
বিপন্ন প্রজাতির পোড়ামুখো একটি হনুমান লোকালয়ে এসেছে। উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর তিস্তা নদী বিধৌত ডিমলায় এই হনুমানটি ঘুরছে। বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল থেকে উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের শুটিবাড়ি হাট সংলগ্ন পূর্ব পাশের গ্রামের গোলাম হোসেনের বাড়ির মেহগনি গাছে হনুমানটিকে দেখা যায়''।
অনেকে ধারনা করছেন কাছেই তিস্তা নদী ঘেষা ভারত সীমান্তে বনজঙ্গল। সেখান থেকে হয়তো খাদ্যের সন্ধ্যানে ঢুকে পড়েছে। কেউ আবার ধারনা করছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারোস নিয়ে আসা ট্রাকে এটি চলে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হনুমানটি সকাল থেকেই শুটিবাড়ি বাজারের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। এরপর সেটি সাবেক ইউপি সদস্য ছলেমান আলীর বাড়ির পাশের আমগাছে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে। এ সময় উৎসুক গ্রামবাসী ও বাজার এলাকার লোকজন হনুমানটিকে দেখার জন্য ভিড় করে। অনেকে এটিকে বানর আবার কেউ কেউ ভাল্লুক ভেবে ভুল করেন।''
বাজারের মুদি দোকানি গোলাম রব্বানী জানান, ভিড় করা লোকজন হনুমানটিকে আলু, ভাত, পাউরুটি ও কলা খেতে দেন। তবে শিশু ও কৌতূহলী মানুষের চিৎকারে বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে হনুমানটি বাজারের অন্য প্রান্তে গোলামের বাড়ির দিকে চলে যায়।''
ওই একই গ্রামের শাহীন আলম জানান, এলাকায় হঠাৎ করে দক্ষিণ দিকে থেকে হনুমানটির আগমন ঘটে। হনুমানটি খুবই বড় ও দেখে খুব ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছিল। এটি খাবারের আশায় বারবার মাটিতে নেমে আসার চেষ্টা করছিল। কিন্তু মানুষের ভিড় দেখে আবার ভয় পেয়ে ঘরের চালে ও গাছের ডালে উঠে আশ্রয় নেয়।''
স্থানীয় বাসিন্দা হাসেম আলী মনে করেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে তিস্তা নদী পার হয়ে খাবারের খোঁজে হনুমানটি তাদের গ্রামে এসেছে। তিনি হনুমানটিকে উদ্ধার করে পুনরায় বনে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান।''
ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক কনক কুমার অধিকারী বলেন, কালোমুখো বা পোড়ামুখী হনুমান বর্তমানে বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে বসবাস করা বৃক্ষচারী ও শান্ত স্বভাবের প্রাণী। তবে প্রায়শই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকালয়ে এদের খাবারের সন্ধানে দেখা যায়।''
উপজেলা বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা এম মোরশেদ আলম জানান, দলছুট হয়ে লোকালয়ে আসা হনুমানটির কোনো ক্ষতি না করতে এবং বিরক্ত না করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি ধারণা করছেন, খাবারের খোঁজে ভারত থেকে আসা হনুমানটি বিরক্ত না হলে সম্ভবত আবারও ওদিকেই ফিরে যাবে।''
ডিমলা উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মদন কুমার রায় জানান, কালোমুখো হনুমানের লোকালয়ে আসার খবর তিনি পেয়েছেন এবং এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখার জন্য বন কর্মকর্তাকেও অবহিত করেছেন।''
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঘোরাঘুরি করা কালোমুখো হনুমানটির দ্রুত এবং ঘন ঘন স্থান পরিবর্তনের কারণে উদ্ধার করা কঠিন। তবে স্থানীয়দের সহায়তায় এটিকে উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।''
রাজু