ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ, এপারে কম্পন

মুহাম্মদ হানিফ আজাদ উখিয়া,কক্সবাজার   

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ৯ এপ্রিল ২০২৪

সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ, এপারে কম্পন

সীমান্তে বিস্ফোরণ

সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে বিস্ফোরণের শব্দ অব্যাহত রয়েছে। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই বিস্ফোরণ মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপর পর্যন্ত থেমে থেমে শোনা যাচ্ছে। ওপারের বিস্ফোরণের শব্দ সীমান্তের এপারে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। 

সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ওপার থেকে ভেসে আসা গোলাগুলি, বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতঙ্ক বিরাজ করছে বাংলাদেশিদের মাঝে। সোমবার সকাল থেকে রাতভর ও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় শতাধিকের বেশি মর্টারশেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, নাফ নদীর ওপাশ থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। আর আমাদের সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রেশ যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের পূর্ব দিকে মিয়ানমারের মংডু শহরের উত্তরে বলিবাজার, শিলখালী, নাকপুরা, হাস্যুরাতা ও নাখ্যংদিয়া থেকে মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে। নতুন করে ওই সব এলাকায়ও সংঘাত ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এসব এলাকায় আরাকান আর্মি ও সে দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘাত হয়। সীমান্তের এসব এলাকায় গতকাল ভোর পর্যন্ত শতাধিক বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে।

বিশেষ করে সাবরাং ইউনিয়ন, সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, হোয়াইক্যংয়ের খারাংখালী, ঝিমংখালী, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, পুরান বাজার, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, টেকনাফ সদরের আলীখালি, লেদা, মুচনী, জাদীমুড়া, দমদমিয়া, টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কেকেপাড়া, জালিয়াপাড়া, ও মেরিন ড্রাইভ সড়কসহ অন্তত ৩০টি গ্রামে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে।

টেকনাফ স্থল বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য সময়ের তুলনায় বন্দরে মিয়ানমার থেকে পণ্যবাহী জাহাজ কমে গেছে। যখন দিনে ১৫ থেকে ২০টা মাছের, কাঠের ও অন্যান্য পণ্যের জাহাজ ঢুকতো সেখানে দিনে দুএকটা জাহাজ আসে মালামাল নিয়ে।

সাবরাং ইউনিয়নের লেজির পাড়ার বাসিন্দা মো. ফয়েজ বলেন, কী এক অবস্থায় আছি। সারারাত গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। মনে হয় বিজলী চমকাচ্ছে। এমন বিকট শব্দ আগে কখনও শুনিনি। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে দিনযাপন করি।

হ্নীলা ইউনিয়নের বাসিন্দা লবণ চাষী আব্দুস ছামাদ বলেন, কাজে মাঠে যাইতে ভয় করে। কোন সময় গুলি এসে আবার যেন গায়ে লাগে। শুধু গোলাগুলি আর গোলাগুলির শব্দ। এর শেষ কোথায় আল্লাহই জানে।  

সাবরাং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিদ্দিক আহমদ বলেন, মর্টার শেল আর বিস্ফোরণের শব্দে পুরো টেকনাফ কাঁপছে। প্রতিনিয়ত জনমনে ভীতির সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিন থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসলেও আজকে অবিরতভাবে ভেসে আসছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. খোরশেদ আলম বলেন, গোলাগুলির শব্দের শেষ কোথায় জানি না। মনে হচ্ছে মিয়ানমারে দু’পক্ষের সংঘাত দিন দিন ব্যাপক আকার ধারণ করতেছে। আর তাদের এই বিকট শব্দে ঘুমহীন হয়ে যাচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ।

রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, গত শনিবার থেকে আবারও গোলাগুলি সংঘর্ষ শুরু হয়েছে মিয়ানমারের। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
 

এস

×