ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাঙ্গামাটিতে পর্যটকের ঢল, প্রাণ ফিরে পেল দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি প্রকৃতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ২১:৫৮, ৯ জুন ২০২৫

রাঙ্গামাটিতে পর্যটকের ঢল, প্রাণ ফিরে পেল দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি প্রকৃতি

ছবিঃ দৈনিক জনকণ্ঠ

পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ  ছুটিতে রাঙ্গামাটির দৃষ্টি নন্দন মনোলোভা পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। পাহাড় ঘেরা  কাপ্তাই হ্রদের তীরে গড়ে উঠা পর্যটন কেন্দ্র গুলো আগে থেকেই পর্যটক বরণের জন্য নানা সাজে সজ্জিত হয়ে আছে।

হ্রদ বেষ্টিত পাহাড়ি শহর রাঙ্গামাটি এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। এই প্রথমবার ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে টানা ১০ দিনের ছুটি পেলেন সরকারি চাকরিজীবীরা।গত ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এই ছুটি চলবে আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত।

দশদিনের টানা ছুটিতে দেশের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম পরিলক্ষিত হচ্ছে। রাঙ্গামাটি শহরের বেশকিছু পর্যটন স্পট ঘুরে দেখা মেলে পর্যটকদের উপচে পরা ভিড়।

রাঙ্গামাটির অন্যতম আকর্ষণীয় ডিয়ার পার্ক ঝুলন্ত ব্রিজ, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক,  শুভলং ঝরনা, চাকমা রাজার বাড়ির কামান, গাঙ সাবারাং, বার্গী লেকভ্যালি, বেরাইন্না, বরগাঙ, রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট, আসাম বস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক অন্যতম। দৃষ্টি নন্দন  এই স্পট গ–লো ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মখরিত হয়ে উঠেছে। জেলার সাজেক ভ্যালি উপত্যকয় ও পর্যটকের পদভারে  গিজগিজ করছে।রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখন সরগরম  হয়ে উঠেছে যা আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত থাকবে। 

গত ২দিন রাঙ্গামাটিতে প্রচুর গরম অনুভূত হচ্ছে। রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করে সারাদিন কাপ্তাই হ্রদ ও শুভলং ঝরনায় গা ভিজিয়ে শীতল হওয়ার চেষ্টা করছেন ভ্রমণকারীরা। এইবার ঈদের বেশী ছুটি এখনো হাতে থাকায় আরও পর্যটকের সমাগম হ্রদমুখি হবে বলে প্রত্যাশা স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তাদের।

অন্যবছর ঈদ উপলক্ষ্যে ৪/৫ দিনের সরকারি ছুটি থাকলেও এবারই প্রথম ১০ দিনের টানা ছুটি পেলেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এতে ঈদ উদ্‌যাপন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে পর্যটন মৌসুমের চেয়ে এবার পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। ইতোমধ্যে পর্যটকদের মানসম্মত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্নের কথাও জানান পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

এবার গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদ শুকিয়ে যায়।  গত সপ্তাহে হঠাৎ টানা বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বিশালাকার কাপ্তাই হ্রদের পানি আবারও বেড়ে টই টুম্বুর হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমের আগেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে এখানের পাহাড়ের  ঝিরি-ঝরনাগুলো। এতে অনুকূল আবহাওয়া ও হ্রদের পানি কিছুটা বাড়ার কারণে এখন হ্রদ ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়। 

কাপ্তাই হ্রদ ছাড়াও রাঙ্গামাটি শহর এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর মতো অসংখ্য পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রও রয়েছে। জেলার কাপ্তাই উপজেলার নিসর্গ পড হাউজ, লেকশোর, জুম রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন নয়নাভিরাম পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়া উঠা এসব পর্যটনকেন্দ্র মুগ্ধ করবে ভ্রমণপিপাসুদের। বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝরনা, নিলাদ্রী রিসোর্ট ছাড়াও রয়েছে একাধিক ঝরনা। অন্যদিকে, আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের  মিতালি খাওয়া উপত্যকা- সাজেক ভ্যালির পর্যটনকেন্দ্রেও পর্যটকের ঢল নেমেছে বলে  রিসোর্ট মালিকরা জানান।

এই বিষয়ে সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জানান, "টানা ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাজেকে ছোট-বড় মিলে ৯৮টি রিসোর্ট-কটেজ রয়েছে। সোমবার সকাল থেকে পর্যটক আসা শুরু হয়। এটা বিকেল অবধি আরও বাড়বে। কটেজগুলো শতভাগ বুকিং রয়েছে।"

রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, "৯-১৩ জুন পর্যন্ত আমাদের মোটেলে ৮০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং রয়েছে। পর্যটকরা আসা শুরু করেছে । পর্যটকদের মানসম্মত সেবা দেওয়ার জন্য মোটেলের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।" 

আমরা পর্যটকদের রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় স্বাগতম জানাচ্ছি। সোমবার বিকাল পর্যন্ত আড়াই হাজার পর্যটক  ঝুলন্ত ব্রিজ দেখেছেন । হাউজ বোট মালিকের ম্যানেজার  নাছির উদ্দিন জানান, "তাদের হাইজ বোট গুলো সব আগাম বুক হয়ে গেছে।"  

রাঙ্গামাটি ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাইয়ান জানান, "এবার বেশি পর্যটক আসছে। যা আমাদের ভাবনায়ও ছিল। সেই অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতিও রয়েছে। আমাদের মোবাইল টিম সবখানে টহলে রয়েছে। গাড়ি, মোটরসাইকেল এমনকি স্পিডবোটেও। পর্যটকদের নিরাপত্তা কিংবা যে কোনো প্রয়োজনে আমরা পাশে আছি।"

এছাড়া পুলিশের অনেকগুলো মোবাইল টিম  নানা স্পটে রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। এবার জেলার সার্বিক পরিস্থিতিও পর্যটকদের অনুকূলে রয়েছে।

পৃথী

×