ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাপপ্রবাহ বদলে দিয়েছে রাজধানীর জীবন 

ব্যস্ত সময়েও ফাঁকা রাস্তা, ঘরবন্দি মানুষ

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ব্যস্ত সময়েও ফাঁকা রাস্তা, ঘরবন্দি মানুষ

তীব্র দাবদাহের কারণে রাজধানীর রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। মগবাজার এলাকা

বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা হলো। ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হলো ঘটা করে। আরও কত আচার অনুষ্ঠান। আবহাওয়া অফিসও চেষ্টা করেছে আশার বাণী শোনানোর। কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে প্রকৃতি। ডাক শুনছে না কারও। এখন পর্যন্ত এক ফোটা বৃষ্টির দেখা মেলেনি। উল্টো গরম বেড়ে চলেছে। সূর্যের তাপ যেন আগুনের হল্কা। গা পুড়ে যাচ্ছে। ঘামে স্থান-গোসল হয়ে যাচ্ছে সবার।

তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশেই মোটামুটি এক অবস্থা। তবে নানা কারণে বেশি ভুগতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। এখানে এমনিতেই গরম। তার ওপর গ্রীষ্মের দাবদাহ। এরই মধ্যে তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠেছে। বুধবার ছিল ৪১ ডিগ্রির মতো। এ অবস্থা বড় পরিবর্তন এনেছে ঢাকার প্রতিদিনের জীবনে। শহর ঢাকার রাস্তা ঘাট এখন অনেকটাই ফাঁকা। ব্যস্ত সময়েও আগের মতো ভিড় চোখে পড়ছে না। ছোটাছুটি অনেক কমে গেছে। দাবদাহ সহ্য করতে না পেরে ঘরমুখো হয়েছে মানুষ। জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হতে চাইছে না।  
গত কয়েকদিন ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাস্তা ঘুরে মনে হয়েছে, ঈদের ছুটি বুঝি শেষ হয়নি এখনো। বাস্তবে ঈদের লম্বা ছুটিতে অনেক কাজ জমা হয়েছে। সেইসব কাজ শেষ করতে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তীব্র গরমের কারণে সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। পিক আওয়ারে মিরপুর, ফার্মগেট, শাহবাগ, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন এলাকার রাস্তা ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। গুলশান বনানী বা বাড্ডা এলাকার রাস্তায়ও আগের মতো যানজট চোখে পড়ছে না। গণপরিবহনের সংখ্যা কমেছে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময়ও গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগছে না। 
এদিকে, অনেক আগেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রাজধানীর প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে কয়েক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ঢাকায়। সবই এখন বন্ধ। শিক্ষার্থীরাও ঘরে অবস্থান করছে। ফলে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বা আশপাশের রাস্তায় আগের মতো ভিড় নেই। ইউনিফর্ম পরা ছাত্র-ছাত্রীর জটলা চোখে পড়ছে না কোথাও।

বুধবার বিএএফ শাহীন কলেজ সরকারি বিজ্ঞান কলেজ তেজগাঁও কলেজ সিটি কলেজ এবং ঢাকা কলেজ এলাকা ঘুরে মনে হয়েছে ঈদের ছুটি বুঝি শেষ হয়নি এখনো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও একরকম ফাঁকা। ক্লাসরুমগুলো তালাবদ্ধ। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে ক্লাস করায় ক্যাম্পাস ফাঁকা। গরম সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অনলাইনেই ক্লাস চলবে বলে জানান তারা।

ঢাকার চায়ের দোকানগুলোতে অকারণ গল্প আড্ডাও কমেছে। পেছনে পড়েছে রাজনীতির আলোচনা। টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে আছে ‘গরম।’ কেন এত গরম, কবে বৃষ্টি নামবে, নাকি আরও বাড়বে দুর্ভোগÑ এসব নিয়ে কথা সর্বত্রই। হঠাৎ বেড়ে গেছে পরিবেশবাদীর সংখ্যাও। নিজে বাড়ি নির্মাণের সময় দুই হাত জায়গা না ছাড়লেও এখন সে ব্যক্তিই জানতে চাইছেন, কংক্রিটের জঞ্জাল হলো কেন ঢাকা। কেউ কেউ উত্তর সিটি করপোরেশনের চিফ হিট অফিসারের কাঁধে সব দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের ‘শুদ্ধ’  জাহির করার চেষ্টা করছেন। গরমের প্রভাব পড়েছে বাসা বাড়িতেও।

ঢাকার বাসা বাড়ির দরজা জানালা এখন একটু আধটু খুলে রাখতে দেখা যাচ্ছে। সচরাচর এমন দৃশ্য দেখা যায় না। এর বাইরে ঘন ঘন গোসল করে শরীর শীতলের চেষ্টা করছে মানুষ। 
সব মিলিয়ে ঢাকার প্রতিদিনের জীবন আর আগের মতো নেই। অসহনীয় গরম বদলে দিয়েছে সবকিছু। কতদিন চলবে এমন সেটাই দেখার বিষয় এখন।

×