
প্রায় ১১ মাস যাবত ভোলার চরফ্যাশনে দৃষ্টিনন্দন খামার বাড়ি রিসোর্টটি বন্ধ থাকায় রিসোর্টে কর্মরত প্রায় ৬০ জন কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা মানবতার জীবনযাপন করছেন। এছাড়া রিসোর্টের আঙিনায় ৬০ থেকে ৬৫ টি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর ব্যবসায় ধস নেমেছে। চরফ্যাশন সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা বিমুখ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
জানা যায়, চরফ্যাশন উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নে শারেক খালি গ্রামে ২০০৯ সালে ১৪ একর জমিতে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি জ্যাকবের ছেলের নামের মেসার্স জেনিক ফিশারিজ খামারবাড়ি রিসোর্টটি চালু হয়। পর্যায়ক্রমে বর্ধিত পরিসরে এখন ৫০ একর জমির ওপর এ দর্শনীয় স্থানটি অবস্থিত। খামার বাড়িতে রয়েছে ২টি মিনি হ্যালিপেড। পাহাড়ের আদলে কৃতিম ঝর্না, সু-উচ্চ আধুনিক কিল্লা, দেশি ও বিদেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট, ২৩ টি কটেজ, ১টি বাংলো, ১টি কনফারেন্স রুম, ২টি সুইমিংপুল ও আধুনিক মানের রিসিপশন সেন্টার। এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই দৃষ্টিনন্দন খামার বাড়িটি বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে গত শনিবার ঈদুল আজহা'র পর থেকে রোববার চরফ্যাশন জ্যাকব টাওয়ার, শিশু ও বিনোদন পার্ক, ফ্যাশন স্কয়ার, বেতুয়া প্রশান্তি পার্ক, চরকুকরী মুকরি, ঢালচরের তারুয়া, খেজুরগাছিয়া, মায়াব্রিজসহ বিভিন্ন স্পটগুলো দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। শুধু বন্ধ ছিল খামার বাড়ি রিসোর্টটি।
সোমবার ( ৯ জুন) সকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। গেটে তালা থাকায় তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। টিকিট কাউন্টারে কোনো ব্যক্তিকে দেখা যায়নি। গেটের সামনে সাঁটানো রয়েছে একটি ব্যানার। লেখা রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণা কাজের জন্য খামার বাড়ি রিসোর্টটি সামায়িক বন্ধ আছে।
এসময় উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে ৬ বন্ধুকে নিয়ে ঘুরেতে এসেছেন মো.পারভেজ। তিনি বলেন, খামার বাড়ি রিসোর্টটি বন্ধ আছে, এটা জানতাম না। এখানে এসে জানলাম। এখন যেই গাড়িতে এসেছি, সেটাতেই আবার ফিরে যাচ্ছি।
একই অবস্থা উপজেলার দুলারহাট থানা এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিমের। তিনি এক মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসাবাস করেন। দীর্গদিন পর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে বেড়াতে এসেছেন। আজকেই ঢাকায় ফিরে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ছেলে মেয়েরা খামার বাড়িতে দেখতে বায়না ধরেছিল। তাই সপরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন খামার বাড়িটি দেখার জন্য। সেখানে এসে দেখেন রিসোর্টটির মূল ফটকে তালা মারা। গেইটের সামনে বড় করে লেখা রক্ষণাবেক্ষণা কাজের জন্য খামার বাড়ি রিসোর্টটি সামায়িক বন্ধ আছে। কিন্তু খামার বাড়ি রিসোর্টটি যে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ, অথচ জানতে পারেননি এতে তিনি চরম বিরক্ত প্রকাশ করলেন।
স্থানীয় মফেল গাজী সহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, ১ বছর আগে দেখতাম খামার বাড়ি রিসোর্টে প্রতিদিন পর্যটকের সমাগমে মুখরিত থাকত। তাদের সেবায় নিয়োজিত হয়ে এলাকায় অন্তত ১ শত লোক রিসোর্ট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় জড়িত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস ধরে রিসোর্টটি বন্ধ থাকায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তাদের। অনেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। কেউ কেউ বেকার হয়ে পড়েছেন, কবে চালু হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। অত্র এলাকার অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফেরাতে অতি দ্রুত পর্যটন কেন্দ্রটি খুলে দিতে সংশ্লিষ্টের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।
খামার বাড়ি রিসোর্টের সামনের চায়ের দোকানদার মো.রহিম জানান, খামার বাড়ি উদ্বোধনের পর পর্যটকে মুখরিত ছিলো এই স্থানটি। এরপর চায়ের দোকানের ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। পর্যটকদের সমাগম থাকায় ভালোই ব্যবসা হতো তার। ১১ মাস ধরে রিসোর্টটি বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার। তাই রিসোর্টটি খুলে দিতে সংশ্লিষ্টর প্রতি দাবি জানান তিনি।
মেসার্স জেনিক ফিশারিজ খামার বাড়ি রিসোর্টের কর্মচারী সালাউদ্দিন বলেন, স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে এখানে প্রায় ৬০ জন মানুষ কাজ করত। রিসোর্টটি বন্ধ থাকায় ৫৩ জন কর্মচারী চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। এদের মধ্যে কেই বেকার রয়েছেন। বর্তমানে ৭ জন কর্মচারী রয়েছে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। খামারে সামান্য কিছু আয় হয় তা দিয়ে চলে তাদের মানবতার জীবন।
খামার বাড়ি রিসোর্টের ম্যানাজার জহিরুল ইসলাম বলেন, রিসোর্টটিতে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে প্রায় ৬০ জন কর্মচারী ছিলো। বর্তমানে ৭ জন কর্মচারী দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছে। বাকি কর্মচারীরা বেকার হয়ে পরছেন। রিসোর্টের কিছু আয় দিয়ে চলছে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এবং রিসোর্টের মালিকের এক প্রতিনিধি মাসে মাসে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করছেন। প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আনাগোনা দিচ্ছে কিন্তু খোলার অনুমতি মালিক পক্ষ দিচ্ছে না। তারজন্য বন্ধ রয়েছে। মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে দেখবো খামার বাড়িটি খোলা যায় কি না।
চরফ্যাশন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এমাদুল হোসেন জানান, রিসোটটি খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করা হবে।
Jahan