ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফিল্মি স্টাইলে সশস্ত্র কেএনএফ সদস্যদের ব্যাংকের অর্থ ও অস্ত্র লুট

রুমার পর থানচিতে তাণ্ডব

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম /নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ৩ এপ্রিল ২০২৪

রুমার পর থানচিতে তাণ্ডব

কেএনএফ সন্ত্রাসীরা রুমা সোনালী ব্যাংক শাখা অভ্যন্তরে তছনছ করে, অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন

ষোলো ঘণ্টার ব্যবধানে বান্দরবানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের (কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) সদস্যরা বুধবার এবার থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তা-ব সৃষ্টি করেছে। ব্যাপক গোলাগুলি চালিয়ে লুট করেছে গ্রাহকদের টাকা ও ব্যাংকে নিয়োজিত গার্ডদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রুমা  উপজেলার সোনালী ব্যাংকে দুর্ধর্ষ হামলা চালায় কেএনএফ সদস্যরা। অপহরণ করে ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে।

বুধবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মেলেনি। এরপর ভর দুপুরে থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালায়। পরপর দুদিনে ফিল্মি স্টাইলে কেএনএফ সদস্যদের সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের তিন শাখায় হামলা চালিয়ে অর্থ ও অস্ত্র গোলাবারুদ লুটে নেওয়ার ঘটনার পর শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। রুমা ও থানচি সদরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাস্তাঘাট, বাজার সবকিছুই ফাঁকা হয়ে আছে। অভিযানে সেনাবাহিনীও যোগ দিয়েছে। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার নিশ্চিতে বুধবার বান্দরবান শহরে মানববন্ধন হয়েছে। কেএনএফের এমন তা-বের পর বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া সিআইডির চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ নেওয়াজ খালেদের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন ক্রাইম সিন টিম। এ ছাড়া বান্দরবান জেলা প্রশাসক ও বান্দরবান পুলিশ সুপারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

আইজিপি বলেছেন, এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। অপরদিকে ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, দু’দিনের ঘটনায় কেএনএফ সদস্যরা জড়িত। বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় সরকারের যা যা করা দরকার সবই করা হবে। 
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ব্যাংকের রুমা শাখার ভল্ট ভাঙতে না পারায় কোনো টাকা লুটে নিতে পারেনি কেএনএফ সদস্যরা। তবে শতাধিক কেএনএফ সদস্য রাত ৯টার দিকে ব্যাংক সন্নিহিত এলাকা ঘিরে ফেলে ব্যাপক গোলাগুলি চালায়। তারা ব্যাংকের ভল্ট ভাঙার জন্য ম্যানেজারকে খুঁজতে থাকে।

ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন তখন পাশর্^বর্তী মসজিদে তারাবির নামাজে ছিলেন। কেএনএফ সদস্যরা মসজিদে গিয়ে তাকে খুঁজে বের করে ধরে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় মুসল্লিদের অনেকের মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়। ভল্টের চাবি না পাওয়াতে রুমা সোনালী ব্যাংক শাখার ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকারও বেশি অক্ষত রয়েছে। 
এ ঘটনার ষোল ঘণ্টার মধ্যে কেএনএফ সদস্যরা তা-ব চালিয়েছে উপজেলার থানচি বাজার এবং সোনালী ও কৃষি ব্যাংক শাখায়।  বুধবার থানচিতে ছিল বাজারের দিন। ফলে সেখানে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমেছিল। দুপুর প্রায় ১২টার দিকে কেএনএফ সদস্যরা অস্ত্র সাজে সজ্জিত হয়ে প্রথমে বাজারে গুলিবর্ষণের মাধ্যমে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এরপর দুটি গ্রুপ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক শাখায় হামলা চালায়। সেখানেও তারা ব্যাংকের ভল্ট ভাঙতে না পেরে ক্যাশে থাকা অর্থ লুটে নেয়।

