
ছবি: জনকণ্ঠ
কয়েকদিনে ভারী বৃস্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে নীলফামারীর ডালিয়াস্থ দেশের সর্ব বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছেন ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। বর্ষার আগে শেষ বৈশাখে এসে ও জ্যৈষ্ঠ মাসের আগমনেই তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকাল পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে (৫১ দশমিক ৫৫) প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। গত দুইদিনে ভারী বৃস্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তার ডালিয়ায় একশত সেন্টিমিটার পানি বৃষ্টি পায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজিক বিভাগের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম। সূত্র মতে গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকার ১৪৩ মিলিমিটার বৃস্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে কাউনিয়া পয়েন্টে ৯৯ মিলিমিটার ও ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪ মিলিমিটার। সূত্র জানায় উজানে প্রচুর বৃদ্ধিপাতের কারণে তিস্তা নদীতে ঢল নেমেছে।
তিস্তাপাড়ের এলাকাবাসী জানায়, এবার ভারী বৃস্টিপাত ও উজানের ঢল বর্ষার আগে ভাগেই শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বৃষ্টিপাতের সাথে তিস্তায় উজানের ঢলও আসছে। এতে নদীর পানি দুই কুল ছাপিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এবার নদী ভাঙন তীব্র হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে নীলফামারী ও কুড়িগ্রামে ৪৫ কিলোমিটারের মধ্যে জরুরি ভাবে ২০ কিলোমিটার ভাঙন প্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগে বালু ভরার এ কাজ শুরু করা হয়। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারী অংশের বাইশপুকুর ও ভেন্ডাবাড়ী ও সোনাখুলি এলাকায় ভাঙনরোধের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানে সহস্রাধিক জিও ব্যাগ তলিয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখে রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তা নদীর বিষয়ে বিশেষ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভাঙনরোধ কাজ শুরু । এ জন্য কয়েকটি ভাগে ২০ কোটি টাকার বেশ কিছু ঠিকাদার এ কাজ করছেন। এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, এপ্রিল মাস থেকে কাজ শুরু হয়।
ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর এলাকায় ১০৭০ মিটার তীরে জিও ব্যাগ ফেলার প্রকল্পটি চলমান। এতে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চারটি প্যাকেজে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ করে পাউবো। তবে কাজ সম্পাদনা করছেন বেশ কিছু সাব ঠিকাদার। ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সেখানে প্লেসিং এর জন্য রাখা সহস্রাধিক জিও ব্যাগ নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। অপর দিকে ঝুনাগাছ চাপানির ভেন্ডাবাড়ী ও সোনাখুলি স্পার বাঁধ রায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব স্পার বাঁধ রায় দুটি প্রকল্পে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। জিও ব্যাগ ভরাট করা হয়েছিল বাঁধের নিচের বালু তুলে। তবে বছর না ঘুরতেই জিও ব্যাগ ধসে পড়ে নদীতে বিলীন হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ বাইশপুকুর, ভেন্ডাবাড়ী সোনাখুলি স্পার বাঁধের নিচে ভাঙন এলাকা থেকে বালু তুলে ভরা হয় ব্যাগ। বাঁধ থেকে ৩০ মিটার দূরত্বে নদীর ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বোমা মেশিনে ১০ ইঞ্চি পাইপ যুক্ত করে বালু তোলা হয়। যদিও এমন মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।এমনকি নদীর তীর ভাঙনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বালু তোলা নিষেধ। সেখানেও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ বন্ধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরি বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন রোধ এলাকায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। যে সকল জিও ব্যাগ তলিয়ে গেছে এতে কোন সমস্যা হবে না। পানি কমলে প্লেসিং কাজ শুরু হবে।
সাব্বির