
ছবিঃ জনকণ্ঠ
গত ১১ মে’র ঝড়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ পাথর শ্রমিক আব্দুল বাসেদ ও তার স্ত্রী বাসিরনের একমাত্র আশ্রয় হারায়। ঝড়ো হাওয়ায় ভেঙে পড়ে একমাত্র ঘরটি। এরপর কেটে গেছে প্রায় একমাস। ঘরে থাকার মত পরিবেশ নেই, খাবার নেই, নেই কোনো সরকারি সহায়তা অথচ কাল ঈদ।
পাথরের কাজ করে কোনোভাবে সংসার চালানো বাসেদ এখন বার্ধক্যের ভারে কর্মহীন। স্ত্রী বাসিরন আর একমাত্র সন্তানকে নিয়ে আশপাশের মানুষের দয়ায় বেঁচে ছিলেন কোনোভাবে। কিন্তু ঘর ভেঙে যাওয়ার পর সেই শেষ আশ্রয়টুকুও নেই। স্থানীয় যুবকেরা কিছু ভাঙা টিন ও বাঁশ জোগাড় করে কোনোমতে একটি ছাউনি বানিয়ে দিলেও সেটা আজ নিরাপদ নয়। ঝড়-বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢোকে, রাত কাটে আতঙ্কে।
এদিক সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বাসেদ-বসিরুন দম্পতির ঘরে নেই একমুঠো চাল। নেই ডাল, তেল, নুন বা ন্যূনতম শুকনো খাবার। ঈদ উপলক্ষে যখন দেশজুড়ে সবার ঘরে আনন্দ, তখন বাসেদ-বাসিরনের ঘরে শুধুই হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস।
এ বিষয়ে আব্দুল বাসেদ বলেন,ঝড়ে আমার ঘর ভেঙে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছি৷ আমি উপজেলা পরিষদে গিয়েছি বিষয়টি জানিয়েছি কিন্তু কোন সহযোগিতা পাইনি৷ কাল ঈদ। কিন্তু ঘরে কিছু নাই। কোন রকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।
এদিকে বসিরন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন, যেন কোনো আশার আলো খুঁজছেন অন্ধকারে। বসিরন বেগম বলেন, আমরা স্বামী অসুস্থ্য৷ কাজকর্ম করতে পারছে না৷ আমাদের একমাত্র থাকার ঘরটি ভেঙে পড়ে যাওয়ায় কোন রকম দিন রাত দিন কাটাচ্ছি৷ ঝড়,বৃষ্টি বাতাস হলেই অনেক ভয়ে থাকি৷ আমাদের ঘরের ব্যবস্থা বা কেন সরকারি সহযোগী পেলে অনেক ভাল হতো।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) মাইদুল ইসলাম নিয়মিত অফিস না করায়, সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত ঢেউটিন ও শুকনো খাবার বিতরণ থমকে আছে। অথচ উপজেলায় আব্দুল বাসেদ -বশিরন দম্পতির মতো বিভিন্ন গ্রামে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সাহায্যের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে।
জানা যায়, উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ আসা শুকনো খাবার, ঢেউটিনসহ নানা ত্রাণসামগ্রী সময়মতো বিতরণ না করায় ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বিতরণ না হওয়ায় অনেক ত্রাণসামগ্রী জন্য বরাদ্দ মজুদেই পড়ে আছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে পিআইও’র আন্তরিকতা ও দায়িত্ব পালনের প্রতি তার উদাসীনতার বিষয়ে।
এদিক আব্দুর সাত্তার নামে এক প্রতিবেশী বলেন,“আমরা নিজেরাই কয়েকবার খবর দিয়েছি। কিন্তু কোনো সরকারি লোক আসেনি বাসেদের ঘর দেখতে৷
এদিকে জাকির হোসেন নামে স্থানীয় আরেক প্রতিবেশী বলেন,আমরাই স্থানীয়রা মিলে কোন রকম থাকার ঘরটি দাড় করিয়ে দিয়েছি৷ কিন্তু সরকারি এত সহযোগিতা আছে বাসেন কেন পাবে না এটাই আমাদের প্রশ্ন৷
“ঘরও গেল, শান্তিও গেল, বাঁচার আশাও নাই। সরকারে কত কিছু আসে, কিন্তু আমরা কিছুই পাই না। আমরা কি মানুষ না?”—শুধু এই কথাগুলোই বললেন বাসেদ, গলায় কাঁপন, চোখে জল।
ঈদের আনন্দ যেখানে সবার ঘরে, সেখানে দর্জিপাড়ার এই পরিবারটি প্রতিদিন মৃত্যুর মতো দিন কাটাচ্ছে। প্রশাসনের উদাসীনতা আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কাছে এই পরিবারটি যেন অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইদুল ইসলাম বলেন,এটি আমাদের আগে জানা ছিল না। গত সপ্তাহে আমরা যখন জানছি তখন ইউএনও স্যারসহ যাওয়ার কথা ছিল৷ পরে ইউএনও স্যারও বললো আগে দেবনগড়ের কাজটা শেষ করি।
পরে ওখানে গিয়ে ব্যবস্থা নিবো৷ পরে রাত হওয়াতে আর যাওয়া হয়নি৷ আশা করি ঈদের পর এসে,চেয়ারম্যানও কাগজপত্র অবশ্য দিয়েছে৷ যে দৌড়াদৌড়ি চলতেছে সেসময়তে সেখানে যাওয়া সময় হয়নি৷
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, তাকে আমরা টিন দিবো, টাকাও দিবো। পিআইও সাহেব দেখতে যেতে চেয়েছেন মাঝে পরে ভুলে গেছেন। এ কারণে আর দেয়া হয়নি৷ তবে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো৷
সাব্বির