জানা গেছে, থানচি সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ, কৃষি ব্যাংক শাখা থেকে ৪ লাখ টাকা লুট করেছে কেএনএফ সদস্যরা। থানচি সোনালী ব্যাংকে কেএনএফ সদস্যদের প্রবেশের পর ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তারা গ্রাহকদের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে ম্যানেজার বা ক্যাশিয়ার কাউকে না পেয়ে ভল্ট ভাঙতে পারেনি। ক্যাশ থেকে নিয়ে যায় প্রায় চার লাখ টাকা। অনুরূপভাবে কৃষি ব্যাংকের ভল্ট ভাঙতে পারেনি।

ক্যাশ থেকে নিয়ে গেছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। পর পর দু’দিনের এ ঘটনার পর সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে বান্দরবানের শহর শাখা ছাড়া অবশিষ্ট ছয় উপজেলার ব্যাংকিং কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ব্যাংকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় জেনারেল ম্যানেজার মুসা খান বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। 
দু’দিনের এ ঘটনার পর রুমা ও থানচিতে এলাকাবাসির মাঝে ব্যাপক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাট বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। অনুরূপভাবে অনেক বাড়িঘরের লোকজনও পালিয়েছে। 
থানচির স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বুধবার বেলা ১২টার পর সদর এলাকার শাহজাহানপাড়ার দিক থেকে তিনটি চাঁদের গাড়িতে করে কেএনএফ সদস্যরা মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ করে প্রথমে বাজার এলাকায় প্রবেশ করে। এরপর থানচি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সোনালী ও কৃষি ব্যাংক শাখার অভ্যন্তরে ঢুকে সকলকে জিম্মি করে ভলট ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ক্যাশ থেকে অর্থ লুটে নেয়। এরপর তারা আবার একই চাঁদের গাড়িতে করে থানচি শাহজাহানপাড়ার দিকে চলে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। উল্লেখ্য, থানচি বাজারের প্রায় ৩শ’ গজের মধ্যে রয়েছে থানচি থানা ও বিজিবি ক্যাম্প। এ ছাড়া বাজারের শেষ মাথায় রয়েছে সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্ট। 
আসন্ন ঈদুল ফেতরের আগে বিশেষ করে সরকারি চাকুরেদের বেতন বোনাসের টাকা এনে ব্যাংকসমূহে রাখা হয়েছিল। বিষয়টি কেএনএফ সদস্যরা জানতে পারে। বিপুল অর্থ লুট করার লোভে তারা শতাধিক সদস্য নিয়ে ব্যাংকসমূহে হামলা চালায়। ব্যাংকে টাকা তুলতে আসা কয়েক গ্রাহক জানিয়েছেন, কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ৫ থেকে ৬ মিনিটের মত সোনালী ব্যাংক অভ্যন্তরে অবস্থান নেয়।

এরপর তারা গুলি চালিয়ে ভীতি সৃষ্টি করে ক্যাশ থেকে ১৫ লাখ টাকা লুটে নেয়। অনুরূপভাবে থানচির কৃষি ব্যাংক শাখা থেকেও লুটে নেয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। এর আগে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রুমার সোনালী ব্যাংকে হানা দিয়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা পুলিশ ও আনসারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে। 
রুমার সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে মঙ্গরবার রাত প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে। এ সময় শতাধিক কেএনএফের সশস্ত্র সদস্য সোনালী ব্যাংকের গেটের তালা ভেঙে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এ সময় ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষীসহ প্রায় ২০ জনকে মারধর করা হয়। ব্যাংকের ভল্ট ভাংতে না পেরে সন্ত্রাসীরা মসজিদে গিয়ে ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে ভল্টের চাবি দিতে বলে। কিন্তু তিনি তার কাছে চাবি নেই বলার পর তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে বুধবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার কোনো খবর মেলেনি। 
ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ওতোয়াই চিং মারমা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত প্রায় ৯টার দিকে তিনি একটি চা দোকানে চা খেতে যান। তখন তিন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত তাকে ঘিরে ফেলে। বন্দুকের বুকে পকেটে তল্লাশি চালিয়ে ভল্টের চাবি কেড়ে নেওয়া হয়। পকেটে থাকা ১২০০ টাকাও নিয়ে যায়। এরপর শতাধিক অস্ত্রধারী ব্যাংক ঘিরে ফেলে। ব্যাংকের মূল ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সবকিছু তছনছ করে ফেলে। ক্যাশিয়ার ওতোয়াই চিং আরও জানান, ভল্ট খুলতে গেলে দু’জনের চাবি লাগে, ক্যাশিয়ার এবং ম্যানেজারের।

