ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

প্রেমের মোহে ঝরে গেল প্রাণ, উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও প্রশাসন

সোহাইল আহমেদ, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ২৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:৫৬, ২৩ জুন ২০২৫

প্রেমের মোহে ঝরে গেল প্রাণ, উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও প্রশাসন

ছ‌বি: প্রতীকী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে প্রেমের কারণে দুই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা এলাকাজুড়ে দুঃখ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনায় অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রশাসন সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

আগে স্কুলে যাওয়া মানেই ছিল পড়ালেখার কথা ভাবা। এখন অনেক ছাত্রছাত্রী সেই পথেই হারিয়ে ফেলছে তাদের জীবনের লক্ষ্য।

সম্প্রতি প্রেমের কারণে দুই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এতে দুইটি পরিবার ভেঙে পড়েছে। শুধু দুটি প্রাণ নয়, দুই পরিবারের সব স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেছে।

শুধু এই দুটি ঘটনা নয়। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা প্রেমে পড়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে। বাড়িতে অশান্তি হচ্ছে। আত্মীয়দের সম্মানও নষ্ট হচ্ছে।

প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয় ফেসবুক আর ফোনে কথা দিয়ে। এরপর দেখা-সাক্ষাৎ। কিছুদিন পর সম্পর্ক ভেঙে যায়। অনেকেই তা মেনে নিতে পারে না। কেউ কেউ আত্মহত্যা করে।

বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, এই বয়সের ছেলে-মেয়েরা যা করে, সেটা প্রেম নয়। এটা একধরনের মোহ। এই মোহে তারা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি বলেন, আমি নিজে অনেক ঘটনা দেখেছি যেখানে প্রেমের কারণে পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে। একটি ব্যর্থ প্রেম একজন মা-বাবার জীবন দুর্বিষহ করে দেয়।

তিনি আরও বলেন, সামাজিক মাধ্যম ও প্রযুক্তির অপব্যবহার, সঙ্গে অভিভাবকদের অসচেতনতা মিলে তরুণদের বিপদে ফেলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, আমরা যেমন আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখি, তেমনি আমাদের সেই স্বপ্ন রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।

তিনি বলেন, এখনকার তরুণরা আবেগের বশে ভুল করে ফেলছে। এর ফলে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। এটা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এখন এটা বড় সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই সমস্যা থেকে বের হতে হলে পরিবার, স্কুল এবং সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

প্রথমত, অভিভাবকদের উচিত সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো। তার কথা মন দিয়ে শোনা। কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে, কী নিয়ে ভাবে—এসব জানার চেষ্টা করা।

দ্বিতীয়ত, স্কুলে শুধু বইয়ের পড়া না শিখিয়ে নৈতিক শিক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করা দরকার।

তিনি জানান, খুব শিগগিরই বাঞ্ছারামপুরের প্রতিটি স্কুলে কাউন্সেলিং ক্যাম্পেইন চালু হবে। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরামর্শদাতারা কথা বলবেন।

তৃতীয়ত, সমাজকে সচেতন হতে হবে। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে তরুণরা ভুল পথ ছেড়ে সঠিক পথে চলবে।

সবাই মিলে চেষ্টা করলে অনেক সম্ভাবনাময় জীবনকে রক্ষা করা সম্ভব। সময় থাকতেই সচেতন হওয়া দরকার। নয়তো একটি ভুলের কারণে অনেক তরুণ জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে।

এম.কে.

×