের আয় বৃদ্ধি, কৃষি শ্রমিকের সারা বছরই কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকাবাসীর কৃষি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হচ্ছে। পলি অপসারণের ফলে সারা বছর খালগুলোতে পানি থাকায় প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে মৎসজীবীরা অধিক মাছ ধরতে পারছে, যা দিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রকল্প এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। জোয়ার ভাটার পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবর্জনা ও পলিমাটি ভরাট হয়ে অস্তিত্ব বিলীন হতে বসেছিল জেলার অধিকাংশ খাল। কিন্তু নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে শুকনো মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৮শ’ হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমিতে খননকৃত খালের পানি সেচ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেচ সুবিধার মাধ্যমে জেলার কৃষি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা পেয়েছে। সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের আনোয়ার মাল, সিরাজ, করিম মাল, শেখ আলাউদ্দিন, হারুন অর রশিদ, ছবর আলী, আব্দুল জব্বারসহ অনেক কৃষক জানান, সদর উপজেলার টেকের হাট থেকে আংগারিয়া পযর্ন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩ কিলোমিটার এবং একই উপজেলার সমিতির হাট থেকে আংগারিয়া নদী পযর্ন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার খালের পুনঃখননের ফলে এসব এলাকার কৃষক চাষাবাদে ব্যাপক উপকৃত হচ্ছে। এ খালগুলো কাটার পর কখনও পুনঃখনন করা হয়নি। ফলে খরস্রোতা খালটি দুইপাশের মাটি জমে মরা খালে পরিণিত হয়েছিল। খালগুলোর নাব্যতা সংকটের কারণে পানির অভাবে খালের পাশে শত শত হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন পরে হলেও বর্তমান সরকারের মহতী উদ্যোগে খালটি পুনঃখননের ফলে পানির প্রবাহ শুরু হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখেও হাসি ফুটছে। খাল খননের ফলে এই এলাকার চাষিদের ধান চাষে আর পানির সমস্যা থাকবে না। খাল পাড়ে জমির মালিকরা শিম, লাউ সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন। এই খালটি পুনঃখননে মাধ্যমে পাল্টে গেছে পুরো এলাকার চিত্র।
শরীয়তপুর জেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। তাই সরকার দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সেচ কাজের জন্য খালগুলো পুনঃখনন কাজ শুরু করেছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যেই খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে থাকা খালগুলো পুনঃখনন করায় খালের আশে-পাশের অনেক অনাবাদী জমিতে আবাধ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা চাষাবাদের ক্ষেত্রে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা দেখাচ্ছে।
শিহাব