ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর। 

প্রকাশিত: ১৮:২২, ১০ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। এটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এটা নিয়ন্ত্রণের ভেতরে আনতে পারলে দেশ অনেক এগিয়ে যেত। এ জন্য তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান। এসময় তিনি বলেন, পুলিশের কেউ মামলা বাণিজ্যে বা দুর্নীতির সাথে জড়িত হয় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন পদমর্যাদার ৩০-৪০ জনকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। আরো ৮৪ জনকে সংযুক্ত করে রেখেছি। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির সাথে জড়িত প্রমাণ হলে তাদেরও বাড়ি পাঠাতে একটুও কুণ্ঠিত হবো না। 

মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পুলিশ বাহিনীর সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগে থানায় মামলা ও জিডি নিতে অনীহা থাকায় আমরা একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মামলার আবেদন ও জিডি অনলাইনে করার সুযোগ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেটে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই তা চালু করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনি সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দেশের সকল থানার মামলাগুলো অনলাইন ভিত্তিক করা হচ্ছে। এতে মামলা করার জন্য এখন সাধারণ মানুষকে আর থানায় যেতে হবে না, হয়রানিও পোহাতে হবে না।

তিনি আরও জানান, রিমান্ডে নেওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানার ভেতরে কাঁচের ঘেরা কক্ষ নির্মাণ করে দেয়া হবে, যাতে অন্যরাও দেখতে পারে আসামিদের সাথে কোনো অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে কিনা। মামলা বানিজ্য বন্ধ করার জন্য অনলাইনে করা হচ্ছে। মামলা বাণিজ্যে, দুর্নীতির সাথে জড়িত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। মিথ্যা সংবাদ হয়, তাহলে দুর্নীতি যারা করে তারা যেমন সুবিধা পায়, পাশ্ববর্তী দেশও তেমন সুবিধা পায়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণহত্যায় মামলার আসামির সংখ্যা বেশি হওয়ায় তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে সময় লাগছে। আগে ১৫-২০ জনের নাম উল্লেখ করে অসংখ্য অজ্ঞাতদেরকে আসামী করে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দিত। এবারের জুলাই গণহত্যা ও আহতের মামলাগুলোর বাদী জনগণ। এখন তাদের দেয়া মামলার আসামি অনেক বেশি। বেশি নাম থাকায় তদন্তে বিঘ্ন ঘটছে। বাদিরা দুই থেকে ২৫০ নাম দিচ্ছে এজন্য তদন্তে দেরি হচ্ছে। অনেক মামলায় যেমন দোষী লোকজন আছে, তেমনি মোটামুটি নির্দোষ অনেক মানুষও রয়েছে বা থাকতে পারে। এজন্য কে দোষী আর কে নির্দোষ, তা বের করে দোষীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসবো। যারা নির্দোষ তারা যাতে কোনমতে সাজা না পায় সে ব্যবস্থা করা হবে।

এসময় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান, উপ-পুলিশ কমিশনার অতিরিক্ত কমিশনার রবিউল ইসলাম ও এন এম নাসিরুদ্দিন, গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদসহ গাজীপুর মেট্রোপলিটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে তিনি কোনাবাড়ি থানা এবং কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার পরিদর্শন করেন। তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার কমপ্লেক্সে পৌঁছে কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন। এরপর কারারক্ষীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং তাদের পেশাগত জীবন, কাজের পরিবেশ ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। কারো কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ের কথাও বলেন তিনি, যা উপস্থিতদের মধ্যে আন্তরিকতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। তিনি কারাগারে বন্দীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং তাদের কোন সমস্যা আছে কি-না সেই বিষয়ে খোঁজ খবর নেন।

কারাগার প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কারাগার শুধু শাস্তির স্থান নয়, এটি সংশোধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। যেসব বন্দি সাজাপ্রাপ্ত, তাদের আমরা সম্পূর্ণ অকার্যকর করে রাখতে চাই না। তাদেরকে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমুখী করে গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা মুক্তি পেয়ে সমাজে একজন স্বনির্ভর ও উপযোগী মানুষ হিসেবে জীবন শুরু করতে পারে। এতে যেমন অপরাধ পুনরাবৃত্তির হার কমবে, তেমনি তারা হয়ে উঠবে দেশের সম্পদ।

তিনি আরও বলেন, কারাবন্দিদের জীবন মানোন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে কারাগারভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও মানসিক পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেছে। এ কার্যক্রম আরও বিস্তৃত ও যুগোপযোগী করা হবে।

রিফাত

×