দুর্বৃত্তরা আমার থেকে চাবি নিয়ে ভল্ট খোলার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে ম্যানেজারকে খুঁজতে থাকে। পরে মসজিদে তারাবি পড়ার সময় ম্যানেজারকে ঘিরে চাবি চায়। কিন্তু ম্যানেজারের কাছে চাবি না থাকায় নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। 
রুমার সোনালী ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টার সময় পুলিশ গার্ডের কাছে ছিল ১০টি অস্ত্র। ৮টি চাইনিজ রাইফেল ও ২টি এসএমজি এ ছাড়া আরও ছিল ৮০ রাউন্ড গুলি। আনসারের কাছে ছিল ৪টি শর্টগান ও ৩৪ রাউন্ড গুলি। সন্ত্রাসীরা এসব অস্ত্র ও গুলি সবই লুট করে নিয়ে গেছে। 
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি রুমা সোনালী ব্যাংক শাখার পাশাপাশি এলাকার বাজার ও মসজিদ পরিদর্শন করেন। কথা বলেন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইজিপি বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি, আমাদের লোকজনের ওপর আক্রমণ হয়েছে। সন্ত্রাসীরা মসজিদ, আনসার ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়েছে। লুট করেছে অস্ত্রশস্ত্র।

অপহরণ করেছে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে। আমরা এ ব্যাপারে অভিযান শুরু করেছি। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রুমাতে আইজিপির ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক শাখায় কেএনএফ সদস্যরা হামলা চালিয়ে অর্থ লুটে নেয়। সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তথ্য সংগ্রহ করছি। 
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঈদের আগে গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের লেনদেন এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বোনাসের অর্থ ছিল রুমার সোনালী ব্যাংকের ভলটে। এ ছাড়া মঙ্গলবার গ্রাহকও ছিল অসংখ্য। সোনালী ব্যাংকের ভল্টে ছিল ১ কোটি ৫৯৭০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। অনুরূপভাবে  থানচি সোনালী ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংকের ভল্টেও ছিল বিপুল অঙ্কের অর্থ। ভাগ্যিস সন্ত্রাসীরা ভল্ট ভাঙতে পারেনি। রুমা সোনালী ব্যাংক থেকে কোনো অর্থই লুট করতে পারেনি।

