
ছবি: জনকণ্ঠ
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা পাবনা বাজারের এক পাশে বয়ে যাওয়া এক সময়ের ক্ষরস্রোতা কেশরখালী খালের প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত। বাজারের সব আবর্জনা গিলে খাচ্ছে খালটি। দখল আর দূষণে খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে।
প্রায় দুইশ বছর আগে চান্দাইকোনা বাজারের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এই খাল যেন এখন প্রাণহীন। একসময় পানিপথে বাণিজ্যের অভাবনীয় প্রসার ঘটানো খালটি এখন বাজারের পানি নিষ্কাশনেও ব্যর্থ। ফলে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম প্রাণ কেশরখালী খালটি এখন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খালটি দখলমুক্ত করে সংস্কার না করায় এটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, খালের অবস্থা এখন করুণ। পানি যাওয়ার কোনো লাইন নেই। সব পথ বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ভিপি আইনুল হক জানান, ব্রিটিশ আমলের এই খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। এটি চান্দাইকোনা ফুলজোড় নদীর সঙ্গে মিশে ত্রিমোহনী মরা করতোয়া নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। একসময় ফুলজোড় নদীর পানি এই খাল হয়ে মরা করতোয়া নদীতে গিয়ে পড়ত। সেই পানি মেশিনের মাধ্যমে তুলে কৃষিকাজে ব্যবহার হত।
কিন্তু স্থানীয় লোকজনের দখলদারিত্বের কারণে খালের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় নৌকা চলাচল। আমরা নৌকা দিয়ে খাল পার হয়ে স্কুলে যেতাম। মাঝে মাঝে কাঠের সেতু দিয়েও চলাচল করেছি। দেশে অনেক খাল খনন ও সংস্কার হয়েছে, কিন্তু দেশ স্বাধীনের পরে বহু সরকার ক্ষমতায় এলেও এই খালটির পুরোনো রূপ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ কেউ নেয়নি। ফলে খালটি এখন কচুরিপানায় ভরে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রভাবশালীদের দখলের কারণে চান্দাইকোনাবাসীর জন্য খালটি এখন অভিশাপ।
বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী অশোক কুমার ঘোষ বলেন, ছোটবেলায় এই খালের ভিতর দিয়ে নৌকা চলত। সেই নৌকায় বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়ি পাইকড়া গ্রামে গেছি বহুবার। বিভিন্ন গ্রামের মানুষ বাজার করতে নৌকাযোগে চান্দাইকোনা বাজারে আসত। স্কুলজীবনে যখন খালে পানি বেশি থাকত তখন বিশ্বরোড হয়ে স্কুলে যেতাম, আর পানি কমে গেলে লুঙ্গি কাঁচা দিয়ে খাল পার হতাম।
চান্দাইকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আব্দুল হান্নান বলেন, আমি ৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। তখন ভরা মৌসুমে খালের পানিতে ব্যাপক স্রোত ছিল। কেউ পানিতে নামার সাহস পেত না। তাই অনেকটা ঘুরে স্কুলে যেতে হতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চান্দাইকোনা পাবনা বাজারের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জানান, কিছুদিন আগে স্কুলের পশ্চিম পাশে মাটি ভরাট করে খালের পানির গতিপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় দখলবাণিজ্য। সরকারিভাবেও কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য হোলসেল মার্কেট করা হয়। বর্তমানে দখল অব্যাহত রয়েছে। অনেকে কাগজপত্র জালিয়াতি করে নিজের নামে জমির দলিল বানিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছেন।
বিশিষ্ট মিষ্টি ব্যবসায়ী ভজন কুমার ঘোষ বলেন, আমি ৩০ বছর আগে চান্দাইকোনায় ব্যবসা শুরু করি। তখনো খালে পানির প্রবাহ ছিল। কিন্তু এই ৩০ বছরে খালটির কোনো সংস্কার হয়নি। এখন এটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি ব্যবসায়ী বলেন, বাজারের সমস্ত পানি এই খালে যেত। কিন্তু এখন খালটি ভরাট হয়ে গেছে। ময়লা আর আবর্জনায় খালটি চান্দাইকোনাবাসীর জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। অনেকেই খালের জায়গা ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, খালটি সম্পর্কে আমার কোনো কিছু জানা নেই। সামনে জেলায় অর্থ বরাদ্দ এলে অবশ্যই খালটি সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড তালিকাভুক্ত করবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করে চান্দাইকোনাবাসীকে উপহার দেওয়া হবে।
এম.কে.