
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবড়ুনা ইউনিয়নের একটি গ্রাম হারিয়াকোনা। ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই গ্রামটি স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও রয়ে গেছে উন্নয়ন বঞ্চিত। পাকা রাস্তা ও সেতুর অভাবে এলাকাবাসীকে বছরের পর বছর নানা কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরের দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় হারিয়াকোনায়। চারপাশে ছোট নদী, ঝর্ণা আর পাহাড় ঘেরা এই জনপদে যাতায়াত এক বড় চ্যালেঞ্জ। বাবেলাকোনা থেকে হারিয়াকোনায় যেতে দুটি নদী পার হতে হয়, কিন্তু কোনো পাকা সেতু নেই। স্থানীয়রা নিজ খরচে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে একটি সাঁকো তৈরি করলেও তা বর্ষায় ভেঙে পড়ে যায়। তারপরও এই ভাঙা সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
হারিয়াকোনা গ্রামে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি চাষ হয়। কৃষকেরা জানান, বরবটি, করলা, বেগুন, শিম, লাউসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করলেও রাস্তা ও সেতুর অভাবে সময়মতো বাজারে নিতে পারেন না। ফলে সবজি নষ্ট হয়, লোকসানে পড়তে হয়। কেউ কেউ মোটরসাইকেলের দুই পাশে সবজি বেঁধে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হন।
স্থানীয় আদিবাসী নারী গ্রিটিস মারাক বলেন, আমার বোনজামাই এক রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু সেতু ও রাস্তার অভাবে তাকে হাসপাতালে নিতে পারিনি। পথে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনা মনে করে তিনি কেঁদে ফেলেন।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা ফুনেস মারাক বলেন, “আমরা বহুবার জনপ্রতিনিধিদের বলেছি, সবাই শুধু আশ্বাস দিয়েছে, কেউ কাজ করেনি।
গৃহবধূ দীনা রানী চিরান বলেন, আমরা চাষ করে ন্যায্যমূল্য পাই না। বেশি বৃষ্টিপাত হলে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। গর্ভবতী নারী অসুস্থ হলে বাঁশের মাচায় বসিয়ে কাঁধে করে চার কিলোমিটার হেঁটে হাসপাতালে নিতে হয়।
বাবেলাকোনা গ্রামের খোকন মারাক বলেন, এই রাস্তায় প্রতিদিন ৬-৭ হাজার মানুষ চলাচল করেন। অনেক পাইকার আসেন সবজি কিনতে, কিন্তু রাস্তার দোহাই দিয়ে অল্প দামে সবজি কিনে নিয়ে যান। এতে কৃষকেরা প্রতিদিন ক্ষতির মুখে পড়েন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের, শ্রীবরদী উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, হারিয়াকোনা গ্রাম অবহেলিত, এই বিষয়ে আমরা অবগত আছি। খুব দ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব, যেন গ্রামটিকে উন্নয়নের আওতায় আনা যায়।
নোভা