ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আকস্মিক বর্ষায় তলিয়ে যায় কৃষকের পাকা ধান

নিজস্ব সংবাদদাতা,ভাঙ্গুড়া,পাবনা

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ১০ জুন ২০২৫

আকস্মিক বর্ষায় তলিয়ে যায় কৃষকের পাকা ধান

ভাঙ্গুড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠে পাকা ইরি ধান আকস্মিক বর্ষা ও ঢলের পানিতে ডুবে গেছে। এ অঞ্চলের কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এলাকাবাসী জানান।

সরজমিন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও স্কীম মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিনিধিকে জানান, তাদের সারা বছরের পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে এবং মহাজনের ঋণের টাকা সহ স্কীম মালিকদের ক্ষতিগ্রস্ত টাকা-পয়সা দেওয়ার মতো শক্তি-সামর্থ্য তাদের আর নেই। তারা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে তারা কী করবেন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দিনের স্বপ্নের ফসল পাকা ইরি ধান কেটে সংরক্ষণ করার নানাবিধ সমস্যার কথাও তাদের কাছ থেকে জানা গেছে।

আকস্মিক বর্ষা ও ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলো হচ্ছে: উপজেলার ভাঙ্গুড়া সদর (আংশিক), অষ্টমনিষা (আংশিক) এর বাঁশবাড়িয়া, ডেঙ্গারপাড়া, জোঁকা ও গদাইরুপসী, দিলপাশার ইউপি (আংশিক) এর দিলপাশার, মাগুড়া, চকলক্ষ্মীকোল, তাড়াপুর, আদাবাড়িয়া, বাশুড়িয়া, পাটুল ও খাদ্যশস্য ভান্ডার খ্যাত বৃহত্তর খানমরিচ ইউপি’র শ্রীপুর, জয়রামপুর, রামানাথপুর, দুধবাড়িয়া, হেলেঞ্চা, পুকুরপাড়, সাতবাড়িয়া ও কয়ড়ার মাঠে ধান।

খানমরিচ ইউপি’র শ্রীপুর গ্রামের কৃষক ও ৩টি স্কীম মালিক আজহার আলী, দুলাল মিয়া, মোকসেদ আলী, উপজেলার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের স্কীম মালিক আলী আহমেদ, সাইদুল ইসলাম, রুস্তম আলী, মতিউর রহমান খান, আমিনুল ইসলাম, শরীফ আহমেদ তারা জানান, আমাদের স্কীমগুলো নিচু এলাকায় হওয়ায় ক্ষতির সংখ্যা বেশি হয়েছে, প্রায় আবাদি জমির ধান তলিয়ে গেছে।

তারা আরো জানান, মহাজনের কাছ থেকে ঋণ করে আমরা স্কীম পরিচালনা করি। এ বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মহাজনের টাকা পরিশোধ করা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক হবে, পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করতে হবে। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিক ও স্কীম মালিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারিভাবে এগিয়ে আসা বিশেষ প্রয়োজন বলে আমরা আশা করি।

স্কীম মালিকরা জানান, আকস্মিক বর্ষা ও ঢলের পানিতে শ্রীপুর, জয়রামপুর ও কয়ড়ার গ্রামের মাঠের পাকা ইরি ধানের সব জমি তলিয়ে গেছে। তারা সবাই হতাশার সঙ্গে জানান, এলাকায় ধান কাটার কামলা সংকটের কারণে নিজ সম্পত্তিতে লাগানো পাকা ধানের জমি ও স্কীমের আওতাধীন প্রায় ২০০ অধিক একর জমির পাকা ইরি ধান পানিতে ডুবে গেছে।

খাদ্যশস্য ভান্ডার খ্যাত খানমরিচ ইউপি’র চেয়ারম্যান মোঃ মনোয়ার হোসেন খান মিঠু জানান, আকস্মিক বর্ষা ও ঢলের পানিতে তার ইউপির কমপক্ষে ২০/২৫টি গ্রামের মাঠে লাগানো শতাধিক একর জমির পাকাধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে এলাকায় তীব্র কামলা সংকটের কারণে কৃষকেরা জমির পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। খানমরিচ ইউপির পক্ষ থেকে ধান কাটতে কৃষকদের মধ্যে পলিথিন পেপার (পলিথিন পেপার বায়ুবদ্ধ করে) ভাসমান নৌকা সদৃশ তৈরি করে সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে অধিকাংশ পাকা ইরি ধানের জমি ২/৩ ফুট পানির নিচে, ২/৩ দিন ধরে ডুবে থাকার কারণে পাকা ধান বিনষ্টের পথে।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছাঃ শারমীন জাহানের পক্ষে, এস.ও রনজিত কুমার বর্মণ বলেন, উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গুমানী ও বড়াল নদীতে আকস্মিক বর্ষা ও ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রুপসীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ সুইচগেট, বামুনজান রেল ব্রিজ, দিলপাশার দহ রেল ব্রিজ ও বংকিরাট রেল ব্রিজের ক্যানেল নদী দিয়ে খাদ্যশস্য ভান্ডার খ্যাত খানমরিচ, দিলপাশার ও অষ্টমনিষা ইউপির নিম্ন এলাকায় আকস্মিকভাবে পানি প্রবেশ করে প্রায় ২০০ অধিক হেক্টর জমির পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

তবে ডুবে ধান দু'এক দিনের মধ্যে কৃষক কেটে ঘরে তুললে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ যৌথভাবে আকস্মিক বর্ষা ও বন্যার বিষয়ে সতর্কীকরণ বার্তা প্রচার করে অগ্রিম ধান কাটার নির্দেশনা দেয় কৃষকদের। কিন্তু তীব্র কামলা সংকটের কারণে কৃষকেরা জমির ধান কেটে ঘরে তোলার পূর্বেই জমিতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রশাসক ও নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নাজমুন নাহার জানান, উপজেলার খানমরিচ, দিলপাশারসহ কয়েকটি ইউপির নিচু এলাকায় বর্ষা ও ঢলের পানি প্রবেশ করায় পাকা ইরি ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা কৃষি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সতর্কীকরণ বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় কৃষকদের মধ্যে অগ্রিম সতর্কীকরণ বার্তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে কৃষকের পাকা ধানের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

আফরোজা

×