তবে থানচি সোনালী ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার থেকে প্রায় ২ লাখ এবং কৃষি ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা লুটে নেয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক অভিযোগে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ব্যাংক, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় জোনাল ম্যানেজার মুসা খান জানিয়েছেন, আমাদের রুমা শাখা থেকে কোনো অর্থ লুটে নিতে পারেনি। তবে থানচি শাখা থেকে কি হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 
থানচি কৃষি ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক হ্লা সুই থোয়াই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একদল সশস্ত্র লোক গুটি গাড়িযোগে এসে পাশাপাশি থাকা কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়েছে। সন্ত্রাসীরা চোখের পলকে ব্যাংকে প্রবেশ সকলকে জিম্মি করে সবাইকে একটি কক্ষে নিয়ে বাইরে থেকে আটকে দেয়। পরে ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে তারা ক্যাশ থেকে যা পেয়েছে তা নিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল করিম জানিয়েছেন, গতকাল যে গ্রুপটি রুমায় তা-ব চালিয়েছে একই গ্রুপের সদস্যরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছে। থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন জানিয়েছেন, দুপুরে থানচি বাজারে এসে সশস্ত্র দুর্বৃক্তরা সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে প্রবেশ করে অর্থ লুট করেছে। থানচির সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লুট হয়েছ বলে জানা গেছে। তবে থানচি কৃষি ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য বিকেল পর্যন্ত মেলেনি। 
রুমার ঘটনা নিয়ে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, থানচিতে বুধবার ছিল সাপ্তাহিক বাজার। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিযন থেকে লোকজন মালমাল কেনাকাটায় আসেন। বেলা সোয়া ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে তিনটি জিপে শতাধিক দুর্বৃত্ত বাজারে প্রবেশ করে। গাড়ি থেকে নেমে সন্ত্রাসীরা দুটি ব্যাংক শাখায় হামলা চালায়। সাপ্তাহিক বাজারের দিন থাকায় দুই ব্যাংকে প্রচুর গ্রাহক ছিল। থানচি সোনালী ব্যাংকে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা ম্যানেজারকে খুঁজতে থাকে। তাকে না পেয়ে ক্যাশ কাউন্টার থেকে যা পেয়েছে তা লুটে নিয়েছে। সশস্ত্র এ দলের সঙ্গে কয়েক নারী সদস্যও ছিলেন বলে জানা গেছে। এ দুর্বৃত্তদের পরনে ছিল খাকী পোশাক। 
থানচির দুই ব্যাংকে লুট চালানোর পর বাজারে প্রকাশ্যে ব্রাশফায়ার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে তিন জিপে করে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সিনেমায় যেভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ব্যাংকের লুটের দৃশ্য দেখা যায়, থানচির ঘটনাও অনুরূপ ছিল। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, থানচির চাদাপাড়া এলাকার নদীর পাড়ে গত কয়েকদিন ধরে নাটকের শূটিং চলছিল। লোকজন প্রথমে মনে করেছিল কোনো শূটিং হচ্ছিল। বিষয়টি প্রথমে লোকজন এড়িয়ে যায়। পরে বাজারে ব্রাশফায়ার শুরু হলে বুঝতে পারে শূটিং নয়, এটা ডাকাতি। 
এসব ঘটনা নিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, তা-বের ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীর কথা বলা হচ্ছে সেটা নানাভাবে নানা ইঙ্গিতে চলে আসছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে যা বেরিয়ে আসবে তা নিয়ে বিচারের আওতায় আনা হবে। 
রুমার সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনের ছোট ভাই সিএমপির পুলিশ অফিসার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ভাইয়ের কোনো সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনায় তার স্ত্রী মাইসুরা ইস্পাত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রভাষক। এ দম্পতির একজন পুত্র সন্তান রয়েছে। পুত্রকে নিয়ে তারা রুমা উপজেলা সদরে থাকতেন। 
উল্লেখ করা যেতে পারে, বান্দরবান সড়ক থেকে রুমা উপজেলার দূরত্ব ৪৭ কিলোমিটার। আর থানচির দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। এ ছাড়া রুমা ও থানচির সড়কপথে ৮৯ কিলোমিটার ও নদীপথে ৪৫ কিলোমটার দূরে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে পাহাড়ের এ উপজেলাগুলোতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষকে যাওয়া আসা করতে হয়। এসব পাহাড়ি এলাকার গভীর জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়ে আছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের সদস্যরা।

অতি সম্প্রতি এ সংগঠনটির সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে কিছু শর্ত পূরণ করে স্বাভাবিক জীবনে চলে আসার কথাবার্তা চলে আসছিল। কিন্তু মঙ্গল ও বুধবার এ সংগঠনের পক্ষ থেকে আকস্মিক পর পর দুটি ব্যাংকের তিন শাখায় হামলা চালিয়ে ম্যানেজার অপহরণ, অস্ত্র লুট ও ক্যাশের অর্থ লুটে নেওয়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

×